গভীর রাতের রাস্তায় তির বেগে ছুটে চলছে অ্যাম্বুল্যান্স। দূর থেকে নীল বাতি দেখতে পেয়ে রাস্তা আটকানোর নির্দেশ দিলেন অফিসার। কিন্তু অ্যাম্বুল্যান্স কীভাবে আটকাবেন ভেবে ইতস্তত করছেন বনকর্মীরা। তবু নির্দেশ মেনে থামানো হল অ্যাম্বুল্যান্স। দরজা খুলে দেখা গেল ভিতরে রোগী রয়েছেন। আর তাঁর শয্যার নীচে ঠাসাঠাসি করে রাখা সেগুন কাঠের টুকরো। উদ্ধার করার পরে দেখা গেল যার মূল্য অন্তত ১৫-২০ লক্ষ টাকা।
সপ্তাহ দুয়েক আগে জলপাইগুড়ির পাহাড়পুর মোড়ে অ্যাম্বুল্যান্স থেকে উদ্ধার হয় চোরাই কাঠ। পুলিসের দাবি, ধৃতরা জেরায় জানিয়েছে প্রতি রাতে অ্যাম্বুল্যান্সে করে কোটি কোটি টাকার কাঠ সড়ক পথে চলে যাচ্ছে প্রতিবেশী দেশে। শুধু অ্যাম্বুল্যান্স নয়, আনাজের ট্রাকে উচ্ছে, বেগুন, পটল, মূলোর ঝুড়ির উপরে-নীচে থাক থাক করে সেগুন, শাল কাঠের টুকরো রেখে তা পাচার হয়ে যাচ্ছে। শিলিগুড়ি লাগোয়া শালুগাড়া, কালিম্পং এবং কোচবিহারে আটক করা কয়েকটি আনাজের ট্রাক থেকে উদ্ধার হয়েছিল প্রায় দেড় কোটি টাকার কাঠ। সেই ঘটনার পরে কড়াকড়ি শুরু হয় জাতীয় সড়কগুলিতে। একদা উত্তরবঙ্গে বনকর্তার দায়িত্ব সামলানো এক আইএফএস অফিসার কথায়, “এক পথ বন্ধ হলে অন্য পথ খোলে। বর্ষা মানেই কাঠ পাচারের পৌষমাস।’’
বর্ষার ভরা নদীতে কচুরিপানা ভেসে যেতে দেখা যায়। আর ডুয়ার্সের বাসিন্দারা জানান, বর্ষায় নদীতে ভাসে চালিও। টিউব জোড়া দিয়ে তৈরি করা হয় চালি। তার উপরে কাঠের গুড়ি রেখে ভাসিয়ে দেওয়া হয়। তিস্তা, তোর্সাস জলঢাকা বা সঙ্কোশ, রায়ডাকে সবজায়গায় এমন চালি ভাসে বর্ষায়। অভিযোগ বৈকুন্ঠপুর এবং কাঠামবাড়ির জঙ্গল থেকে কাঠ ভাসানো হয় তিস্তায়, গরুমারা এবং ডায়নার জঙ্গলের কাঠ ভাসিয়ে দেওয়া হয় জলঢাকায়। আর বক্সা, জলদাপাড়ার জঙ্গল থেকে কাটা হলে সেই গাছের গুড়ি চেরাই করে ভাসিয়ে দেওয়া হয় রায়ডাক, সঙ্কোশের জলে।
সড়ক পথে কাঠ নিয়ে যেতে হলে নানা চেকপোস্ট পেরতে হয়। জলপথে সে হাঙ্গামা নেই। ভাসানো কাঠ টেনে তোলা হয় গ্রামে। বাঙ্কার তৈরি করে সেখানে কাঠ চেরাই চলে। ৮ ইঞ্চি-৬ ইঞ্চি অথবা ১২ ইঞ্চি-৬ ইঞ্চির টুকরো করে নানা ধরনের গাড়িতে করে তা চালান করা হয়। এক একটা টুকরো খুব বেশি হলে পাঁচ-ছ’ফুট লম্বা। শিলিগুড়ি হয়ে তিন পড়শি দেশে চালান হয়ে যায় কাঠ। শিলিগুড়ি হয়ে নেপাল, ভুটান এবং কোচবিহারের দিনহাটা হয়ে যায় বাংলাদেশে।
এক বন আধিকারিকের কথায়, “শিশু গাছ তো এ ভাবেই শেষ হয়ে গেল। এখন সেগুন আর শাল কাঠা কাটা হচ্ছে।” বন দফতর সব জানলেও ব্যবস্থা হয় না কেন? শোনা যায় পদক্ষেপ করলেই নাকি সিন্ডিকেটের সাড়াশি চাপ শুরু হয়। শোনা যায়, এই সিন্ডিকেটের সম্মতি ছাড়া একটি গাছের গুড়িও জঙ্গল থেকে বের করা যায় না।
(চলবে)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy