Advertisement
১১ মে ২০২৪

আরও চাই একশো দিনের কাজ

পঞ্চায়েত সমিতির দফতরে সম্প্রতি আনন্দবাজারের পাঠকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন খয়রাশোল পঞ্চায়েত সমিতির সভানেত্রী অসীমা ধীবর। এলাকার মানুষের নানা দাবি-দাওয়া, প্রাপ্তি-প্রত্যাশার বিষয় ওঠে আলোচনায়। সঞ্চালনায় ছিলেন দয়াল সেনগুপ্ত। রইল বাছাই প্রশ্নোত্তর। পঞ্চায়েত সমিতির দফতরে সম্প্রতি আনন্দবাজারের পাঠকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন খয়রাশোল পঞ্চায়েত সমিতির সভানেত্রী অসীমা ধীবর। এলাকার মানুষের নানা দাবি-দাওয়া, প্রাপ্তি-প্রত্যাশার বিষয় ওঠে আলোচনায়। সঞ্চালনায় ছিলেন দয়াল সেনগুপ্ত। রইল বাছাই প্রশ্নোত্তর।

খয়রাশোলে পঞ্চায়েত সমিতির সভাকক্ষে আম জনতার দরবার। —নিজস্ব চিত্র

খয়রাশোলে পঞ্চায়েত সমিতির সভাকক্ষে আম জনতার দরবার। —নিজস্ব চিত্র

শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০২:৪৮
Share: Save:

খয়রাশোলের বড়রা গ্রাম থেকে সিউড়ির দূরত্ব মেরেকেটে ৫৫ কিমি। রাস্তাও ভাল। কিন্তু এইটুকু পথ যেতে বাসের সময় লাগে তিন ঘণ্টা। তার উপরে খয়রাশোল পর্যন্ত রাস্তায় ৪৮টি স্পিড ব্রেকার রয়েছে। জনস্বার্থে সেগুলি তুলে দিতে এবং যাতায়াতের সময় কমাতে পঞ্চায়েত সমিতির পদক্ষেপ করা দরকার।

প্রদ্যুৎ সরকার, বড়রা

সভানেত্রী: এ নিয়ে বাসমালিকদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। ফসপ্রসূ করতে ফের আলোচনা করা যেতে পারে। আর স্পিড ব্রেকার তো স্থানীয় মানুষই ইচ্ছেমতো বানিয়েছেন। সচেতন তাঁদেরও হতে হবে। সকলের সুবিধার জন্য স্পিডব্রেকার সরাতে আমরা অনুরোধ করতে পারি মাত্র।

শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায় এবং ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায়ের মতো বিশিষ্ট সাহিত্যিকদের সঙ্গে খয়রাশোলের নিবিড় যোগ। শৈলজানন্দ কিছুটা চর্চিত হলেও ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায়কে নিয়ে তেমন চর্চা নেই। কিন্তু বর্তমান প্রজন্মের সবারই ওঁদের সম্বন্ধে জানা উচিত। জন্মদিন পালনের মাধ্যমে তাঁদের অবদান বা সৃষ্টি সকলের সামনে তুলে ধারায় জন্য পঞ্চায়েত সমিতি কি কিছু ভাববে?

অসীম শীল, ভাড্ডি

সভানেত্রী: দেখুন, খয়রাশোলে একমাত্র কলেজটির নামই শৈলজা-ফাল্গুনী স্মৃতি মহাবিদ্যালয়। তাঁদের সম্মান দেওয়ার জন্যই তো এমন নামকরণ। কিন্তু আপনার ভাবনা প্রশংসনীয়। আমরা অবশ্যই ওঁদের জন্মদিন পালন করব। সঙ্গে ওঁদের কাজ নিয়ে একটা ই-লাইব্রেরি বা ওয়েবসাইটও করা যেতে পারে।

খয়রাশোল বাজার এলাকায় শৌচাগারের অভাব রয়েছে। এই বাজারে প্রায় শ’দেড়েক ব্যবসায়ী। নানা প্রান্ত থেকে প্রচুর মানুষ আসেন। শৌচাগারের অভাবে অসুবিধায় পড়েন। দ্বিতীয়ত, রাতে কলকাতা থেকে খয়রাশোলের পাঁচড়া ভীমগড় স্টেশনে নেমে ব্লকের অন্য প্রান্তে পৌঁছনোর কোনও যোগাযোগ ব্যবস্থা নেই। সমিতি যদি বিষয়টি দেখে।

শান্তনু ঘোষ, খয়রাশোল

সভানেত্রী: বাজারে শৌচাগার নেই মানতে পারলাম না। মূল বাজারে না থাকলেও কাছেই শৌচাগার রয়েছে। জায়গার অভাবেই মূল বাজারে তা করা যায়নি। আপনারা জায়গা দিন, শৌচাগার হবে। দ্বিতীয় যে সমস্যার কথা বলেছেন, সেটা সত্যি। আমরা জেলায় জানিয়েছি। ট্রেনের সংযোগকারী কোনও পরিবহণ ব্যবস্থা গড়ে তোলা যায় কিনা, দেখছি।

লোকপুর ও বাবুইজোড় রাস্তার সংযোগস্থলে খররাশোলে যে দু’টি পাড়া রয়েছে, সেখান দিয়ে জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতরের পাইপলাইন গিয়েছে। কিন্তু কোনও কল নেই। তাই পরিস্রুত জল মেলেনি। প্রয়োজন নিকাশি ব্যবস্থা ঢেলে সাজানোরও।

রানু পাল, খয়রাশোল

সভানেত্রী: পিএইচ-ই কে বিষয়টি আমি জানাব। নিকাশি ব্যবস্থার কী হাল তা দেখে স্থানীয় পঞ্চায়েতকে ব্যাবস্থা নিতে বলব।

ঘন জনবসতিপূর্ণ গ্রামগুলি, ব্লক হাসপাতাল, প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র, উচ্চমাধ্যমিক স্কুল, অঙ্গনওয়াড়িকেন্দ্র— সব রয়েছে। অথচ খয়রাশোল থেকে লোকপুর রুটে যাতায়াত ব্যবস্থার হাল খুব খারাপ। সকাল বিকাল সময়মতো বাস মেলে না। এমনকী, রুটের বাসও নিয়ম মেনে চলে না। সাধারণ মানুষ, পড়ুয়া, রোগী থেকে সরকারি কর্মী সকলেই নাকাল হন। সুষ্ঠু পরিবহণ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সমিতি যদি উদ্যোগ নেয়, উপকৃত হবেন সকলে।

সঙ্গীতা পাল, পরাতিয়া

সভানেত্রী: আপনি ঠিকই বলেছেন। ওই রাস্তায় যোগাযোগ ব্যবস্থা খারাপ। আমরা পরিবহণ দফতর সূত্রে প্রথমে খোঁজ নিচ্ছি, রুটে ঠিক কতগুলি বাস চলার কথা। বাস থাকলে ভাল, না হলেও বিকল্প পরিবহণ ব্যবস্থা, যেমন টোটো বা ট্রেকার জাতীয় গাড়ি চালিয়ে পরিস্থিতি শোধরানো যায় কিনা দেখছি।

পানীয় জলের অভাব গোটা ব্লকের সমস্যা। আমাদের গ্রামের ক্ষেত্রে তা আরও ভয়াবহ। ব্লকের যে ক’টি গ্রামে ফ্লোরাইড রয়েছে, আমাদের গ্রামে তার অন্যতম। বিষের পরিমাণ ১৪.৫। দীর্ঘ দিন আগে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর পরিস্রুত পানীয় জল সরবরাহ করার জন্য পাইপলাইন বিছিয়েছে। টাইম কলও তৈরি। কিন্তু জল আসে না। বিষ জল খেয়ে হাড়ের ক্ষয়জনীত সমস্যায় ভুগছেন অনেকেই। আপনি যদি বিষয়টি দেখেন।

কল্যাণী ঘোষ, লাউবেড়িয়া

সভানেত্রী: অজয় থেকে জল তুলে তা পরিস্রুত ফ্লোরাইড কবলিত গ্রামে সরবরাহের জন্য জামরান্দ জলপ্রকল্প হয়েছে। কিন্তু পাইপ লাইন নিয়ে সমস্যা রয়েছে। সমস্যা অন্ডাল পলাস্থলী রেললাইন পার করা নিয়ে দাবি পিএইচই-র। সমস্যা মেটাতে বহুবার পিএইচই-কে বলা হয়ছে। কাজ হয়নি। আমরা নিশ্চই প্রশাসন গত ভাবে দেখব।

শালনদীর তীরবর্তী আমাদের গ্রাম। সমস্যা হল, গ্রামে যাওয়ার রাস্তা, প্রাথমিক স্কুল এবং গ্রামের একাংশ নদীতে বিলীন হতে চলেছে। দুই, তিন বছর হল একটি রিভার লিফ্টিং পাম্প বাসানো হয়েছে। অথচ তাও চালু হয়নি। একটু দেখুন।

বহ্নিজিৎ দাস, কমলপুর

সভানেত্রী: বিষয়টি জানা ছিল না। অবশ্যই গ্রামে যাব পরিস্থিতি দেখতে। তার পরে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করব। হ্যাঁ, ওই গ্রামে পাম্প চালানোর জন্য একটি উপভোক্তা কমিটি গঠিত হয়েছিল বলে জানি। কিন্তু কেন তা কার্যকর হল না, দেখছি।

খয়রাশোলের স্বাস্থ্য পরিষেবার অবস্থা অত্যন্ত খারাপ। নাকড়াকোন্দা ব্লক হাসপাতালে শিশু মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। দিন কয়েক আগে একটি শিশুকে মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ দেওয়া হয়েছে। মূল কারণ বিএমওএইচ-ই এখানে থাকেন না। ফলে গোটা ব্লক হাসপাতাল ও প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলিতে অব্যবস্থা চলছে।

ধীরাজ ঘোষ, লাউবেড়িয়া

সভানেত্রী: আমরা বিষয়টি নিয়ে সম্পূর্ণ অবগত আছি। অবগত রয়েছি বিএমওএইচ-এর ভূমিকা নিয়েও। পঞ্চায়েত সমিতির যে স্থায়ী সমিতি রয়েছে, সেখানে একটি রেজোলিউশন করে ওঁকে এই হাসপাতাল থেকে স্থানান্তরিত করার জন্য জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছে একটি চিঠি পাঠিয়েছি। আশা করি সমস্যা মিটবে।

আমাদের গ্রামের দু’টি সমস্যা। পাঁচড়া থেকে আমাদের গ্রাম পর্যন্ত রাস্তার অবস্থা খুব খরাপ। চাইব রাস্তাটি ভাল হোক। দ্বিতীয়ত, পাঁচড়া থেকে গ্রামে আসার মুখে একটি প্রহরীহীন লেভেল ক্রশিং পার হতে হয় সকলকে। বাচ্চারা স্কুলে গেলে খুব আতঙ্কে থাকি। যদি বিষয়টি দেখেন।

সন্ধ্যা পাল, বাগাশোলা

সভানেত্রী: আপনার প্রথম প্রসঙ্গে জানাই, পাঁচড়া থেকে আপনাদের গ্রাম হয়ে ময়নাডাল পর্যন্ত রাস্তাটি প্রধানমন্ত্রী সড়ক যোজনায় অনুমোদন পেয়েছে। সঙ্গে আরও একটি রাস্তাও রয়েছে। লেভেল ক্রশিংয়ের ব্যাপারটি আলোচনা করে দেখছি।

হিংলো জলাধার খয়রাশোলে অবস্থিত। কিন্তু পলি পড়ে জলাধারটির জলধারণ ক্ষমতা একেবারে কমে গিয়েছে। প্রতি বছর বর্ষায় হাজার হাজার কিউসেক জল ছাড়তে হয়। অথচ চাষের জন্য প্রয়োজনীয় সেচের জল পাওয়ার মূল ভাবনাই ধাক্কা খাচ্ছে। যদি জেলায় ও সংশ্লিষ্ট দফতরকে বলে জলাধারটিকে সংস্কার করানো গেলে ব্লকের পাঁচটি পঞ্চায়েত এলাকার চাষি উপকৃত হবেন।

রবিউল ইসলাম, কদমডাঙা

সভানেত্রী: একদম ঠিক কথা। যদিও বিষয়টি আমাদের এক্তিয়ারের বাইরে। তবে জলাধার ও সেচখাল সংস্কারের বিষয়টি জেলায় জানিয়েছি। ফের জানাব।

খয়রাশোলের স্বনির্ভর দলের সদস্য তথা মহিলা চাষিরা সংশীত ধানের বীজ উৎপাদন করছেন। ভালমানের বীজ পেতে চাষিদের আর বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন পড়়বে না, যদি এখানে এখানে একটি ‘সিড ফার্ম’ খোলা যায়।

টুম্পা চৌধুরী, লোকপুর

সভানেত্রী: উত্তম প্রস্তাব। অবশ্যই ভাবা যেতে পারে। তবে, তার আগে সংশ্লিষ্ট দফতরের সঙ্গে আলোচনা প্রয়োজন।

এখন জৈব পদ্ধতির চাষ জনপ্রিয় হচ্ছে। বাড়িতে বাড়িতে ‘নাদেপ কম্পোস্ট’ বা কেঁচো সার তৈরির জন্য ‘চেম্বার’ কি সরকারি খরচে করানো সম্ভব? তা হলে বাড়িতে বাড়িতে মহিলারাই জৈব সার তৈরি করতে পারবেন। জমিতে রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমবে।

নাসিমা বিবি, খন্নি

সভানেত্রী: দেখুন একশো দিনের কাজের প্রকল্পে জৈব সার তৈরির বিষয়ে জোর দেওয়া হচ্ছে। বিষয়টি অবশ্যই করা যেতে পারে।

• একশো দিনের কাজের সংখ্যা খয়রাশোল ব্লকে আশাব্যঞ্জক নয়। বছরে বড়জোর ৩০ দিনের কাজ মেলে। সময়মতো টাকাও পাওয়া যায় না। এ ছাড়া যে কোনও সরকারি প্রকল্পের সুযোগ পেতে কী করতে হবে, কারা পাবেন— এই বিষয়গুলি যদি প্রতিটি পঞ্চায়েতের দেওয়ালে লিখে দেওয়া হলে খুব ভাল হয়।

পিন্টু লাহা, লোকপুর

সভানেত্রী: আমরাও চাই একশো দিনের কাজের সংখ্যা বাড়ুক। কিন্তু কাজ চাইতে যে আবেদন করার কথা, সেটাই জবকার্ডধারীরা সচরাচর করেন না। আবেদন করলে কাজ না পাওয়ার কোনও কারণ নেই। হ্যা, সরকারি প্রকল্প নিয়ে সচেতন করতে অপনার পরামর্শ ভাল। বেশ কয়েকটি পঞ্চায়েত করেছে। বাকিরাও যাতে করে দেখছি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

100 days’ work Employment
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE