হাল্কা শীতে কুয়াশার মরসুম শুরু হয়ে গিয়েছে। আর এই মরসুমেই উত্তরের বনাঞ্চলের ভিতর দিয়ে যাওয়া রেলপথে ট্রেনের ধাক্কায় হাতি মৃত্যুর আশঙ্কা বেড়ে যায়। এ বার তাই সেই আশঙ্কা এড়াতে বাড়তি সতর্কতার দাবি উঠেছে।
বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছেন শিলিগুড়ি থেকে কোচবিহারের একাধিক বন্যপ্রাণ ও পরিবেশপ্রেমী সংগঠনের কর্তারাও। তাঁদের অভিযোগ, গত কয়েক বছর ধরেই আলিপুরদুয়ার-নিউ জলপাইগুড়ি রেলপথে প্রায় ফি বছর ট্রেনের ধাক্কায় হাতি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। শীতেও বহু ঘটনা হয়। সতর্কতার কথা বলা হলেও মৃত্যু মিছিল বন্ধ হয়নি।
পরিবেশপ্রেমীরা জানান, আলিপুরদুয়ার-এনজেপি ১৬৮ কিমি রুটে ২২ কিমি এলাকা হাতির করিডোর। ছোট-বড় পাঁচটি জঙ্গল আছে। অভিযোগ, তার উপর ওই রুটে ট্রেনও অনেক বেড়েছে। রাতে ট্রেন বন্ধের দাবিও তো পূরণ হয়নি। বন-রেলের সমন্বয়েরও ফাঁক রয়েছে।
পরিবেশপ্রেমী সংস্থা ন্যাফের মুখপাত্র অনিমেষ বসু বলেন, ‘‘কুয়াশার জেরে দৃশ্যমানতা কমে যায়। ফলে দুর্ঘটনার আশঙ্কা অনেকটাই বেড়ে যায়। আগেও যেহেতু একাধিক বার শীতের মরসুমে ওই রুটে হাতি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে, তাই এ বার শুরু থেকেই বাড়তি সতর্কতা নেওয়ার ব্যাপারে দাবি জানিয়েছি।”
এই বিষয়ে ন্যাস গ্রুপের সম্পাদক অরূপ গুহ বলেন, ‘‘কুয়াশার জেরে ওই রুটে ওরকম দুর্ঘটনার আশঙ্কা বেড়ে যাচ্ছে।” তাঁর সংযোজন, দ্রুত বন ও রেল দফতরের বাস্তবিক সমন্বয় জোরদার করা দরকার। হাতে সময়ো কম।
রেল কর্তৃপক্ষের অবশ্য বক্তব্য, সবসময়ই সতর্কতা থাকে। শীতের মরসুম শুরু হতেই সতর্কতা বাড়ানো হয়েছে। ওই রুটে যাতায়াতকারী সমস্ত ট্রেনে ‘ফগ সেফটি ডিভাইস’ লাগানো হয়েছে। ওই স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রটি চালককে যাত্রাপথের পুরো বিররণ শোনায়। তাতে কোথায় কী সিগন্যাল, নিকটবর্তী স্টেশন, বনাঞ্চলের বাঁক, সেতু কোথায়, এমন তথ্য আগাম মনে করতে সুবিধে হয় চালকদের, গতি নিয়ন্ত্রণে যা বিশেষ সহায়ক। এ ছাড়াও ইঞ্জিনের সামনে বিশেষ আলোর ব্যবস্থাও থাকে। ওই রুটের বিভিন্ন এলাকায় ‘লাইন মার্কিং’ করা হয়েছে।
উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের আলিপুরদুয়ার ডিভিসনের ডিআরএম চন্দ্রবীর রমণ বলেন, “ওই রুটের যাত্রী ও পণ্যবাহী সমস্ত ট্রেনেই ওই বিশেষ ডিভাইস লাগান হয়েছে। অন্য সব সতর্কতামূলক ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। চালকদের বাড়তি সতর্ক থাকতেও বলা হয়েছে।”
রাজ্যের বনমন্ত্রী বিনয়কৃষ্ণ বর্মণ বলেন, ‘‘আমাদের তরফে ট্রেনের ধাক্কায় হাতি মৃত্যুর আশঙ্কা এড়াতে বহুবার গতি নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি নানা প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। বারবার রেলের সঙ্গে আলোচনাও হয়। রেল সতর্কতার কথা বললেও দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে।”
পরিবেশপ্রেমীরা অবশ্য বলছেন, বিভিন্ন বৈঠকের আয়োজন করা হয়। সেই সব বৈঠকে নানা প্রস্তাবও নেওয়া হয়। কিন্তু, বাস্তবে অনেক কিছুই কার্যকর করা হয়নি। তাছাড়া এই শীতের মরসুমে ছোট প্রাণীদেরও বিপদের আশঙ্কা বাড়ে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy