বসতি: করণদিঘির বাজিতপুর গ্রামের আদিবাসীপাড়ায়। নিজস্ব চিত্র
নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন বিল নিয়ে ধন্দে আদিবাসীও। আদিবাসী বসতিতে চিন্তা ছড়িয়েছে।
উত্তর দিনাজপুরে করণদিঘিতে আদিবাসী মানুষের বসবাস সব চেয়ে বেশি। এলাকায় ঘুরে স্পষ্ট হল, অনেকেই জানেন না ওই বিল আদতে কী। কিন্তু জল্পনা ছড়াচ্ছে, জমির নথি না থাকলে ভিটেমাটিও ছাড়তে হতে পারে।
এমন ‘খবরে’ সংশয় ছড়িয়েছে আদিবাসী বসতিতে। এলাকাবাসীর একাংশ বলছেন, অনেকের কাছেই নেই জমির নথি। ১৯৮৭ সালে বন্যায় সব ভেসে গিয়েছে। জমির নথি না থাকায় পঞ্চায়েতে আবেদন করেও ঘর পাননি কেউ কেউ। এমন পরিস্থিতির মধ্যেই এনআরসি ও নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলে বিভ্রান্ত আদিবাসীরা।
প্রশাসনিক সূত্রে খবর, উত্তর দিনাজপুরে আদিবাসীর সংখ্যা প্রায় দু’লক্ষ। করণদিঘি ব্লকেই প্রায় ৫০ হাজার। সেখানকার বাজারগাঁও আদিবাসীপাড়ার বাসিন্দা মংলু মুর্মু বলেন, ‘‘পূর্বসূরিরা থাকতেন অবিভক্ত ঝাড়খণ্ডে। বাবার হাত ধরে কাজের সন্ধানে এ রাজ্যে আসা। বাবা বেঁচে নেই। নথি কোথায় নেই। কী করে সে সব জোগাড় করবো ভেবে ঘুম উড়েছে। যেখানেই যাচ্ছি সেখানে একই আলোচনা— নথি না থাকলে নাকি ঠিকানা হবে ডিটেনশন ক্যাম্প।’’ এলাকার কয়েক জন বাসিন্দার কথায়, ‘‘আমরা তো এ দেশেরই নাগরিক। শরণার্থী নই। তা হলে কী আমাদেরও বিদেশি বলা হবে?’’
এনআরসি আতঙ্ক কাটাতে ওই পাড়ায় প্রচারে নেমেছেন আদিবাসী ছাত্র যুব সংগঠনের সদস্যরা। নাগরিকপঞ্জির জন্য প্রয়োজনীয় নথি ঠিক করতেও এলাকাবাসীকে সাহায্য করছেন তাঁরা। সংগঠনের সদস্য রমেন মার্ডি বলেন, ‘‘বেশিরভাগেরই নথিপত্র ঠিক নেই। আদিবাসীরা এ দেশের নাগরিক। কিন্তু নথি না থাকলে তাঁদের ভবিষ্যৎ কী হবে তা বিলে স্পষ্ট হয়নি।’’ সংগঠনের বক্তব্য, অসমের নাগরিকপঞ্জি থেকে বাদ ১৯ লক্ষ মানুষের মধ্যে আদিবাসীর সংখ্যা প্রায় এক লক্ষ। আর তার জেরেই পশ্চিমবঙ্গের আদিবাসীদের মধ্যে আশঙ্কা ছড়িয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে আদিবাসী সংগঠনগুলি বৈঠক করে সিএবি বিলের বিরুদ্ধে আন্দোলনের রূপরেখা তৈরি করবে বলে জানান করণদিঘি পঞ্চায়েত সমিতির সহকারী সভাপতি স্যামুয়েল মার্ডি। তিনি বলেন, ‘‘নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল আমাদের কাছে স্পষ্ট নয়। পুরনো নথি খুঁজতে গেলে বিহারে যোগাযোগ করতে হবে।’’
এ নিয়ে বিজেপির জেলা সম্পাদক বিশ্বনাথ মৃধা বলেন, ‘‘এ দেশের কোনও নাগরিককে দেশ-হারা হতে হবে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy