Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

কালিম্পঙের তুষার সিংহর স্বপ্ন বিশ্বজয়ের

সকলেই কালিম্পঙের একটি আইসিএসই বোর্ডের ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের একাদশ শ্রেণির ছাত্র। ওদের ‘স্নো লায়ন ডান্স’ দেখতে এখন সব জায়গায় উপচে পড়ে ভিড়।

মঞ্চে: উৎসবের আঙিনায় ‘স্নো লায়ন’ নাচ। নিজস্ব চিত্র

মঞ্চে: উৎসবের আঙিনায় ‘স্নো লায়ন’ নাচ। নিজস্ব চিত্র

কিশোর সাহা
কালিম্পং শেষ আপডেট: ০৪ জানুয়ারি ২০১৮ ০২:৫৪
Share: Save:

লেখাপড়ার অনেক চাপ। তার ফাঁকে টিভি-মোবাইলের দিকে না ঝুঁকে কাল্পনিক ‘তুষার-সিংহ’-এর সাজে পাহাড় থেকে সমতলে দাপিয়ে বেড়ায় ওরা। সামতেন জুরনে, সোনম ড্যানজেন কিংবা তেনজিং লামার মতো এক ঝাঁক পড়ুয়া। বয়স সবে ষোল পেরিয়েছে। সকলেই কালিম্পঙের একটি আইসিএসই বোর্ডের ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের একাদশ শ্রেণির ছাত্র। ওদের ‘স্নো লায়ন ডান্স’ দেখতে এখন সব জায়গায় উপচে পড়ে ভিড়। দেশের সীমানা পেরিয়ে ভুটান তো বটেই, সুদূর মস্কোতেও ডাক পড়েছে ওদের। সব ঠিক থাকলে আগামী বছর আইএসসি হয়ে গেলে ‘ওয়ার্ল্ড ট্যুর’-এর স্বপ্ন দেখছে কালিম্পঙের ওই ‘স্নো লায়ন’রা।

তাই সুযোগ পেলেই জবরদস্তি প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন গ্রুপের অন্যতম প্রশিক্ষক তাসি ডেনড্রুপ। তিনি বললেন, ‘‘সকলে যেমন পড়াশোনায় ভাল, তেমনই নাচ নিখুঁত করতেই প্রাণপণ পরিশ্রম করে। সে জন্যই তো দেশ-বিদেশে প্রশংসা মিলছে।’’ তাসি জানান, বহু প্রাচীন স্নো লায়ন ডান্স চিনে, তিব্বতে নানা গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানের সময়ে হয়। বাস্তবে মেরুপ্রদেশে তুষার চিতার অস্তিত্ব রয়েছে। কিন্তু, তুষার-সিংহ আদপে কোনও দিন ছিল কি না, তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। তবে স্নো লায়নকে শান্তি ও সৌভাগ্যের প্রতীক হিসেবেই চিনা ও তিব্বতী সমাজে দেখা হয়। তাই সেখানে নববর্ষ উদযাপনে ওই নাচ বাধ্যতামূলক। মূলত বাঁশি ও ড্রামের সুর-তালেই সাধারণত ওই নাচ হয়ে থাকে।

তবে একটি সিংহের সাজে দু’জনকে নাচতে হয়। একজন সিংহের মাথা ও সামনের দু’পায়ের খোলস নিয়ন্ত্রণ করে। আর একজন সিংহের পিছনের দু’টি পা সহ বাকি দেহের খোলসে ঢুকে থাকে। দু’জনকে একই ছন্দে হাঁটতে ও লাফাতে হয়। সে জন্য ওই স্কুল পড়ুয়ারা পড়াশোনার পরে ফুরসৎ পেলেই রোজ অন্তত এক ঘণ্টা একযোগে মহড়া দেয়। সাধারণত, দুটি সিংহের সাজে ৪ জন নাচে, খেলা করে। নাচের শেষ পর্বে মঞ্চ থেকে দুটি স্নো-লায়ন নেমে দর্শকদের মধ্যেও চলে যায়। তা করতে গিয়ে কখনও দুর্ঘটনাও ঘটে যায়। কারণ, নাচের সময় সকলকে একই ছন্দে কাজ করতে হয়। না হলেই হুমড়ি খেয়ে পড়ার আশঙ্কা। ছোটখাট চোটও লাগে। তবে সোনম, তেনজিংরা তা নিয়ে চিন্তিত নয়। ওরা বলল, ‘‘লোকজন মজা পাচ্ছে, ভয় পাচ্ছে আবার হাততালি দিয়ে উঠছে এটাতেই উদ্দীপ্ত হয়ে যাই। চোট লাগলেও গায়ে মাখি না। শুধু খেয়াল রাখি হাত-পা যেন না ভাঙে। তা হলে পড়াশোনার ক্ষতি হয়ে যাবে।’’ সোনম কম্পিউটার নিয়ে পড়তে চায়। তেনজিংয়ের স্বপ্ন পুলিশ অফিসার হওয়ার। কালিম্পঙের প্রায় তিন দশক পুরানো ইংরেজি স্কুলের ওই পড়ুয়ারা কিন্তু একটা ব্যাপারে একমত। তা হল, ‘‘স্নো লায়ন ড্যান্স ছাড়ব না।’’ ওদেরও বিশ্বাস, এই নাচ জীবনে শান্তি ও সৌভাগ্য এনে দেবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE