(বাঁ দিকে) পঞ্চায়েত ভোটের সময় চলেছিল গুলি। এখনও তার দাগ রয়েছে তপসিখাতায় সিপিএমের দলীয় কার্যালয়ে। ফাইল চিত্র। (ডান িদকে) হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেলেন পার্বতীদেবী। ছবি: নারায়ণ দে
তপসিখাতা-সহ আশপাশের এলাকা থেকে বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারের দাবি উঠল আলিপুরদুয়ারে।
অভিযোগ, পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে থেকেই তপসিখাতা-সহ আলিপুরদুয়ার ১ ব্লকের একাধিক জায়গায় বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্র ঘুরে বেড়াচ্ছে। অথচ, গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তৃণমূল কর্মী তুষার বর্মণ খুনের পরও সেই অস্ত্র উদ্ধারে পুলিশের তেমন কোনও উদ্যোগ নেই বলে অভিযোগ উঠেছে। যদিও অভিযোগ মানতে নারাজ আলিপুরদুয়ার জেলার পুলিশ কর্তারা।
গত ২২ জানুয়ারি তপসিখাতায় খুন হন তৃণমূল কর্মী তুষার বর্মণ। অভিযোগ, স্থানীয় পরোরপাড় গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল উপপ্রধান শম্ভু রায় ও তার দলবল তাকে খুন করে। শম্ভু নিজে তুষারকে লক্ষ করে গুলি চালায় বলে অভিযোগ। এই ঘটনার পরই শম্ভুদের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র কোথা থেকে এল তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। ওই এলাকা থেকে আগেও আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করেছে পুলিশ। যদিও পলাতক শম্ভুর আগ্নেয়াস্ত্রটি এখনও উদ্ধার হয়নি। আলিপুরদুয়ারের পুলিশ সুপার সুনীল যাদবের দাবি, “তুষার খুনের আগে তপসিখাতায় একটি আগ্নেয়াস্ত্রই ঘোরাফেরা করত। শম্ভুর সেই আগ্নেয়াস্ত্রটি কখনও গ্রেফতার হওয়া পঞ্চায়েত সদস্য সোনা রায়, কখনও শম্ভু নিজেই ব্যবহার করত।”
কিন্তু শুধু তপসিখাতাতেই নয়, গত কয়েক মাসে আলিপুরদুয়ার ১ ব্লকের সাহেবপোতাতেও একাধিক অভিযোগে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। মাস কয়েক আগে সাহেবপোতাতেও এমন অভিযোগ উঠেছিল। এক প্রতিবাদী শিক্ষককে দুষ্কৃতীরা আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে মাথায় আঘাত করে অজ্ঞান করে ফেলে। তারপর তার পাশে আগ্নেয়াস্ত্রটি ফেলে রেখে তাকেই মিথ্যা অস্ত্র মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়া হয়। ওই প্রতিবাদীর পক্ষে আলিপুরদুয়ার আদালতে সওয়াল করতে আসতে দেখা গিয়েছিল আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যকেও।
আলিপুরদুয়ার ১ ব্লকে বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্রের রমরমা ব্যবহারের অভিযোগ নিয়ে বিরোধীরা শাসকদলের নেতাদেরই দায়ী করছেন। বিজেপির জেলা সাধারণ সম্পাদক জয়ন্ত রায়ের অভিযোগ, “গত পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের মদতে আলিপুরদুয়ার- ১নম্বর ব্লকে বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্রের ভাণ্ডার তৈরি হয়েছে। যেখান থেকে তৃণমূলের দুষ্কৃতীদের হাতে সেইসব আগ্নেয়াস্ত্র চলে যায়। এখন সেই অস্ত্র দিয়েই কখনও কর্মীদের খুন করা হচ্ছে, কখনও সাধারণ মানুষ বা প্রতিবাদীদের ভয় দেখানো বা মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হচ্ছে।”
যদিও তৃণমূলের আলিপুরদুয়ার- ১ ব্লক সভাপতি মনোরঞ্জন দে এই অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘হিংসার রাজনীতি বিজেপি করে। আমরা সেই রাজনীতিতে বিশ্বাসী নই। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নই আমাদের অস্ত্র। তার উপর ভিত্তি করেই গোটা ব্লকের মানুষ আমাদের পক্ষে রয়েছেন।’’
পুলিশ সূত্রেই অবশ্য জানা যাচ্ছে, আলিপুরদুয়ার জেলার কিছু কিছু জায়গায় বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার বাড়ছে৷ জেলা পুলিশ সূত্রের খবর, গত ডিসেম্বর মাস থেকে এখনও পর্যন্ত বীরপাড়া ব্লকের কয়েকটি চা বাগান এলাকা থেকে ৮টি বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার হয়েছে। যেজন্য আলাদা আলাদা আটটি মামলাও দায়ের হয়েছে। বেআইনি অস্ত্র উদ্ধারে আলিপুরদুয়ার- ১ নম্বর ব্লকের একাধিক জায়গাতেও নজর রয়েছে পুলিশের। জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “বিহার না কি অন্য কোনও জায়গা থেকে এই অস্ত্র জেলায় আসছে তা দেখা হচ্ছে।”
দু’দিন হাসপাতালে ভর্তি থাকার পর নিহত তুষারের মা পার্বতী বর্মণকে এ দিন ছুটি দেওয়া হয়েছে। তুষার-খুনের পর খাওয়াদাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিলেন তিিন। বাড়ির লোকেরা জানিয়েছেন, এই মুহূর্তে আগের চেয়ে খানিকটা ভাল আছেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy