Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

বরাদ্দ নেই, উন্নয়ন হয়নি স্টেডিয়ামের

মহারাজা জিতেন্দ্রনারায়ণ স্টেডিয়ামের (এমজেএন) বেহাল দশা ঘিরে কোচবিহারের বাসিন্দাদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, শহরের রাসমেলা ময়দান লাগোয়া এলাকায় পঞ্চাশ বছরের বেশি আগে তৈরি ওই স্টেডিয়ামটি সংস্কারে কোন মহলেরই হেলদোল নেই।

স্টেডিয়ামের হাল এখন এমনই।—নিজস্ব চিত্র।

স্টেডিয়ামের হাল এখন এমনই।—নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কোচবিহার শেষ আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০১৫ ০১:৪৭
Share: Save:

মহারাজা জিতেন্দ্রনারায়ণ স্টেডিয়ামের (এমজেএন) বেহাল দশা ঘিরে কোচবিহারের বাসিন্দাদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, শহরের রাসমেলা ময়দান লাগোয়া এলাকায় পঞ্চাশ বছরের বেশি আগে তৈরি ওই স্টেডিয়ামটি সংস্কারে কোন মহলেরই হেলদোল নেই।

কয়েক বছর আগেই স্টেডিয়াম চত্বরের কাঠের গ্যালারি একটু একটু করে পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে। একমাত্র পাকা গ্যালারি মাঝে মেরামত করা হলেও নতুন করে আসন সংখ্যা বাড়ানোর কাজ হয়নি। তৈরি হয়নি নতুন পাকা গ্যালারিও। মাঠের অবস্থাও করুণ। রাসমেলা থেকে নানা অনুষ্ঠানের জন্য বছরে একাধিকবার ওই মাঠে বাঁশ পুঁতে মঞ্চ, স্টল তৈরি করা রুটিন ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। সবুজ ঘাসের গালিচা প্রায় নষ্ট হয়ে যাওয়ায় বৃষ্টিতে জলকাদা হচ্ছে। গরু, ছাগল, ভেড়া মাঠের ভেতরে ঢুকে পড়ছে। আগাছার জঙ্গলে বিক্ষিপ্তভাবে কিছু এলাকা ঢাকা পড়ে সমস্যা আরও বেড়েছে। অথচ শহরে খেলার উপযোগী সবুজ মাঠ কমছে। প্রায় তিন মাস আগে স্টেডিয়ামের পরিকাঠামোগত উন্নয়ন ও আধুনিকীকরণের জন্য ৫০ লক্ষ টাকার প্রকল্প ক্রীড়া দফতরে পাঠান স্টেডিয়াম দেখভালের দায়িত্বে থাকা জেলা বিদ্যালয় ক্রীড়া সংসদ কর্তৃপক্ষ। বরাদ্দ মেলেনি। কবে মিলবে তা-ও স্পষ্ট নয়।

জেলা বিদ্যালয় ক্রীড়া সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রকল্পে একাধিক বিষয়ের উল্লেখ রয়েছে। তার মধ্যে প্রায় পাঁচশো আসনের পুরানো পাকা গ্যালারি সংস্কার, আরও পাঁচশো আসনের নতুন গ্যালারি তৈরি, স্টেডিয়াম চত্বরে জাল বসানো, নতুন করে মাঠ সংস্কারের মতো বিষয় রয়েছে বলে জানিয়েছেন ওই সংস্থার কার্যকরী সহ সভাপতি পার্থপ্রতিম রায়। রাজ্যের পূর্ত দফতরের পরিষদীয় সচিব রবীন্দ্রনাথ ঘোষ অবশ্য বলেন, “সীমানা প্রাচীর তৈরি, মাঠ সংস্কারের কিছু কাজ নতুন সরকারের আমলে ইতিমধ্যে হয়েছে। জায়গার অভাবে বাকি তিন দিকে নতুন বড় গ্যালারি তৈরির সমস্যা রয়েছে। তবে ক্রীড়া দফতরে ইতিমধ্যে স্টেডিয়ামের উন্নয়নের জন্য একটি প্রকল্প পাঠান রয়েছে। দ্রুত আর্থিক বরাদ্দের বন্দোবস্ত করে যাতে ওই কাজ বাস্তবায়িত করা যায়, সে ব্যাপারে উদ্যোগী হচ্ছি।”

ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা জানান, এক সময় ওই স্টেডিয়াম ছিল কোচবিহারের খেলাধুলে চর্চার অন্যতম প্রাণকেন্দ্র। ক্রীড়া সংস্থার ক্রিকেট লিগ, স্কুল ফুটবল, স্পোর্টস এমনকী বিভিন্ন ক্লাবের উদ্যোগে আয়োজিত নানা খেলার আসর সেখানে বসত। কিন্তু তারপরেও স্টেডিয়ামটির রক্ষণাবেক্ষণে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। কোচবিহার নাগরিক অধিকার সুরক্ষা মঞ্চের সভাপতি রাজু রায় বলেন, “ঐতিহ্যবাহী এমজেএন স্টেডিয়ামটি উদাসীনতার বড় উদাহরণ। শহরে যখন খেলার মাঠের সংখ্যা কমছে, তখনও স্টেডিয়ামটির পূর্ণাঙ্গ সংস্কার ও আধুনিকভাবে গড়ে তোলা হচ্ছে না। সামান্য বৃষ্টিতেই মাঠ খেলার অযোগ্য হয়ে পড়ছে।”

কোচবিহার জেলা ক্রীড়া সংস্থার সচিব বিষ্ণুব্রত বর্মন বলেন, “ওই স্টেডিয়াম মাঠে মর্যাদাপূর্ণ শশীকান্ত মেমোরিয়াল ফুটবল প্রতিযোগিতার আসর বসত। প্রসূন বন্দোপাধ্যায়, শ্যাম থাপা, কৃশানু দে’র মতো তারকা ফুটবলাররা ওই মাঠে খেলেছেন। দেখভালের অভাবে মাঠটি পুরোপুরি বেহাল। ক্রিকেট, ফুটবলের গুরুত্বপূর্ণ খেলা দেওয়া ওই মাঠে সম্ভব নয়।” প্রশাসনের কর্তারা অবশ্য উদাসীনতার অভিযোগ মানতে চাননি। কোচবিহারের সদর মহকুমা শাসক বিকাশ সাহা জানান, ক্রীড়া দফতরের আধিকারিকদের সঙ্গে স্টেডিয়ামটির সামগ্রিক উন্নয়নের ব্যাপারে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

coochbehar maharaja jitendranarayan stadium
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE