এ ভাবেই চালাঘরে ঢুকে পড়ে ইটবোঝাই ট্রাক। ছবি: সব্যসাচী ইসলাম
চার মাসের ছেলেকে দুধ খাইয়ে, মশারির ভিতরে শুইয়ে মা গিয়েছিলেন পাড়ার ট্যাপে জল ভরতে। মেঝেতে শুয়েছিলেন বাবা। আচমকা ইট-ভর্তি ট্রাকের ধাক্কায় বাড়ির দেওয়াল এবং চালা ভেঙে পড়ল ছেলে-বাবার উপরে। পাড়ার বাসিন্দারা ছুটে এসে দেওয়ালের মাটি সরিয়ে দু’জনকে উদ্ধার করেন। তার কিছু পরেই শিশুপুত্রের মৃত্যু হয়।
মঙ্গলবার সকালে রামপুরহাট-পারুলিয়া রাজ্য সড়কের উপরে রামপুরহাট শহরের চামড়াগুদাম মোড় পেরিয়ে ৮ নম্বর ওয়ার্ডে এই দুর্ঘটনাটি ঘটে। মৃত শিশুর নাম নয়ন দাস। ঘটনায় জখম হয়েছেন নয়নের বাবা বাম দাস, জেঠতুতো ভাই দীপ দাস এবং জেঠিমা আশা দাস। আহতেরা রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এ দিকে, ঘটনার পরেই স্থানীয় বাসিন্দারা মুর্শিদাবাদের বহরমপুর থেকে আসা ইটভর্তি ট্রাকের মালিক, ট্রাকচালক এবং খালাসিকে আটকে মারধর করে পুলিশের হাতে তুলে দেন। দেড় ঘণ্টা পথ অবরোধও করা হয়। পুলিশ তিন জনকেই আটক করেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা বাম দাস, দশরথ দাসদের রামপুরহাট পুরসভার উদ্যোগে সকলের জন্য গৃহ নির্মাণ প্রকল্পে বাড়ি হলেও তা ফাঁকা মাঠের মধ্যে হওয়ার জন্য রামপুরহাট-পারুলিয়া রাজ্য সড়কের ধারে খড়ের চালের মাটির ছিটেবেড়ার ঘরে পরিবার নিয়ে থাকতেন। পেশায় মার্বেল মিস্ত্রি বাম দাসের স্ত্রী মুন্নি জানান, পৌনে সাতটা নাগাদ পাড়ার ট্যাপকলে জল ভরতে আড়াই বছরের ছেলে এবং শাশুড়িকে সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন। তার আগে চার মাসের ছেলে নয়নকে দুধ খাইয়ে, মশারি টাঙিয়ে দিয়ে এসেছিলেন। পাশেই শুয়েছিলেন বাম দাস। তার পরেই ওই দুর্ঘটনা।
স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, ট্রাকের চালক বসেছিলেন। মালিক নিজেই গাড়ি চালাচ্ছিলেন। অবরোধে থাকা বাসিন্দাদের কারও অভিযোগ, ‘‘মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানোর ফলে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার ধারের বাড়িতে ধাক্কা মারে।’’ আরও অভিযোগ, রামপুরহাট-পারুলিয়া রাস্তার উপরে পুলিশের মদতে ওভারলোড গাড়ি যাতায়াত করে। সেই গাড়ি চলাচল বন্ধ করার দাবিতেই এ দিন রাস্তা অবরোধ করা হয়। রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ দেখানো হয়। রাস্তা অবরোধের জেরে সাতসকালে ভোগান্তির মধ্যে পড়েন মাড়গ্রাম, দখলবাটি, বিষ্ণুপুর, বশোয়া এবং মুর্শিদাবাদ জেলার পারুলিয়া অঞ্চলের নিত্যযাত্রীরা। ঘটনাস্থলে রামপুরহাট থানার আইসি এসে ওভারলোড গাড়ি চলাচল বন্ধ করার আশ্বাস দিলে অবরোধ তুলে নেয় আন্দোলনকারীরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy