বন্ধ মধু চা বাগানের শ্রমিকদের সঙ্গে আরএসপির শ্রমিক সংগঠন ইউটিউইসি-র নেতা অশোক ঘোষ। ছবি: রাজকুমার মোদক।
রাজ্য সরকারের উদাসীনতাতেই বন্ধ চা বাগানে শ্রমিক মৃত্যুর ঘটনা বাড়ছে। এমনই অভিযোগ তুলে এ বার হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির দ্বারস্থ হলেন আরএসপির শ্রমিক সংগঠন ইউটিউইসি-র সাধারণ সম্পাদক অশোক ঘোষ।
বুধবার দুপুরে ডুয়ার্সের বন্ধ মধু চা বাগান পরিদর্শনে যান তিনি। গত সাড়ে তিন বছরে ডুয়ার্সের বন্ধ বাগানে ১৭৫ জন শ্রমিক অনাহার ও অপুষ্টি জনিত রোগে ভুগে মারা গিয়েছেন বলে তাঁর দাবি। তা রুখতে আদালত যাতে সরকারকে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেয়, সেই আবেদনও করা হয়েছে।
গত ছ’মাস ধরে বন্ধ ডুয়াসের্র কালচিনি ব্লকের মধু চা বাগান। ইতিমধ্যে বাগানের দশ জন শ্রমিক অপুষ্টিজনিত রোগে ভুগে বিনা চিকিৎসায় মারা গিয়েছেন বলে দাবি করেছেন সেখানকার শ্রমিকেরা।
শ্রমিকদের অভিযোগ, সম্প্রতি খাদ্য দফতর অনুদান হিসাবে যে চাল বরাদ্দ করেছে, তা অত্যন্ত নিম্নমানের। বাগানের হাসপাতাল থেকে আর এখন পরিষেবা মেলে না। সপ্তাহে এক দিন আলিপুরদুয়ার থেকে এক জন চিকিৎসক এসে নামমাত্র পরিষেবা দিয়ে বাগান ছাড়েন। খাবার জোগাড় করতে বহু মানুষ দিনের বেলা বাসরা নদীর পাথর ভেঙে ও ভুটানের পাথর খাদানে গিয়ে কাজ করছেন। সেখানেও প্রতিদিন কাজ মেলে না। অনেক সময় উপোসী কাটাতে হয়।
অশোকবাবুর কথায়, “এই বাগানের যা অবস্থা দেখলাম, কলকাতায় ফিরে হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতিকে চিঠিতে সব জানাব। রাজ্য সরকার এখন খয়রাতি-উৎসবে মেতেছে। বন্ধ বাগানের শ্রমিকদের ব্যাপারে তাঁদের কোনও রকম নজর নেই।” বন্ধ বাগানের সমস্যা নিয়ে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করার কথাও ভাবছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
বর্তমানে ডুয়ার্সে মধু-সহ আটটি চা বাগান বন্ধ। বাগানগুলিতে পানীয় জল, চিকিৎসা-সহ সরকারি নানা অনুদান ঠিকমতো মিলছে না বলে অভিযোগ আরএসপি-র শ্রমিক সংগঠন ইউটিইউসি-র।
মৃত শ্রমিকদের পরিবারকে দু’লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি করেছেন নির্মলবাবু। তাঁর কথায়, “বিষ মদে মৃতদের পরিবারকে দু’লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হলে বন্ধ বাগানের মৃত শ্রমিকদের পরিবারকে কেন সে টাকা দেওয়া হবে না, তা আমরা সরকারের কাছে জানতে চাইব।”
২৩ সেপ্টেম্বর মধু চা বাগান বন্ধ করে বাগান ছেড়ে চলে যান কর্তৃপক্ষ। বিপাকে পড়েন ৯৫১ জন শ্রমিক ও তাঁদের উপর নির্ভরশীল পাঁচ হাজার মানুষ। বাগানে সারা দিনে দু’বেলা সামান্য সময়ের জন্য পানীয় জলের সরবরাহ করা হলেও তা পেতে রীতিমতো হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। বরাত ভাল থাকলে জল মেলে। নাহলে সামান্য কয়েকটি গভীর নলকূপের সামনে লাইনে দাড়িয়ে খাবার জল সংগ্রহ করতে হয়। কাজের খোঁজে বেশ কয়েকজন শ্রমিক দালালের হাত ধরে ভিন্ রাজ্যে চলে গিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে তিন জন চার মাস ধরে নিখোঁজ।
বাগানের শ্রমিক বিরসাই ওঁরাও বলেন, “রোজগারের ব্যবস্থা নেই। অনেক দিন ধরেই একশো দিনের কাজ মিলছে না। বহু স্কুলের পড়ুয়া পড়াশোনা বন্ধ রেখে মা-বাবার সঙ্গে দিনমজুরের কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে।”
আলিপুরদুয়ারের মহকুমাশাসক সমীরণ মণ্ডল বলেন, “১০০ দিনের কাজ করানো হয়েছিল। ফের তা শুরু হবে। মাসিক অনুদান যাতে মেলে, তার জন্য সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy