Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

কখনও প্রণাম, কখনও টক্কর

বৃহস্পতিবার এমনই চিত্র দেখল কোচবিহার। কাকা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী তথা তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ এবং ভাইপো সাংসদ তথা যুব তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি পার্থপ্রতিম রায়।

আন্তরিক: রবীন্দ্রনাথ ঘোষকে প্রণাম করছেন পার্থপ্রতিম রায়। বৃহস্পতিবার দিনহাটার শালমারায়। নিজস্ব চিত্র

আন্তরিক: রবীন্দ্রনাথ ঘোষকে প্রণাম করছেন পার্থপ্রতিম রায়। বৃহস্পতিবার দিনহাটার শালমারায়। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কোচবিহার শেষ আপডেট: ০৪ জানুয়ারি ২০১৯ ০৩:০৬
Share: Save:

কোচবিহারের বিখ্যাত কাকা-ভাইপোর সম্পর্ক নিয়ে ধোঁয়াশা আর কিছুতেই কাটছে না। সরকারি অনুষ্ঠানে কাকা-ভাইপোকে পাশাপাশি দেখা গেল। ভাইপো কাকার পা ছুঁয়ে প্রণাম করে শুভেচ্ছা বিনিময়ও করলেন। আবার দলীয় অনুষ্ঠানে ভাইপো থাকলেও দেখা গেল না কাকাকে।

বৃহস্পতিবার এমনই চিত্র দেখল কোচবিহার। কাকা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী তথা তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ এবং ভাইপো সাংসদ তথা যুব তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি পার্থপ্রতিম রায়। পার্থবাবু বলেন, “আমরা তৃণমূল করি। রবীন্দ্রনাথ ঘোষ আমার রাজনৈতিক গুরু শুধু নয়, সম্পর্কে কাকাও। তাই তাঁকে সামনে পেয়ে প্রণাম করেছি।” রবীন্দ্রনাথবাবু অবশ্য ওই বিষয়ে কিছু বলতে চাননি। তিনি বলেন, “এই সব রাজনীতির বিষয় নয়।”

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশের পরে এ দিন সাবেক ছিটমহলগুলির বাসিন্দাদের হাতে খতিয়ান তুলে দেওয়া হয়। গোটা জেলায় একাধিক অনুষ্ঠান হয়। ওই অনুষ্ঠানের সবক’টিতেই উপস্থিত ছিলেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথবাবু। সাংসদ পার্থপ্রতিমবাবু কয়েকটি অনুষ্ঠানে ছিলেন। দিনহাটায় শালমারা হাইস্কুলের মাঠের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দু’জনই। সেখানেই পার্থবাবু রবীন্দ্রনাথবাবুর পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করতে দেখা যায়। সামান্য কিছু সময়ের জন্য দু’জনকে পাশাপাশি বসে থাকতেও দেখা যায়। পরে অবশ্য স্থান পরিবর্তন হয়। মন্ত্রীর পাশে বসতে দেখা যায় কোচবিহারের জেলাশাসক কৌশিক সাহাকে।

এ দিনই, কোচবিহারে পুরানো পোস্ট অফিস পাড়ার মাঠে তৃণমূল যুব কংগ্রেসের ডাকে একটি জনসভা হয়। ওই সভায় উপস্থিত ছিলেন সাংসদ এবং কোচবিহার দক্ষিণ কেন্দ্রের বিধায়ক মিহির গোস্বামী। আগামী ৮ জানুয়ারি কোচবিহারে রাসমেলার মাঠে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভা রয়েছে। তা নিয়েই এ দিন সভা হয়। সেখানে কিন্তু রবীন্দ্রনাথবাবুকে দেখা যায়নি।

দলীয় সূত্রের খবর, এক সময় পার্থপ্রতিমবাবু রবীন্দ্রনাথবাবুর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ অনুগামী বলে পরিচিত ছিলেন। কোচবিহার লোকসভা উপনির্বাচনে পার্থবাবু যাতে প্রার্থী হতে পারেন তা নিয়ে চেষ্টার খামতি রাখেন না। কিন্তু সাংসদ হওয়ার এক বছর কাটতে না কাটতেই দু’জনের মধ্যে দূরত্ব বাড়তে শুরু করে। গত পঞ্চায়েত নির্বাচন থেকে তা কয়েক গুণ বেড়ে যায়।

ইতিমধ্যে জেলা যুব তৃণমূলের সভাপতি করা হয় পার্থবাবু। কোচবিহারের একাধিক এলাকায় যুব ও মূল তৃণমূলের সংঘর্ষে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এলাকা। একাধিক খুনের ঘটনা ঘটে। বোমা-গুলিতে জখমের সংখ্যা অন্তত ১০০ জন ছাড়িয়ে যায়। এই অবস্থায়, দলীয় সভা ও মিছিলেও দু’জনের দূরত্ব ধরা পড়ে। একসময় ক্ষুব্ধ হয়ে রবীন্দ্রনাথবাবু জানিয়ে দেন, তিনি আর ‘কাকা’ ডাক শুনতে চান না। জেলা রাজনীতিতে পার্থবাবুর রবীন্দ্রনাথবাবুকে ‘কাকা’ বলে ডাকেন। বিতর্ক তাতেও থাকেমি। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভা ঘিরেও যুব ও মূল তৃণমূলের সংঘাত চরমে ওঠে। আলাদা আলাদা মিটিং-মিছিল তো বটেই, অভিষেকবাবুকে স্বাগত জানানোর হোর্ডিং টাঙানোর প্রতিযোগিতাও শুরু হয় দু’পক্ষের মধ্যে। এ বারে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করায় ভোটের মুখে বিরোধ কি কিছুটা কমবে, তা নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে তৃণমূলের অন্দরে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

TMC Cooch Behar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE