ময়ূরেশ্বরের কোট গ্রামে তৃণমূলের প্রচার সভায় তোলা নিজস্ব চিত্র।
লোকসভা ভোটের সময়ে এমনই মশ্করা শোনা গিয়েছিল তাঁর মুখে। বিধানসভা ভোটের প্রথম দফার দিনে প্রকাশ্য সভায় সেই কথাই ফের পাড়লেন অনুব্রত। সেই মশ্করা করে আদতে কী বলতে চাইছেন অনুব্রত, তা নিয়ে গড়াল বিতর্কের জলও।
সোমবার ময়ূরেশ্বরের তৃণমূল প্রার্থী অভিজিৎ রায়ের সমর্থনে কোট গ্রাম লাগোয়া এলাকায় নির্বাচনী সভা ছিল তৃণমূলের। সেখানে অনুব্রত বলেন, ‘‘জটিলের (ময়ূরেশ্বরের তৃণমূল নেতা জটিল মণ্ডল) সঙ্গে কথা হয়ে গিয়েছে ২ নম্বর ব্লক থেকে ও ২০ হাজার ভোটে লিড দেবে। ১ নম্বর ব্লককে ৩৫ হাজারের লিড দিতে হবে। গুড়-জল-বাতাসা দিয়ে কি কৌশলে ভোট করতে হয় তা আপনারা জানেন। সেই কৌশলেই ভোট করবেন।’’ মঞ্চে তখন উপস্থিত তৃণমূলের মহাসচিব তথা বিদায়ী মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। পার্থবাবুকে পরে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি কিছু মন্তব্য করতে চাননি।
তবে সমালোচনায় করতে ছাড়ছে না বিরোধীরা। উঠছে নির্বাচনী বিধিভঙ্গের অভিযোগও। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রামচন্দ্র ডোমের মত, ‘‘গুড়-জল বলতে উনি আসলে ভোট লুঠের কথাই বলতে চেয়েছেন।’’ একই ইঙ্গিত খুঁজে পাচ্ছেন বিজেপি-র জেলা সভাপতি রামকৃষ্ণ রায়ও। তিনি বলেন, ‘‘একই অস্ত্র বারবার ব্যবহারে এক সময় ভোঁতা হয়ে যায়। তখন সেই অস্ত্র দিয়ে কাজ করতে গেলে নিজের হাত কাটার আশঙ্কা থাকে। তৃণমূলেরও সেই হাল হবে।’’ সিপিএমের এক জেলা নেতার কথায়, ‘‘বাম-কংগ্রেসের বোঝাপড়া দেখে আসলে ভয় পেয়ে গিয়েছেন কেষ্ট (অনুব্রত )। তাই ভোট লুঠের দাওয়াই দিয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চাইছেন!’’
অনেকেরই অভিযোগ, ২০১৪-র লোকসভা ভোটে বীরভূম ‘নীরব সন্ত্রাস’-এর ম়়ডেল নিয়েছিল। কোনও রকম হিংসা, কোনও রকম ‘বোম মারামারি’ ছাড়াই যাবতীয় ভোট জমা হয়েছিল তৃণমূলের বাক্সে। কী ভাবে? লাভপুর, নানুর, ইলামবাজার কিংবা বোলপুরের বিস্তীর্ণ তল্লাটে বহু ভোটার ভোটই দিতে বেরোতে পারেননি শাসক দলের কর্মীদের ‘তৎপরতায়’। বিরোধী সমর্থক পরিবারগুলিকে চিহ্নিত করে ভোটের আগের দিন বা ভোটের দিন সকালেই বলে দেওয়া হয়েছিল, ‘আপনাদের আর ভোট দিতে যাওয়ার দরকার নেই’। সেই শাসানি উপেক্ষা করেও হাতে গোনা যে ক’জন বেরিয়েছিলেন, তাঁদের আর বুথ পর্যন্ত পৌঁছনো হয়নি। মাঝপথেই তৃণমূলের লোকজনেরা ‘হেফাজতে’ নিয়ে তাঁদের বাড়ি ফেরত পাঠায়।
এই আবহেই তাৎপর্যপূর্ণ হয়েছে বীরভূম জেলা তৃণমূলের সভাপতি অনব্রত মণ্ডলের মন্তব্য। তবে কি লোকসভার আদলে বিধানসভা ভোটও করাতে চাইছেন কেষ্ট? বিরোধী দলের নেতাকর্মীরা তেমনই ইঙ্গিত দেখছেন। অনুব্রতর এ দিনের বক্তব্যে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বেরও আঁচও পেয়েছেন কেউ কেউ। টিকিট না পেয়ে প্রার্থী ঘোষণার পরেই ষাটপলসায় দলীয় কার্যালয়ে অনুগামীদের দিয়ে বিক্ষোভ সঙ্ঘটিত করার অভিযোগ উঠেছিল অনুব্রতর একদা স্নেহধন্য জেলা পরিষদের খাদ্য কর্মাধ্যক্ষ জটিল মণ্ডলের বিরুদ্ধে। ঘনিষ্ঠমহলে নির্বাচন প্রক্রিয়া থেকে সরে দাঁড়ানো, এমনকি নির্দল প্রার্থী দাঁড় করানোর চেষ্টার কথাও শোনা যাচ্ছিল অনেকের মুখে। সে কথা অবশ্য কখনই মানেননি জটিল। এরপরে তাঁকে মিটিং-মিছিলে দেখা গেলেও অর্ন্তঘাতের আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন না তৃণমূলের একাংশ। অনুব্রত অবশ্য সব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁর দাবি, ‘‘দলে কোথাও কোনও গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নেই। সবই সংবাদমাধ্যমের একাংশের তৈরি করা জানিস।’’
‘গুড়-জল’ শব্দবন্ধকে তিনি আক্ষরিক অর্থেই গুর-জল বলতে চেয়েছেন বলে দাবিও করেছেন। বিরোধীদের দাবি উড়িয়ে অনুব্রতর পাল্টা ব্যাখ্যা, ‘‘গরমের দিনে কর্মীরা যাতে পরিশ্রান্ত হয়ে না পড়েন, সেই জন্যই গুড়-জল সঙ্গে রাখার কথা বলেছি। প্রয়োজনে পুলিশ-কেন্দ্রীয় বাহিনীকেও দিতে বলেছি। কারণ ওরাও তো ভোটের ডিউটি করবেন। হাজার হোক আমরা তো বাঙালি। আতিথেয়তাই আমাদের ঐতিহ্য।’’
তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, এ দিনের সভায় ২০ হাজারেরও বেশি লোক হয়েছিল। পুলিশের হিসাবে সংখ্যাটা অর্ধেক। বিরোধীদের মতে, লোক হয়েছিল মেরেকেটে হাজার পাঁচেক। এ দিনের সভায় প্রার্থী ছাড়াও অন্যদের মধ্যে ছিলেন বিদায়ী মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, অভিজিত সিংহ প্রমুখ। অভিজিৎবাবু তাঁর বক্তব্যে বিজেপি-র প্রার্থী লকেট চট্টোপাধ্যায়কে কটাক্ষ করে বলেন, ‘‘উনি প্রচারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের সম্পর্কে কুৎসা করে বেড়াচ্ছেন তারই ‘সবুজ সাথী’ প্রকল্পের সাইকেলে চড়ে। সেই অর্থে উনি আমাদের দলেরই প্রচার করছেন।’’ তা শুনে ময়ূরেশ্বরের বিজেপি প্রার্থী লকেটের প্রতিক্রিয়া, ‘‘আসলে কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়নের টাকায় ওই সাইকেল দেওয়া হয়েছে। তাই রাজ্য নয়, কেন্দ্রীয় সরকারের হয়েই প্রচার করেছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy