পড়শির বাড়িতে গোলাপী লাকড়া। নিজস্ব চিত্র
বাবা মারা গিয়েছে সেই কবে। মা-ও নেই। তার আপন বলতে শুধু দাদা।
বোনের খাওয়া এবং পড়াশোনার খরচ জোগাতে পড়া ছেড়ে শিলিগুড়িতে হোটেলে কাজ নেয় বছর পনেরোর বিনোদ লাকড়া। সে প্রতি মাসে বাড়ি এসে বোনের জন্য চাল, ডাল, আটা, আনাজ কিনে দিয়ে যেত। কুমারগ্রামের পশ্চিম মারাখাতা বনবস্তির আদিবাসী মেয়ে গোলাপী লাকড়ার জীবন চলছিল এ ভাবেই।
কিন্তু গোলাপীর রোজনামচা এলোমেলো করে দিয়েছে লকডাউন!
কাজ হারিয়ে দাদা বিনোদ আটকে পড়েছে শিলিগুড়িতেই। গোলাপী যে ঘরে থাকত গত বুধবার রাতে সেটাও ঝড়ে ভেঙে পড়েছে। গোলাপী বলছে, ‘‘খাবার নেই। মাথা গোঁজার জায়গাটুকুও ভেঙে পড়ল!’’
স্থানীয় একটি স্কুলে সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী গোলাপী এখন এক পড়শির বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে। এ দিকে, পড়শিদেরও নুন আনতে পান্তা ফুরোয়। তাঁরা কেউ জঙ্গল থাকে জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ করে বাজারে বিক্রি করেন, কেউ দিনমজুর। এতদিন গোলাপীর অসুবিধা হলে তাঁরাই সাহায্য করতেন। গোলাপী বলছে, ‘‘লকডাউনে সবার অবস্থা খারাপ। ওঁদেরই ঠিক মতো খাবার জুটছে না। আমাকে কী দেবেন? এ দিকে, দাদার জন্যও খুব চিন্তা হচ্ছে।’’
স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্যের মাধ্যমে গোলাপীর অসহায় অবস্থার কথা পৌঁছয় কুমারগ্রাম ব্লক প্রশাসনের দফতরে। বৃহস্পতিবার কুমারগ্রামের বিডিও মিহির কর্মকার নারারথলি বনবস্তিতে গিয়ে গোলাপীর খোঁজখবর নেন। তার হাতে চাল, ডাল, আলু, মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজ়ার এবং একটি ত্রিপল তুলে দেন। ব্লক প্রশাসনের কর্তাদের কাছে পেয়ে দাদাকেও ফিরিয়ে আনার আর্জি জানায় গোলাপী।
পড়শি শনি ওরাওঁ বলছেন, ‘‘গোলাপী, ওর দাদা বিনোদ ছোট থেকেই অনাথ। বাবা মারা যাওয়ার পরে ওদের মা-ও ওদের ছেড়ে চলে যায়। বিনোদও পড়া ছেড়ে কাজ শুরু করে শিলিগুড়িতে। এই লকডাউনে দুই ভাইবোন খুবই বিপদের মধ্যে পড়েছে।’’
কুমারগ্রামের বিডিও মিহির কর্মকার বলেন, ‘‘সরকারি একটি প্রকল্পে পড়াশোনার জন্য মাসে দু’হাজার টাকা পাওয়া যায়। তার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজ, প্রধান ও স্কুলের প্রধান শিক্ষকের শংসাপত্র জোগাড় করা হচ্ছে। মেয়েটি দ্রুত যাতে সরকারি সুবিধা পায় তার জন্য সব রকম ভাবে চেষ্টা করা হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy