Advertisement
১১ মে ২০২৪
দক্ষিণ দিনাজপুর

দ্বন্দ্বের রেশ, ইস্তফা দিলেন কর্মাধ্যক্ষ

তৃণমূলের নয়া কমিটি তৈরি নিয়ে দলের অন্দরের ক্ষোভের আঁচ পড়ল দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা পরিষদে। দল সূত্রের খবর, দলের এক কর্মাধ্যক্ষের পদ থেকে ইস্তফা দিলেন দক্ষিণ দিনাজপুর জেলাপরিষদের বন ও ভূমি স্থায়ী সমিতির কর্মাধ্যক্ষ তথা দলের আদিবাসী সেলের নেতা বিশ্বনাথ পাহান।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বালুরঘাট শেষ আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০২:৫০
Share: Save:

তৃণমূলের নয়া কমিটি তৈরি নিয়ে দলের অন্দরের ক্ষোভের আঁচ পড়ল দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা পরিষদে।

দল সূত্রের খবর, দলের এক কর্মাধ্যক্ষের পদ থেকে ইস্তফা দিলেন দক্ষিণ দিনাজপুর জেলাপরিষদের বন ও ভূমি স্থায়ী সমিতির কর্মাধ্যক্ষ তথা দলের আদিবাসী সেলের নেতা বিশ্বনাথ পাহান। শুক্রবার ইস্তফাপত্র জেলা পরিষদে পাঠিয়ে দিয়েছেন। জেলাপরিষদের কর্মাধ্যক্ষ বিশ্বনাথবাবু এ দিন দুপুরে জেলা সভাধিপতি ললিতা টিগ্গার কাছে ইস্তফাপত্র দেন বলে জেলা পরিষদ সূত্রের খবর। নয়া বালুরঘাট ব্লক কমিটির সভাপতি পদের বদলে তাঁকে অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বের কার্যকরী সভাপতি করায় তিনি কর্মাধ্যক্ষ থেকে সরে দাঁড়ালেন বলে তাঁর ঘনিষ্ঠদের সূত্রের দাবি।

সভাধিপতি ললিতা টিগ্গা বলেন, “আমি এ দিন জেলাপরিষদে যাইনি। রিসিভ সেকশনে এমন চিঠি এসেছে, তারও কোনও খবর জানা নেই।” তৃণমূলের জেলা সভাপতি বিপ্লব মিত্র বলেন, “বেশ কিছুদিন ধরেই বিশ্বনাথ স্কুলের চাকরিতে ফিরে যেতে চাইছিলেন। ওঁকে বোঝানো হয়েছিল। তা ছাড়া দলের ব্লক কমিটির সভাপতি ও কার্যকরী সভাপতির দু’টি পদই গুরুত্বপূর্ণ। দু’জন একসঙ্গে মিলেই কাজ করবেন। সব ঠিক হয়ে যাবে।” এ দিকে, বিশ্বনাথবাবু এ দিন দিনভর তাঁর মোবাইল ফোনের সুইচ বন্ধ করে বালুরঘাট শহরের বাড়ি ছেড়ে স্কুলে শিক্ষকতার কাজে যোগ দিতে চলে যান বলে জানা গিয়েছে।

দু’বছর আগে কর্মাধ্যক্ষ পদ পেয়ে বিশ্বনাথবাবু বালুরঘাটের চিঙ্গিশপুর হাইস্কুলের চাকরি থেকে দীর্ঘ ছুটি নিয়েছিলেন। তাঁর এক সহকর্মীর কথায়, “হাইস্কুলের মোটা বেতনের চাকরি থেকে সরে তিনি দলের কাজে বেশি সময় দিতে চাইলে তৃণমূল সভাপতি বিপ্লববাবু কমিটির সভাপতি পদে মনোনীত করার আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু তা না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত বিশ্বনাথবাবুর ইস্তফার সিদ্ধান্ত নিতে খুব বেশি ভাবতে হয়নি বলে দল সূত্রের খবর। তবে তৃণমূলের জেলা সভাপতি বিপ্লববাবু মনোনীত নয়া কমিটি নিয়ে দলের অন্দরে একাংশ নেতার মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে প্রকাশ্যে ক্ষোভ জানিয়েছিলেন দলের তপনের বিধায়ক বাচ্চু হাঁসদা।

এ দিন বালুরঘাটে জেলাপরিষদের বন ও ভূমি কর্মাধ্যক্ষের ঘরের সামনে থেকে বিশ্বনাথবাবু নাম লেখা সাইনবোর্ডটিও খুলে ফেলা হয়েছে। ওই সাইনবোর্ডটি ঘরের এক কোণে পড়ে থাকতে দেখা যায়। জেলাপরিষদের একটি বিভাগে সভাধিপতিকে লেখা বিশ্বনাথবাবুর ইস্তফাপত্র দেখা গিয়েছে, তাতে এদিন সকাল ১০টা থেকে তিনি জেলা পরিষদের বন ও ভূমি স্থায়ী সমিতির কর্মাধ্যক্ষ পদ থেকে ইস্তফা দিলেন বলে চিঠিতে উল্লেখ করেছেন। পারিবারিক কারণে তার এই সিদ্ধান্ত বলে বিশ্বনাথবাবু চিঠিতে জানিয়েছেন বলে পরিষদ সূত্রের দাবি।

গত ১০ ফেব্রুয়ারি বালুরঘাটে সাংবাদিক সম্মেলন করে তৃণমূল জেলা সভাপতি বিপ্লব মিত্র জেলা থেকে শহর এবং মফঃস্বল ব্লক কমিটি গঠনের তালিকা ঘোষণা করেন। দলে বিদ্রোহীদের ডানা ছেঁটে বিপ্লববাবু তার অনুগামীদের প্রতিটি কমিটির কর্মকর্তা থেকে সদস্য মনোনীত করায় দলের একাংশ নেতৃত্বের মধ্যে অভিযোগ ও ক্ষোভ দানা বাঁধছিল। দলীয় সূত্রের খবর, জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ তথা হাইস্কুলের শিক্ষক বিশ্বনাথ পাহান বালুরঘাট মফঃস্বল ব্লক কমিটির সভাপতি পদে দাবিদার ছিলেন। কিন্তু নয়া কমিটি ঘোষণার পর দেখা যায় বিশ্বনাথবাবুকে গুরুত্বহীন ব্লকের কার্যকরী সভাপতি করা হয়েছে। জেলা কমিটিতেও তাকে নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ।

তৃণমূল পরিচালিত দক্ষিণ দিনাজপুর জেলাপরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ সোনা পালকে নিয়ে রীতিমত বিড়ম্বনায় দল। তার উপর বন ও ভূমি কর্মাধ্যক্ষের ইস্তফার খবরে তৃণমূলের জেলা নেতৃত্বের মধ্যে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। এ দিন এ প্রসঙ্গে হরিরামপুরের নেতা সোনা পাল অভিযোগ করেন, “জেলা পরিষদ সব স্তম্ভ যেন বালির উপর দাঁড়িয়ে। একটা করে স্তম্ভ সরছে। যে কোনও সময় হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়তে পারে জেলা পরিষদ। বিশ্বনাথ পাহানের সরে দাঁড়ানো থেকে ওই প্রক্রিয়া শুরু হল।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

balurghat tmc
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE