তাস: আদ্রার হইচই সঙ্ঘের মণ্ডপ। নিজস্ব চিত্র
অল্প সময়ের ব্যবধানে তিন পুজো। বিশ্বকর্মা, দুর্গার পরে কালীপুজো। তাই পকেটে টান পড়ায় এ বছর আদ্রায় কালীপুজোর জাঁকজমকটা কিছুটা কম। কিন্তু দর্শকদের মনোরঞ্জনের জন্য বাজেটের মধ্যেই মণ্ডপ ও প্রতিমায় বিভিন্ন থিম ফুটিয়ে তুলে একে অন্যকে টেক্কা দিতে নেমেছে এই রেল শহরের কালীপুজোর উদ্যোক্তারা।
কোথাও থিম তাসের দেশ, কোথাও আবার বন্যাপ্লাবিত গ্রামের কালীপুজো। কেউ মণ্ডপ সজ্জায় অজন্তা ইলোরার শিল্প তুলে এনেছেন, কোনও পুজোয় অ্যাকোরিয়ামে ভাসমান মাছের মধ্যে কালী প্রতিমা দেখা যাচ্ছে। তবে নিম্নচাপে বৃষ্টির জেরে মণ্ডপ তৈরি করতে বেগ পেতে হচ্ছে উদ্যোক্তাদের। .
আদ্রায় উৎসবের আমেজ শুরু হয়ে যায় ভাদ্রের শেষে বিশ্বকর্মা পুজো থেকেই। রেশটা থাকে কালীপুজো পর্যন্ত। বস্তুত বিশ্বকর্মা, দুর্গা ও কালী— এই তিন পুজোই বড়মাপের হয় রেল শহরে। এ বারেও তার ব্যাতিক্রম হয়নি। পুলিশের দেওয়া হিসাব অনুযায়ী, এ বার আদ্রায় ৬২টি পুজো হচ্ছে। তার মধ্যে পাঁচটি পারিবারিক।
তবে উৎসবের ছন্দ কিছুটা কেটেছে কমবেশি এক মাসের মধ্যেই তিনটি পুজো হওয়ায়। উদ্যোক্তাদের কথায়, বিশ্বকর্মা পুজো ও দুর্গাপুজোর মধ্যে কিছুটা ব্যবধান থাকে। কিন্তু এ বার বিশ্বকর্মা পুজোর পরের সপ্তাহেই দুর্গাপুজো শুরু হয়ে যায়। তাই পর পর তিনটি পুজো চলে আসায় আর্থিক ভাবে অনেক পুজো উদ্যোক্তা চাপে পড়ে গিয়েছেন।
পুজোর প্রস্তুতির সময়াভাবের সঙ্গে এ বার দোসর হয়েছে নিম্নচাপের বৃষ্টি। বুধবার দুপুর থেকে আদ্রায় বৃষ্টি শুরু হওয়ায় শেষ পর্যায়ের প্রস্তুতি মাঠে মারা গিয়েছে। অনেক পুজো কমিটিই বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত মণ্ডপসজ্জা শেষ করে উঠতে পারেনি।
এর মধ্যেও অবশ্য থিম ফুটিয়ে তুলে দর্শক টানার প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে থাকতে রাজি নয় পুজো উদ্যোক্তারা। অনেকেই জানাচ্ছেন, বৃহস্পতিবার পুজো শুরু হলেও আদ্রায় পুজোর রেশ চলে আরও দিন তিনেক। ফলে বৃহস্পতিবার রাতের মধ্যে মণ্ডপ শেষ হলেও সমস্যা হবে না। তাই বৃষ্টি মাথায় নিয়েই নাওয়া-দাওয়া ভুলে নাগাড়ে কাজ করছেন অনেক শিল্পী।
তাঁদের মধ্যে অন্যতম কল্পতরু কালীপুজো কমিটির মণ্ডপ শিল্পী শম্ভু বাউরি। পুজোর অন্যতম উদ্যোক্তা প্রভাকরপ্রসাদ শ্রীবাস্তব জানান, তাঁদের থিম ‘বন্যাপ্লাবিত গ্রামের কালীপুজো’। অকাল বৃষ্টির সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই থিম নির্বাচন হয়েছে। মণ্ডপসজ্জায় কল্পতরু তুলে ধরেছে জলমগ্ন একটি গ্রামের দৃশ্য। তারই মাঝে অর্ধেক জলমগ্ন গ্রাম্য কালীমন্দির। তবে যেভাবে বৃষ্টির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, মণ্ডপ সত্যিই জলমগ্ন হয়ে পড়বে কি না তা নিয়েই সংশয়ে আছেন উদ্যোক্তারা।
রেল শহরের আরেক বড় বাজেটের পুজো হইচই সঙ্ঘের থিম ‘তাসের দেশ’। নানা তাস দিয়ে সাজানো হয়েছে পুরো মণ্ডপ। মূল কর্মকর্তা গৌতম মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মণ্ডপসজ্জায় অভিনবত্ব আনার চেষ্টা করেছি আমরা। তাই তাস দিয়ে মণ্ডপ সাজানো হয়েছে।”
একই ভাবে শহরের আরেক পুজো মুক্তদলের উদ্যোক্তারা জানাচ্ছেন, অজন্তা ইলোরার ধাঁচের ভগ্ন মন্দিরের মাঝে কালীপুজো— এটাই তাঁদের থিম। কিন্তু বৃষ্টিতে তাঁদের মণ্ডপ তৈরি করতে যথেষ্ঠ বেগ পেতে হয়েছে। মণ্ডপের রং ধুয়ে গিয়েছে। ক্ষতি হয়েছে শোলার কাজেও। পুজো কমিটির সম্পাদক সঞ্জয় কিশোর বলেন, ‘‘সংস্কারের অভাবে অনেক শিল্পসুষমামণ্ডিত মন্দির ভেঙে পড়ছে। আমরা সেই সব মন্দির সংস্কারের বার্তা দিতে চাইছি।”
অন্য দিকে, নিজেরাই মণ্ডপ গড়ে চমক দিয়েছে বারো কুলি পুজো কমিটির সদস্যেরা। মণ্ডপে তৈরি করা হয়েছে আস্ত একটা অ্যাকোরিয়ামের আদলে। সেখানে ভেসে বেড়াচ্ছে প্রচুর রঙিন মাছ। তারই মাঝে কালী প্রতিমা। আলোর নিপুণ ব্যবহারে অ্যাকোরিয়ামের মধ্যে জল-ছবি তৈরি করা হয়েছে। উদ্যোক্তাদের দাবি, ‘‘শিশুরা তো বটেই, বড়দেরও মনে ধরবে এই মণ্ডপ।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy