Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

রোজগেরে ছেলে বন্দি লখনউয়ে, জীর্ণ ঘরে ঘুম উধাও

তবে এ দিন উত্তরপ্রদেশে গ্রেফতার অন্য চার জনের ডাঙ্গিলার বাড়িতে গিয়েছিলেন জেলা পরিষদের শিশু ও নারী কর্মাধ্যক্ষ মার্জিনা খাতুন। তাঁর সামনেই ‘দিদিকে বলো’য় ফোন করে বিষয়টি দেখার আবেদন জানান ধৃত এক শ্রমিক খাইরুলের বাবা মহম্মদ হোদা।

দিশেহারা: উত্তরপ্রদেশে গ্রেফতার হওয়ার পরে ছেলেদের খোঁজ নেই। নাওয়া খাওয়া ঘুচেছে আসলামের পরিবারের। নিজস্ব চিত্র

দিশেহারা: উত্তরপ্রদেশে গ্রেফতার হওয়ার পরে ছেলেদের খোঁজ নেই। নাওয়া খাওয়া ঘুচেছে আসলামের পরিবারের। নিজস্ব চিত্র

বাপি মজুমদার
হরিশ্চন্দ্রপুর শেষ আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৩:০৮
Share: Save:

হাঁটুতে অস্ত্রোপচারেও সুস্থ হননি মুক্তার আলম। বাড়িতে তাঁর স্ত্রী সায়রা বানু, তিন মেয়ে ছাড়াও রয়েছেন পুত্রবধূ বিউটি খাতুন ও দেড় মাসের নাতনি। একমাত্র ছেলের পাঠানো টাকাতেই সাত জনের সংসার চলত। কিন্তু মুক্তারের ছেলে শাহ আলম উত্তরপ্রদেশে গ্রেফতার হওয়ার পরে সব ওলটপালট হয়ে গিয়েছে। উদ্বেগ, আতঙ্কে আট দিন ধরে উনুন জ্বলেনি মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরের জনমদোল এলাকার সেই বাড়িতে। পড়শিরা যা দিচ্ছেন তা খেয়েই দিন কাটছে সেই পরিবারের সকলের। ছেলের কী হবে, কী ভাবে মুক্তি পাবেন— সকাল থেকে সন্ধ্যা তাঁদের ভাবনা তা-ই।

একই পরিস্থিতিতে ওই গ্রামেরই আব্দুল কালাম। শাহ আলমের সঙ্গে একই হোটেলে কাজ করতেন তাঁর ছেলে আসলাম। গ্রেফতার হয়েছেন তিনিও। বাবা-মা ছাড়াও আসলামের চার ভাই-বোন রয়েছে। একমাত্র রোজগেরে ছেলে গ্রেফতার হওয়ার পরে ওই পরিবারেরও রাতের ঘুম উড়েছে। এলাকাবাসীর একাংশ জানিয়েছেন, আট দিন আগে ওই গ্রামের দুই বাসিন্দা গ্রেফতার হলেও এখনও কোনও রাজনৈতিক নেতার দেখা মেলেনি। তাতে ছড়িয়েছে ক্ষোভ।

তবে এ দিন উত্তরপ্রদেশে গ্রেফতার অন্য চার জনের ডাঙ্গিলার বাড়িতে গিয়েছিলেন জেলা পরিষদের শিশু ও নারী কর্মাধ্যক্ষ মার্জিনা খাতুন। তাঁর সামনেই ‘দিদিকে বলো’য় ফোন করে বিষয়টি দেখার আবেদন জানান ধৃত এক শ্রমিক খাইরুলের বাবা মহম্মদ হোদা। মার্জিনা বলেন, ‘‘খুব তাড়াতাড়ি জনমদোলে গিয়েও ধৃত দুই যুবকের পরিবারের সঙ্গে দেখা করব।’’

প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৯ ডিসেম্বর লখনউতে হিংসার ঘটনায় জড়িত অভিযোগে সেখানকার পুলিশ ছ’জনকে গ্রেফতার করে। তাঁদের মধ্যে চার জন হরিশ্চন্দ্রপুরের ডাঙ্গিলা ও দু’জন জনমদোলের বাসিন্দা। উত্তরপ্রদেশে ছিলেন হরিশ্চন্দ্রপুরের অন্তত ৬০০ যুবক। তাঁদের প্রত্যেকেই ওই ঘটনার পরে আতঙ্কে বাড়িতে ফিরে এসেছেন। তাঁদের পরিবার কিছুটা হলেও স্বস্তিতে।

ভাঙাচোরা বেড়ার বাড়ির দেওয়াল কাদা দিয়ে লেপা মুক্তারের। জীর্ণ ঘরের দাওয়ায় দেড় মাসের মেয়ে কোলে নিয়ে বসে তাঁর পুত্রবধূ বিউটি। যেন সব কথা হারিয়েছেন তিনি। আগে দিনমজুরি করলেও অসুস্থতায় এখন কর্মহীন মুক্তার বলেন, ‘‘ছেলেটাকে যে কী ভাবে বাড়ি ফেরাব সেই চিন্তায় কারও চোখে ঘুম নেই। ওর কিছু হলে সবাইকে পথে বসতে হবে।’’ তাঁর মতোই চিন্তায় নাওয়াখাওয়া ভুলেছেন আসলামের পরিজনেরাও।

চোখের জলে গুমোট অন্ধকার নেমেছে দু’ঘরেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

CAA CAB Malda Lucknow
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE