মদন মিত্রের গ্রেফতারির পরে শুক্রবার রাতে জলপাইগুড়িতে এসএফআইয়ের মিছিল। ছবি: সন্দীপ পাল।
শিলিগুড়িতে একটি পূর্ণাঙ্গ ক্রিকেট স্টেডিয়াম তৈরির কথাবার্তা এগিয়েছিল অনেকখানি। আলিপুরদুয়ারে একটি তীরন্দাজী প্রশিক্ষণ গড়ার ব্যাপারে রাজ্যের প্রতিশ্রুতি মিলেছিল। তাই মদন মিত্রের গ্রেফতারির পরে রাজনৈতিক মহলে ক্ষোভ আর হতাশার বিপরীত ছবি ধরা পড়লেও উত্তরের ক্রীড়ামহলকে কিন্তু গ্রাস করেছে প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা। কেউ মুখ খুলেছেন। কেউ আবার প্রকাশ্যে কোনও প্রতিক্রিয়া দিতে চাননি। কিন্তু উদ্বেগ গোপন থাকেনি।
চাঁচল মহকুমা ক্রীড়া পর্ষদের (এসজিএসই) আহ্বায়ক প্রাণগোপাল পোদ্দার বলেন, “আমরা ক্রীড়াপ্রেমী। সেই হিসেবে বলতে পারি যে মদন মিত্র খেলাধুলার প্রসারে উদ্যোগী ছিলেন। উনি গ্রেফতার হওয়ায় সেই উদ্যোগের কি হবে তা সময়ই বলবে।” চাঁচলের গ্যালাক্সি স্পোর্টস অর্গানাইজেশনের এক কর্তা দীপঙ্কর রামের প্রতিক্রিয়া, “ক্রীড়াপ্রেমী হিসেবে আমরা মর্মাহত। কিন্তু, আইনের ঊর্ধ্বে তো কেউই নন।” আলিপুরদুয়ারের প্রাক্তন ক্রিকেটার সোমশঙ্কর দত্ত অবশ্য মনে করেন, রাজ্য সরকারের উচিত অবিলম্বে স্বচ্ছ ভাবমূর্তি রয়েছে এমন কাউকে ক্রীড়া দফতরের দায়িত্ব দেওয়া। প্রাক্তন ফুটবলার কমলেশ ভট্টাচার্য চাইছেন, দ্রুত কাউকে পৃথকভাবে ক্রীড়া দফতর দিয়ে খেলাধূলার প্রসার চালু রাখার ব্যবস্থা হোক। কংগ্রেস নেতা তথা আলিপুরদুয়ারের প্রাক্তন খেলোয়াড়দের ক্লাবের সভাপতি বিশ্বরঞ্জন সরকার অবশ্য দাবি করেন, “মদন মিত্রের গ্রেফতার হওয়াটা অবশম্ভাবী ছিল। দেরি করে হল।” বিশ্বরঞ্জনবাবু, কেন মদনবাবুদের প্রশ্রয় দেওয়া হল সেই প্রশ্ন তুলে মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগও দাবি করেছেন।
শিলিগুড়ি মহকুমা ক্রীড়া পরিষদের ফুটবল সচিব মানস দে বলেন, “এটা দুঃখজনক ঘটনা যে একজন ক্রীড়ামন্ত্রীকে গ্রেফতার হতে হল। খেলাধূলোর জন্য তিনি সবসময়েই উদ্যোগী ছিলেন। আমাদের সংস্থার জন্যও করেছেন। তাই বিষয়টি আমাদের কাছে দুঃখজনক।”মহকুমা ক্রীড়া পরিষদের প্রাক্তন ফুটবল সচিব তথা ক্রীড়া সংগঠক অচিন্ত্য গুহর প্রতিক্রিয়া, “মন্ত্রীর গ্রেফতারির সঙ্গে খেলাধূলোর কোনও সম্পর্ক নেই। এটা রাজনীতির বিষয়। আমরা মাঠের লোক, রাজনীতিতে নেই।” সহমত মহকুমা ক্রীড়া পরিষদের ভলিবল সচিব স্বরাজ সূত্রধর ও মহকুমা ক্রীড়া পরিষদের অ্যাথেলেটিক সচিব শুভাশিস ঘোষও।
পরিবহণমন্ত্রী মদনবাবু রায়গঞ্জে বিভিন্ন দলীয় কর্মসূচী বা সরকারি অনুষ্ঠানে গেলে তাঁর সঙ্গে দেখা যেত তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসির উত্তর দিনাজপুর জেলা সভাপতি অরিন্দম সরকারকে। অরিন্দমবাবুর দাবি, “সিবিআই বিজেপির হয়ে দালালি করছে। রাজ্যে তৃণমূলের নামে বদনাম রটিয়ে বিজেপিকে ক্ষমতায় আনতেই সিবিআই বেছে বেছে তৃণমূলের নেতা মন্ত্রী ও সাংসদদের গ্রেফতার করছে। তবে মানুষ সবই বুঝতে পারছেন।” একই ভাবে শিলিগুড়িতে মদনবাবুর একান্ত ঘনিষ্ট বলে তৃণমূলের অন্দরে পরিচিত নেতা জেলা পরিবহণ বোর্ডের সদস্য মদন ভট্টাচার্য বলেন, “সরকার এবং দলের প্রধান যা বলার বলেছেন। শুধু বলব, সিবিআই আমানতকারীদের টাকা ফেরতের কথা না বলে বিজেপির কথায় গ্রেফতারের রাজনীতি শুরু করেছে। তৃণমূলকে হেয় করার চক্রান্ত চলছে। মানুষ এর জবাব দেবে।”
আলিপুরদুয়ারের তৃণমূল নেতা জহর মজুমদার অভিযোগ করেছেন, “গোটা ঘটনাটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। ওঁরা গ্রেফতার হওয়াটা দুঃখজনক। এখন মামলার বিচার শুরু হবে। ও নির্দোষ তা প্রমাণিত হবে।” কোচবিহার জেলা তৃণমূলের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “আইন আইনের পথে চলবে।” কোচবিহার জেলা তৃণমূলের সহ সভাপতি আব্দুল জলিল আহমেদের অভিযোগ, “বিজেপি ও সিপিএম মিলে আমাদের পরিবহণ মন্ত্রীকে ফাঁসিয়েছে। জেলার আরেক তৃণমূল নেতা মিহির গোস্বামীকে ফোন করা হলে তাঁর ছেলে ফোন ধরে জানান, মিহিরবাবু দুটি ফোনই রেখে বাজারে গিয়েছেন কখন ফিরবেন বলে যাননি।
মালদহের জেলা ক্রীড়া সংস্থার প্রাক্তন সম্পাদক শুভাশিস সরকার অবশ্য দাবি করেছেন, মদনবাবুর গ্রেফতারের ঘটনার পরে রাজ্যের খেলার দুনিয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠে গেল। তাঁর অভিযোগ, “সুদীপ্ত সেনকে সামনে রেখে লক্ষ লক্ষ মানুষকে প্রতারণায় যুক্ত যাঁরা তাঁদের শাস্তির প্রয়োজন রয়েছে।” রাজ্যের মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্র বলেন, “এই বিষয়ে যা বলার তা রাজ্য নেতৃত্ব বলে দিয়েছেন।”মদন মিত্রের সঙ্গে জলপাইগুড়ি জেলা তৃণমূল নেতা কল্যাণ চক্রবর্তীর সঙ্গে বরাবরই ভাল সম্পর্ক রয়েছে বলে দল সূত্রের খবর। কল্যাণবাবু এ দিন বলেন, “আইনি পদক্ষেপ নিয়ে কোনও মন্তব্য করার নেই। তবে আশা করছি মদনবাবু যে নির্দেশ তা শীঘ্রই প্রমাণিত হবে।”
এই ব্যাপারে বিজেপির জেলা সাধারণ সম্পাদক শঙ্কর চক্রবর্তী তাঁর দলের শীর্ষ নেতাদের পথে হেঁটেই মুখ্যমন্ত্রীর ইস্তফা দাবি করেছেন। উত্তর দিনাজপুরের জেলা কংগ্রেস সভাপতি মোহিত সেনগুপ্ত বলেন, “মদনবাবুর গ্রেফতার হওয়াটা আশ্চর্যের কোনও বিষয় নয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের ইতিহাসে এই প্রথম কোনও রাজনৈতিক নেতা তথা মন্ত্রী প্রতারণার অভিযোগে গ্রেফতার হলেন। এই ঘটনায় যাঁরা সৎপথে রাজনীতি করেন তাঁরা সমাজের কাছে লজ্জাবোধ করছেন।” রায়গঞ্জের সিপিএম সাংসদ মহম্মদ সেলিম অভিযোগ করেছেন, “নিজেদের দোষ আড়াল করতে তৃণমূল হাস্যকরভাবে বিজেপিকে দায়ী করছে। দিল্লিতে গিয়ে বিজেপি নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে অনেক চেষ্টা করেও তাঁর দলের নেতা মন্ত্রীদের সারদা কান্ড থেকে বাঁচাতে পারলেন না। এতেই স্পষ্ট সিবিআই নিরপেক্ষ তদন্ত করছে।” রায়গঞ্জের সাংসদের কটাক্ষ, “তৃণমূলের আরও এক ডজন মন্ত্রী, সাংসদ ও নেতাদের জন্য সিবিআই অপেক্ষা করছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy