Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

নয়া পথ কী, প্রশ্ন পাহাড়ে

মমতা বলেছেন, জিটিএ চুক্তি ‘রিভিউ’ বা পুনর্বিবেচনা করা হবে। এই চুক্তি হয়েছিল রাজ্য সরকার, মোর্চা এবং কেন্দ্রীয় সরকারের মধ্যে। পাঁচ বছর মেয়াদী এই চুক্তি ইতিমধ্যে শেষ হয়ে গিয়েছে।

সফরে: দার্জিলিংয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার সকালে। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক

সফরে: দার্জিলিংয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার সকালে। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক

শুভঙ্কর চক্রবর্তী
দার্জিলিং শেষ আপডেট: ২৫ জানুয়ারি ২০১৯ ০৬:৫৩
Share: Save:

পাহাড়ের সভা থেকে এক দিকে গোর্খাদের পরিচয় ও নিজস্বতা রক্ষা করা, অন্য দিকে পাহাড় সমস্যার স্থায়ী সমাধান করার কথা বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাহাড়বাসীর পাশে দাড়ানোর আশ্বাস দিয়ে হাততালিও কুড়িয়েছেন তিনি। তবে পাহাড়ের রাজনৈতিক নেতাদের বেশির ভাগের মত, পাহাড় সমস্যার স্থায়ী সমাধান করা একা মুখ্যমন্ত্রীর পক্ষে সম্ভব নয়। তার জন্য কেন্দ্রের সহযোগিতা প্রয়োজন। মুখ্যমন্ত্রী নিজেও জানিয়েছেন লোকসভা ভোটের পরে এই নিয়ে তিনি চেষ্টা করবেন। কিন্তু সেটা কোন পথে, তাই নিয়ে আলোচনা, তর্ক-বিতর্কেই এখন সরগরম পাহাড়।

মমতা বলেছেন, জিটিএ চুক্তি ‘রিভিউ’ বা পুনর্বিবেচনা করা হবে। এই চুক্তি হয়েছিল রাজ্য সরকার, মোর্চা এবং কেন্দ্রীয় সরকারের মধ্যে। পাঁচ বছর মেয়াদী এই চুক্তি ইতিমধ্যে শেষ হয়ে গিয়েছে। চুক্তির পুনর্বিবেচনা করে রাজ্য তাকে স্থায়ী মর্যাদা দিতেই পারে, বলছেন পাহাড়বাসীদের একাংশ।

জিএনএলএফ-ও একই ভাবে ভাবছে। তাদের বরাবরে দাবি ষষ্ঠ তফসিলের অধীনে পাহাড়কে নিয়ে আসা। এই দাবি নিয়ে প্রয়াত সুবাস ঘিসিংও এক সময়ে কেন্দ্রের কাছে দরবার করেছিলেন। জিএনএলএফের দাবি, ষষ্ঠ তফসিলের আওতায় এলে পাহাড়ের স্বশাসিত পর্ষদের ক্ষমতা অনেক বেশি হবে। অসম, মেঘালয়, মিজোরাম ও ত্রিপুরার স্বশাসিত জেলা কাউন্সিলগুলিকে আরও শক্তিশালী করতে ষষ্ঠ তফসিল সংশোধনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কে। সেই প্রসঙ্গও এ দিন উল্লেখ করেছেন জিএনএলএফ নেতারা।

জিএনএলএফ মুখপাত্র নীরজ জিম্বা বলেন, ‘‘ষষ্ঠ তফসিলই যে একমাত্র পথ, সেটা মঙ্গলবার রিচমন্ড হিলের বৈঠকে লিখিত ভাবে মুখ্যমন্ত্রীকে জানিয়েছেন মন ঘিসিংরা। তার পরেও যদি পুনর্বিবেচনা করে জিটিএ চুক্তিকে স্থায়ী চেহারা দেওয়া হয়, তবে পাহাড়ে অসন্তোষ দানা বাঁধতে বাধ্য।’’ নীরজের অভিযোগ, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি আমাদের পুরো ভরসা আছে। কিন্তু তাঁর আশপাশে যাঁরা আছেন, তাঁরা ওঁকে ভুল বোঝাচ্ছেন।’’ জিএনএলএফের তির বিনয় তামাংদের দিকে। যদিও মোর্চা নেতৃত্ব বা বিনয় এই নিয়ে মুখ খুলতে চাননি। অন্য দিকে, নীরজ রবীন্দ্রসঙ্গীত উদ্ধৃত করে জানিয়েছেন, তাঁদের কথা শোনা না হলে তাঁরা পাহাড়ে একলা চলতেও তৈরি।

তবে পাহাড়ের কেউ কেউ আবার বলছেন, ষষ্ঠ তফসিলের আওতায় জিটিএ-কে আনা যায় কিনা, তা-ও খতিয়ে দেখতে পারে রাজ্য সরকার। সে ক্ষেত্রে জিটিএ যেমন স্থায়ী হবে, তেমনই স্বশাসিত সংস্থা হিসেবে তার ক্ষমতা অনেকটাই বেড়ে যাবে। যদিও এমন কিছু করার পথ অত্যন্ত জটিল এবং কঠিন। সব থেকে বড় কথা, এর জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের সহযোগিতা সর্বাগ্রে লাগবে।

জিটিএ-র এক আধিকারিক বলেন, ‘‘সংসদীয় ব্যবস্থাপনায় অনেক জটিলতা আছে। নানা রকমের আইনি প্রতিবন্ধকতাও আছে। তবে একেবারে অসম্ভব নয়। রাজ্য ও কেন্দ্র সহমত হলে জিটিএ ষষ্ঠ তফসিলের আওতায় আসতেই পারে।’’ পাহাড়ের একাংশের কথায়, এটা হলে বিনয় ও মন, দু’জনের দাবিই মান্যতা পাবে।

বিনয় তামাং অবশ্য রিভিউ নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছেন না। বলেন, ‘‘সময় হলে আলোচনা করেই কাজ হবে। যা হবে, তা পাহাড়ের স্বার্থেই হবে।’’ নীরজ জিম্বার কথায়, ‘‘ষষ্ঠ

তফসিল নিয়ে ২০০৫ সালেই চুক্তি হয়েছে। তাতে কিছুটা পরিবর্তন করলেই

হয়ে যাবে। পাহাড়ের বিভিন্ন

বোর্ডকেও ষষ্ঠ তফসিলের আওতায় আনা যাবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Darjeeling Hill Problem
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE