ছবি: সব্যসাচী ইসলাম
পাঁচটা প্রাণের বিনিময়ে অন্ধকার জাতীয় সড়কের দুর্ঘটনাস্থলে আলো জ্বলল মঙ্গলবার সন্ধ্যাতেই। গতি কমাতে বসল গার্ডরেল। যান নিয়ন্ত্রণে দেখা গেল দুই সিভিক ভলান্টিয়ারকেও।
সোমবার সন্ধ্যায় রানিগঞ্জ – মোড়গ্রাম ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কের কাবিলপুর মোড়ে দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় পাঁচজনের। জখম হন ১৬জন। তাঁদের রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানোর পরে আটজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় রাতেই বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করানো হয়। সোমবারের ঘটনায় মৃতদের তিনজনের পরিচয় জানা গিয়েছিল ঘটনার পরেই বাকি দু’জনের পরিচয় জানা যায় মঙ্গলবার। তাঁরা হলেন, আবুল বাসার (৫৭) ও তাঁর ছেলে উমর ফারুক (১০)। এঁদের বাড়ি ঝাড়খণ্ডের মহেষপুর থানার পলসাতে।
জাতীয় সড়কে বারবার এই জায়গায় দুর্ঘটনা ঘটলেও এতদিন প্রশাসনের কোনও হেলদোল ছিল না বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। এই ঘটনার পরেই কার্যত নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। মঙ্গলবার সকালে দুর্ঘটনার জায়গায় দাঁড়িয়ে থেকে অস্থায়ী আলো লাগানোর ব্যবস্থা করেন রামপুরহাটের এসডিপিও সৌম্যজিৎ বড়ুয়া। আলো যাতে রাস্তার উপরে ছড়ায় তাই একটি পূর্ণ বয়স্ক শিশু গাছ কেটে কিছুটা দূরে আমের চারাও বসানো হয়। বাসিন্দারা পুলিশ আধিকারিকের কাছে দুর্ঘটনা এড়াতে কয়েকটি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান। তারমধ্যে বাসস্ট্যাণ্ডে হাই মাস্ট লাইটের ব্যবস্থা, স্পিড চেকিং বোর্ড, ব্লিঙ্কার লাগানো ডিভাইডার, যান নিয়ন্ত্রণে স্থায়ী ব্যবস্থা, রাস্তার দু’ধারে রিফ্লেক্টর, সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ বোর্ড, জাতীয় সড়কের উপর ছোট-বড় খানাখন্দ সংস্কার ও সড়কের ধারে অবৈধ ভাবে মাটি, আবর্জনা ফেলা বন্ধ করার পাশাপাশি ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কের মতো গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় পাকাপাকিভাবে আলোর ব্যবস্থা করার বিষয়ে পুলিশ আধিকারিকের সঙ্গে এলাকাবাসীর আলোচনা হয়। বীরভূমের পুলিশ সুপার শ্যাম সিংহ বলেন, ‘‘বেশ কিছু সমস্যার কথা আমাদের নজরে এসেছে। জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সেগুলির সমাধান করা হবে।’’
যদিও এলাকাবাসীর অভিযোগ, দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়ার পরে পুলিশ প্রশাসন দিন কয়েকের জন্য কিছু অস্থায়ী ব্যবস্থা নিলেও স্থায়ী সমাধান কখনও হয় না। সরকারি নিয়ম, বিভিন্ন দফতরের বেড়াজালে হারিয়ে যায় মূল সমস্যা। সোমবার সন্ধ্যার দুর্ঘটনা ঘটতোই না যদি এক বছর আগে ওই জায়গায় দুর্ঘটনায় চারজনের মৃত্যুর পরে প্রশাসন অন্ধকার জাতীয় সড়কে যান নিয়ন্ত্রণ, আলোর স্থায়ী ব্যবস্থা করত। সেবারও দুর্ঘটনার পরে এক সপ্তাহের জন্য দু’জন সিভিক ভলান্টিয়ারকে বিনোদপুর-কাবিলপুর মোড়ে যান নিয়ন্ত্রণের জন্য দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছিল। তারপরে তাঁদের তুলে নেওয়া হয়। আলোর ব্যবস্থা করা হয়নি। এ দিন বিনোদপুর ও কাবিলপুর গ্রামের বাসিন্দারা জানান জাতীয় সড়কের উপর প্রায়ই প্রাণহানির মতো দুর্ঘটনা ঘটে। মাস তিনেক আগে একজন ভবঘুরের মৃত্যু হয় দ্রুতগতির গাড়ির ধাক্কায়।
বিনোদপুর গ্রামের বাসিন্দা আমিরুল ইসলাম, সামিউল ইসলাম, রকি শেখরা জানান, জাতীয় সড়কের ধারে দুই প্রান্তে কাবিলপুর ও বিনোদপুর বাসস্ট্যাণ্ডের মাঝে চার মাথা মোড়। এখান দিয়ে কাবিলপুর, বিনোদপুর, তিলাই, পুড়াপাড়া এই চারটি গ্রামের বাসিন্দারা যাতায়াত করেন। বাসস্ট্যাণ্ড লাগোয়া বিনোদপুর গ্রামে প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং জুনিয়র হাইস্কুল আছে। চারটি গ্রামের পড়ুয়ারা স্থানীয় প্রতাপপুর উচ্চ বিদ্যালয় এবং রামপুরহাটের বিভিন্ন হাইস্কুলে পড়াশোনা করতে যায় এখান দিয়েই। গোটা জাতীয় সড়কে তো আলো নেই বটেই, এরকম একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়েই আলো বা যান নিয়ন্ত্রণের কোনও ব্যবস্থা নেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy