পাঙ্গা নদীতে তল্লাশি পুলিশের। নিজস্ব চিত্র
জমি বিক্রির টাকা হাতাতে বন্ধুকে খুন করে পাঙ্গা নদীর জলে ভাসিয়ে দিয়েছে বলে পুলিশের কাছে স্বীকার করল এক যুবক।
গত শুক্রবার রাত থেকে জলপাইগুড়ি শহর লাগোয়া রাহুতবাগানের বাসিন্দা সাতাশ বছরের পঙ্কজ সিকদার নিখোঁজ ছিলেন বলে পরিবারের অভিযোগ। আরও অভিযোগ, প্রশান্ত দাস নামে এক যুবক পঙ্কজকে গত শুক্রবার বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায়। অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ প্রশান্তকে আটক করে। তিন দিন ধরে জেরার পরে প্রশান্ত খুনের কথা কবুল করে বলে পুলিশের দাবি। ধৃতের বয়ান অনুযায়ী বুধবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত পাঙ্গা নদীতে তল্লাশি চালায় পুলিশ। কিন্তু কোনও দেহ উদ্ধার হয়নি। সে কারণে আদৌও খুন করা হয়েছে কিনা, তা নিয়ে এখনও ধন্ধে রয়েছে পুলিশ। ধৃত যুবক কবুল করেছে, তার সঙ্গে আরও কয়েক জন সঙ্গী ছিল। তাদেরও খুঁজছে পুলিশ।
রহস্য আরও রয়েছে। সত্যি টাকার জন্য খুন, নাকি এর পেছনে অন্য কোনও কারণ রয়েছে— তা-ও এখনও স্পষ্ট নয়। রহস্যভেদে সিআইডিরও সাহায্য নিচ্ছে পুলিশ।
মৃত পঙ্কজ সিকদার।
গত শনিবার জলপাইগুড়ি কোতোয়ালি থানায় স্বামীর নিখোঁজ সংক্রান্ত একটি অভিযোগ দায়ের করেন পঙ্কজবাবুর স্ত্রী কমলা সিকদার। তদন্তে নামে পুলিশ। রবিবার পঙ্কজের বন্ধু প্রশান্ত ওরফে প্রসূন দাসকে গ্রেফতার করা হয়। সোমবার জলপাইগুড়ি মুখ্য বিচার বিভাগীয় আদলতে তুলে তাকে পাঁচ দিনের জন্য নিজেদের হেফাজতে নেয় পুলিশ। টানা জেরার মুখে মঙ্গলবার ভেঙে পড়ে প্রশান্ত। কবুল করে বন্ধুকে খুনের কথা। এ-ও জানিয়ে দেয়, সে একা নয়, জড়িত আছে আরও দুজন।
কিন্তু কেন ঘনিষ্ঠ বন্ধুকে খুন করলেন প্রশান্ত?
জেরায় প্রশান্ত জানিয়েছে, দিন কয়েক আগে তারা জানতে পারে, একটি জমি বিক্রি করে ৬৫ হাজার টাকা পেয়েছিলেন পঙ্কজ। সেই টাকা হাতিয়ে নিতেই খুনের ছক কষা হয়। সঙ্গী করে আরও দুই বন্ধুকে। শুক্রবার বিকেলে পঙ্কজের বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায় প্রশান্ত। এলাকার একটি লিচু বাগানে বসে খানাপিনার আসর। নেশা জাঁকিয়ে বসতেই তাঁকে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়। তার পর মৃত্যু নিশ্চিত করতে বুকেও পরপর আঘাত করা হয়। কিন্তু তার কাছে ৬৫ হাজার নয়, মেলে ২২ হাজার টাকা। সেই টাকা হাতিয়ে নিয়ে দেহ পাশেই পাঙ্গা নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হয় বলে প্রশান্ত কবুল করেছে, দাবি পুলিশ সূত্রের। পঙ্কজের সঙ্গে থাকা স্কুটি নিজের বাড়িতে নিয়ে যায় প্রশান্ত, সেটিকে বিক্রি করে আরও কিছু টাকা পাওয়া যাবে এই আশায়। সেটাই কাল হল তার। সেই স্কুটিটি চোখে পড়ে যায় স্থানীয় এক বাসিন্দার। খবর যায় পঙ্কজের স্ত্রী কমলার কাছে।
কোতোয়ালি থানার আইসি বিশ্বাশ্রয় সরকার জানিয়েছেন, জেরায় ধৃত স্বীকার করার পরেই তাঁরা তল্লাশি শুরু করে দিয়েছেন। পুলিশকে সাহায্য করছে সিআইডির একটি দল। এখনও পর্যন্ত খুনের কারণ হিসেবে টাকার বিষয়টি সামনে এলেও ঘটনার পিছনে দ্বিতীয় আরও কোনও রহস্য আছে কি না, তা-ও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে, জানিয়েছেন পুলিশ আধিকারিকেরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy