Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ফুলহারে সেতু কবে, উত্তর নেই কোনও

ভাঙাচোরা রাস্তা দিয়ে কাপড়ের গাঁট বোঝাই সাইকেল চলেছে। তা নিয়ে ফুলহার নদীর ঘাটে পৌঁছে মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লেন পলাশ মণ্ডল। তিনি পৌঁছনোর কয়েক মিনিট আগেই নৌকা ঘাট থেকে ছেড়ে গিয়েছে। এ বার আড়াই ঘণ্টা অপেক্ষা ছাড়া পথ নেই।

বাপি মজুমদার
চাঁচল শেষ আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০১৫ ০২:৩৫
Share: Save:

ভাঙাচোরা রাস্তা দিয়ে কাপড়ের গাঁট বোঝাই সাইকেল চলেছে। তা নিয়ে ফুলহার নদীর ঘাটে পৌঁছে মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লেন পলাশ মণ্ডল। তিনি পৌঁছনোর কয়েক মিনিট আগেই নৌকা ঘাট থেকে ছেড়ে গিয়েছে। এ বার আড়াই ঘণ্টা অপেক্ষা ছাড়া পথ নেই।

মালদহের রতুয়ার দিয়ারার চরের গঙ্গাধরটোলার বাসিন্দা পলাশবাবু রতুয়া থেকে কাপড় কিনে ফিরছিলেন। হাটে কাপড় বিক্রি করেন তিনি। বাড়ি থেকে ভোর চারটেয় বেরিয়ে রতুয়ায় কেনাকাটা সেরে ফিরতি পথে নাকাট্টি ঘাটে পৌঁছতেই দুপুর গড়িয়েছে। সময় মতো নৌকা না মেলায় এদিন আর তার হাটে যাওয়া হবে না। একদিন দু’দিন নয়। গত তিরিশ বছর ধরে এমন যন্ত্রণাকে সঙ্গী করেই ফুলহার পেরিয়ে যাতায়াত করেন তিনি। শুধু তিনিই নন। কাটাহা দিয়ারার চরের মহানন্দটোলা ও বিলাইমারি গ্রাম পঞ্চায়েতের লক্ষাধিক মানুষের দুর্দশার নিত্য কাহিনি এটাই। অথচ যন্ত্রণার ওই ফুলহারের উপর সেতুর পাশাপাশি রাস্তা হবে জেনে বছর খানেক আগে আবির খেলেছিলেন বাসিন্দারা। কিন্তু কবে ওই সেতু ও রাস্তা হবে প্রশাসনের কাছেও তার সদুত্তর মেলেনি।

রতুয়া-১ ব্লকের বিডিও নীলাঞ্জন তরফদার বলেন, “ফুলহারে সেতুর পাশাপাশি প্রস্তাবিত জাতীয় সড়কের বিষয়ে নির্দিষ্ট কোনও তথ্য আমাদের কাছে নেই। তবে বালুপুর থেকে নাকাট্টি ঘাট যাওয়ার বেহাল রাস্তাটি গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতি থেকে যাতে সংস্কার করা যায় সেই উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। তাতে স্থানীয় বাসিন্দাদের দুর্ভোগ কিছুটা হলেও কমবে। ফুলহারে সেতুর জন্য ২০১২ সালে ২৯০ কোটি টাকা বরাদ্দ মেলে। পাশাপাশি মালদহ থেকে সেতুর ওপারে কাটিহার পর্যন্ত সড়কটির ১৩১এ জাতীয় সড়ক হিসাবে অনুমোদন মেলে। সেতু হলে মূল ভূখন্ডের সঙ্গে জুড়ে যাবে কাটাহা দিয়ারা চর বলে পরিচিত এলাকা দু’টি। কিন্তু দুবছর গড়ালেও মালদহের রতুয়ার নাকাট্টি ঘাটে সেতুর জন্য একটি ইটও গাঁথা হয়নি। আর ফুলহার পেরিয়ে বালুপুর পর্যন্ত ৭ কিলোমিটার রাস্তা আরও বেহাল হয়েছে। ফলে তাদের দুর্দশাও ঘোচেনি।

কেমন সেই দুর্দশা? ওপারে এক কিলোমিটার ভাঙাচোরা মাটির রাস্তা মাড়িয়ে ফুলহার নদীর ঘাট। সেখান থেকে ঘণ্টাখানেক নৌকায় চেপে এপারে নাকাট্টি ঘাট। নাকাট্টি ঘাট থেকে বালুপুর পর্যন্ত ৭ কিলোমিটার রাস্তা। একসময় পিচের প্রলেপ পড়লেও একযুগেরও বেশি সময় ধরে সংস্কারের অভাবে ওই রাস্তা যাতায়াতের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। ফলে নদী পার হতে নৌকার যন্ত্রণার পর বেহাল ৭ কিলোমিটার রাস্তা পার হতে নাভিশ্বাস ওঠে বাসিন্দাদের। অথচ হাসপাতাল থেকে যে কোনও কাজেই বাসিন্দাদের প্রথমে পৌঁছাতে হয় রতুয়া।

ওই সেতু তৈরির দায়িত্ব পূর্ত দফতরের অধীন জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের। দফতরের মালদহের এক কর্তা বলেন, “ফুলহারে সেতু ও জমি অধিগ্রহণের জন্য প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলতে পারি। পাশাপাশি জাতীয় সড়কের জন্য ডিটেইল প্রজেক্ট রিপোর্টও কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে।”

পলাশ মণ্ডলের মতো দিয়ারার রাজকিশোরটোলার বাসিন্দা বিমলকৃষ্ণ মন্ডল, হিমাংশু দাস একযোগেই বলেন, ভেবেছিলেন চর এলাকার বাসিন্দা হয়ে থাকার নরক যন্ত্রণা থেকে এবার মুক্তি মিলবে, কিন্তু কোথায় কী! বিলাইমারি গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান রুদলি চৌধুরী ও মহানন্দটোলা গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান কংগ্রেসের মোজাম্মেল হক একযোগেই বলেন, ফুলহারে কবে সেতু হবে কারও কাছেই তো তার সদুত্তর মিলছে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

bapi majumdar chanchal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE