রাজ আমলের গোলাবারুদের ভাণ্ডার ছেয়ে গিয়েছে আগাছায়।
রাজবাড়ির পিছনে থাকা খেলাঘর, পাওয়ার হাউসের জলের ট্যাঙ্কের ইতিমধ্যে ভেঙে ফেলা হয়েছে। ভিক্টোরিয়া জুবিলি টাওয়ার ভবানীগঞ্জ বাজারে। ওই টাওয়ার থেকে একসময় কোচবিহারে কোথায় আগুন লেগেছে কি না তা দেখা হতো। সেখানে থাকা একটি ঘণ্টার কোনও খোঁজ নেই।
শহরের আরেক ঐতিহ্যবাহী ভবন ব্রজভিলাও ভেঙে ফেলা হয়েছে। ওই বাড়িতে এক সময় থাকতেন আচার্জ ব্রজেন্দ্রনাথ শীল। নেই রাজমাতা হাসপাতাল, নীলকুঠি হাউস। ইতিহাসকে নিয়েই যেখানে রাজস্থানের জয়পুর থেকে শুরু করে একাধিক শহর যেখানে পর্যটকদের আকর্ষণ হয়ে উঠেছে। সেখানে কোচবিহার হারিয়ে ফেলছে নিজের ইতিহাস। বাসিন্দাদের অনেকেই অভিযোগ করেন, পর্যটন সম্ভাবনা থাকা সত্বেও কোচবিহারকে নিয়ে কোনও সরকার সুষ্ঠু পরিকল্পনা হাতে নেয়নি।
এক সময় রেলগুমটিতে দাঁড়ালে চোখ চলে যেত রাজবাড়ির দিকে। অন্তত তিন কিলোমিটার পর্যন্ত দেখা যেত। এখন রেলগুমটি কেন, ভবানীগঞ্জ বাজারের পিছনে নরনারায়ণ রোডে দাঁড়ালেও চোখে পড়ে না রাজবাড়ি। বহুতলে ছেয়ে যাচ্ছে কোচবিহার। অভিযোগ উঠেছে, শুধু রাজবাড়ি নয়, বহুতলের দাপটে ঢেকে রাজ আমলে তৈরি হওয়া একাধিক বাড়ি। তা নিয়ে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে শহরে। রাজনৈতিক দল থেকে সাধারণ মানুষদের অনেকে রাজ আমলের ঐতিহ্য নষ্ট করার অভিযোগ উঠেছে।
পুরনো দিনের বাড়ি রক্ষায় পুরসভার কোনও নজর নেই বলেও অভিযোগ। কোচবিহার রাজ্য যে সময় ভারতের অন্তর্ভূক্ত হয় সে সময় স্পষ্ট ভাবে উল্লেখ করা হয়েছিল, রাজবাড়ির চূড়ার উপরে কোনও বাড়ি উঠবে না কোচবিহারে। এখন যেদিকে তাকানো যায় বহুতলের ছড়াছড়ি। যেগুলি রাজবাড়ির চূড়া ছাড়িয়ে অনেক দূর উঠে গিয়েছে, শহরে এমন এক হাজারের বেশি বাড়ি তৈরি হয়েছে বলে অভিযোগ। আগামী দিনে শহরকে ‘হেরিটেজ’ ঘোষণার পথে বাধা হয়ে দাড়াতে পারে বলে আশঙ্কা গবেষকদের অনেকেরই।
রাজ আমলের জলের রিজার্ভারে জন্মেছে আগাছা।
সিপিএমের কোচবিহার জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য বাম নেতা তথা প্রাক্তন মন্ত্রী অনন্ত রায় শহরের ইতিহাস নষ্ট করার দায় চাপিয়েছেন পুরসভার উপরে। তিনি অভিযোগ করেন, কংগ্রেস পুরবোর্ড দখল করার পর থেকে ওই ট্র্যাডিশন শুরু হয়। তখন যারা কংগ্রেসে ছিলেন এখন তাঁরা তৃণমূলে। তিনি বলেন, “পুরনো শহরের মর্যাদা নষ্ট হচ্ছে। কোচবিহার ভারত ভুক্তির চুক্তির সময় স্পষ্ট ভাবে লেখা ছিল রাজবাড়ির চূড়ার উপরে কোনও বাড়ি হবে না। শহরে এখন তা ছাপিয়ে অনেক বাড়ি হচ্ছে। তা বন্ধ হওয়া দরকার।” তাঁর কথায়, “মানুষের একটা আবেগ আছে। এই শহরকে নিয়ে মানুষ ছেড়ে কথা বলবে না।”
শহরের অনেক বাসিন্দাই পুরসভার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁদের বক্তব্য, শহরকে হেরিটেজ সম্পত্তি রক্ষায় পুরসভার বড় ভূমিকা রয়েছে। যেভাবে একের পর এক বাড়ি নষ্ট করে দেওয়া হচ্ছে। একের পর এক বাড়ি নষ্টের মুখে। তা রক্ষায় পুরসভার উদ্যোগ দরকার। এমনকী, ভিক্টোরিয়া জুবিলি টাওয়ারের মতো বেশ কিছু বাড়ি ভাঙ্গার পিছনে পুরসভার মদত ছিল বলেও অভিযোগ উঠেছে। কোচবিহার হেরিটেজ সোসাইটির সম্পাদক অরূপ মজুমদার বলেন, “পুরসভা দায়িত্ব অবশ্য রয়েছে। সেই সঙ্গে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে শহর রক্ষায়।”
কোচবিহার পুরসভার চেয়ারম্যান দীপক ভট্টাচার্য দাবি করেন, পুরনো বাড়ির কোনটি তাঁদের দায়িত্বের মধ্যে নেই। সেগুলি সরাসরি দেখভাল করেন। সরকার তিনি বলেন, “রেলগুমটি থেকে দাঁড়িয়ে রাজবাড়ি আমরাও দেখেছি। এখন দেখা যায় না। শহরে বহুতল হচ্ছে। কিন্তু বেআইনি ভাবে কিছু হচ্ছে না। সরকারি নিয়ম মেনে সবার অনুমতি নিয়ে ওই বহুতল হচ্ছে। কোচবিহারকে হেরিটেজ ঘোষণা করা হোক তা আমরাও চাই।”
(চলবে)
ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy