লড়াকু: ফুটবলের অনুশীলনে হীরা, সঞ্চিতারা। নিজস্ব চিত্র
মাঠে নামলেই শুনতে হত তীক্ষ্ণ ব্যঙ্গ—‘‘মেয়েদের আবার ফুটবল খেলা! ভাল করে দাঁড়াতেই পারিস না!’’ যেন চাবুকের মতো সপাটে পিঠে পড়েছিল সেই কথা। সবুজ মাঠের বুক চিরে যখন উত্তর দিনাজপুরের গোয়ালপোখরের প্রত্যন্ত নন্দঝাড় গ্রামের কিশোরীরা বল নিয়ে ছোটে, সেই ব্যঙ্গকেই যেন তাড়া করে তারা।
আজ আন্তর্জাতিক নারী দিবসে তারা নামছে একটি ম্যাচে। দু’টি দলের বেশির ভাগই নন্দঝাড় হাইস্কুলের নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী। দুই দলের ক্যাপ্টেন শিল্পা হীরা ও সঞ্চিতা সরকার। দু’জনেই পড়ে একাদশ শ্রেণিতে। দু’জনেরই বক্তব্য, মাঠে তারা যে একে অপরের বিরুদ্ধে শুধু লড়বে তাই নয়, এক সঙ্গে লড়বে মেয়েদের ফুটবল খেলা নিয়ে ব্যঙ্গের বিরুদ্ধেও। দুই ক্যাপ্টেনই জানাচ্ছে, আলপিনের মতো ছিটকে আসত ব্যঙ্গ, বোলতার হুলের মতো বিঁধত যন্ত্রণা। শিল্পা বলে, ‘‘চুপচাপ অপমান সহ্য করে আজ মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছি। এখন সবাই পাশে।’’ সঞ্চিতার কথায়, ‘‘আজ নারী দিবসে আমাদের এটাই সাফল্য।’’
পাড়ার দাদা-ভাইয়েরাই পাশে থেকে খেলার আয়োজন করে। সঞ্চিতা বলে, ‘‘স্কুল ছুটির পরে ছেলেরা খেলত। আমরা জানালা একটু ফাঁক করে খেলা দেখতাম। খেলতে ইচ্ছা করত খুব। কিন্ত বলতে গেলেই শুনতে হত ব্যঙ্গ। মাথা নিচু করে ফিরে এসেছিল পড়ার ঘরে। তবে মন বলেছিল, ভেঙে পড়ার কিছু নেই। বল নিয়ে মাঠে নামতেই হবে।’’
তাতে ঝক্কি কম ছিল না। প্রধানশিক্ষিকা অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলতে চাইলেন। সঞ্চিতা বলে, ‘‘খেলার আগেই হেরে যেতে নেই। আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন পাড়ার দাদারা। ছাত্র সমাজ নামে একটি সংগঠনের চন্দন পাল, সুমন পাল, সমীর বিশ্বাসেরা অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বললেন। অনুমতি মিলল। পায়ে এল কালো সাদা খোপ কাটা ফুটবল। ২০১৭ সাল থেকে পথ চলা শুরু। গ্রামের ফুটবলার সমীরবাবুই কোচিং দিচ্ছেন। আছেন রাম বসুও। সমীর জানালেন, জেলা পুলিশের প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছে গ্রামের মেয়েরা। চন্দন বলেন, ‘‘গোটা ব্লকে একমাত্র আমাদের গ্রামে মেয়েদের ফুটবল টিম আছে। এটা সম্ভব হয়েছে মেয়েদেরই অদম্য জেদে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy