Advertisement
০৫ মে ২০২৪

খেলো ইন্ডিয়ায় সাফল্য বীরভূমে

সর্বশিক্ষা মিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, চলতি মাসের ২৩ তারিখ জেলায় আসছেন পাঁচ সদস্যের কমিটি। তাঁদের মধ্যে তিন জন ভিন দেশি সদস্য থাকবেন।

কৌশল: চলছে অনুশীলন। দুবরাজপুরে। নিজস্ব চিত্র

কৌশল: চলছে অনুশীলন। দুবরাজপুরে। নিজস্ব চিত্র

দয়াল সেনগুপ্ত
সিউড়ি শেষ আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০১৮ ০১:৪৯
Share: Save:

শারীরিক, মানসিক প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও ‘খেলো ইন্ডিয়া’য় জেলার পড়ুয়াদের রাজ্যস্তরে সাফল্য নজর কাড়ল। উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হচ্ছে ‘ইউনিফায়েড স্পোর্টস’-এ। তারই পুরস্কার পেতে চলেছে জেলা। দু’টি ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সাফল্যের জন্য বীরভূমকে মডেল জেলা করার ভাবনা নিয়েছে স্পেশ্যাল অলিম্পিক কমিটি।

সর্বশিক্ষা মিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, চলতি মাসের ২৩ তারিখ জেলায় আসছেন পাঁচ সদস্যের কমিটি। তাঁদের মধ্যে তিন জন ভিন দেশি সদস্য থাকবেন। সর্বশিক্ষা মিশনের জেলা প্রকল্প আধিকারিক বাপ্পা গোস্বামী বলেন, ‘‘সম্প্রতি স্পেশ্যাল অলিম্পিক কমিটি থেকে চিঠি পেয়েছি। কী ভাবে কাজ করছে বীরভূম, সেটা খতিয়ে দেখার পাশাপাশি ২৪ তারিখ জেলাশাসক পি মোহন গাঁধী ও সর্বশিক্ষা মিশনের আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করবেন।’’

বীরভূম কেন?

সর্বশিক্ষা মিশন ও জেলা শিক্ষা দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, আলাদা স্কুলে নয়। স্কুলে স্বাভাবিক পড়ুয়াদের সঙ্গে একত্রে পড়াশোনা করবে ও শারীরিক, মানসিক প্রতিবন্ধী পড়ুয়ারা। প্রয়োজনে উপযুক্ত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শারীরিক ও মানসিক বিকাশে পিছিয়ে থাকা পড়ুয়াটিকে স্বাভাবিক পড়ুয়াদের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়া হবে। দু’দশক ধরে সরকারি ভাবে স্বীকৃত এই ধারনা। ২০০৭ সালে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন পড়ুয়াদের খেলাধুলোয় একই ভাবে যোগদানের কর্মসূচি গৃহিত হয়। ২০০৮ সাল থেকে যে উদ্যোগের নোডাল এজেন্সি স্পেশ্যাল অলিম্পিক ভারত। প্রথম থেকেই স্পেশ্যাল অলিম্পিক আয়োজিত রাজ্য ও জাতীয় স্তরের প্রতিযোগিতায় বহু স্বর্ণ, রৌপ্য ও ব্রোঞ্জ পদক পেয়েছে বীরভূমের বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন প্রতিযোগীরা। জেলার প্রতিযোগীরা সেই সাফল্য ধরে রেখেছে খেলো ইন্ডিয়া শীর্ষক ক্রীড়া আসরেও।

প্রশাসন জানাচ্ছে, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন স্কুল পড়ুয়াদের আরও বেশি করে খেলাধুলায় উৎসাহী করতে উদ্যোগী হয়েছে সরকার। কেন্দ্রীয় মিনিস্ট্রি অফ ইউথ অ্যান্ড স্পোর্টস অ্যাফেয়ার্স-এর উদ্যোগে ‘খেলো ইন্ডিয়া পার্সন উইথ ডিজঅ্যাবিলিটিস’ শীর্ষক ক্রীড়ার আসরে যথারীতি সফল বীরভূমের প্রতিযোগীরা। সর্বশিক্ষা মিশনের ব্যবস্থাপনায় হলেও প্রতিযোগিতার আয়োজক স্পেশ্যাল অলিম্পিক ভারত। গত মাসের শেষ সপ্তাহে ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পাশাপাশি শর্টপাটে ১০০ মিটার দৌড়ে একটি রুপো, বোঁচে বল ও অন্য খেলায় ২০টিরও বেশ পদক পেয়েছে জেলা। উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, রাজ্যস্তরে সফলরা জাতীয় স্তরের প্রতিযোগিতায় স্থান তো পাবেই। ওদের মধ্যে পাঁচ জন রয়েছে যারা স্পেশ্যাল অলিম্পিক আয়োজিত আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় যোগদানের যোগ্যতা অর্জন করেছে। বীরভূমকে বাছার অন্যতম কারণ এটাই।

এ ছাড়া জেলায় ইউনিফায়েড স্পোর্টস-এ উল্লেখযোগ্য কাজ হয়েছে। সর্বশিক্ষা মিশন জানাচ্ছে, ইউনিফায়েড স্পোর্টস কথাটির অর্থ হল— বিশেষ চাহিদা সম্পন্নদের আলাদা করে দেওয়া নয়। স্বাভাবিক পড়ুয়াদের সঙ্গেই একসঙ্গে খেলাধুলোর সুযোগ করে দেওয়া। শর্ত একটাই, সমান শারীরিক সক্ষমতা ও বয়স এক হতে হবে। যেমন, এক জন স্বাভাবিক পড়ুয়াকে দৌড়ে টক্কর দিতেই পারে সমবয়সী এক জন মূক অথবা বধির পড়ুয়া। উদ্দেশ্য দুটি। এক, খেলাধুলোর মাধ্যমে সামাজিক অন্তর্ভুক্তি। দুই, মানসিক ও শারীরিক প্রতিবন্ধকতার জন্য হীনমন্যতা ঘোচানো।

বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন পড়ুয়াদের জেলা সমন্বয়কারী শুকদেব চক্রবর্তী বলছেন, ‘‘সেই লক্ষ্যে জেলার ৩২টি চক্রের মধ্যে ১৬টি চক্রে বেশ কয়েক মাস থেকে বিশেষ ধরনের
অনুষঙ্গ সহ রিসোর্স রুম খোলা হয়েছে। জিমবল, কোণ, কাউন্টিং ম্যাট, রিং-এর মতো নানা ধরনের আধুনিক উপকরণ সেখানে রয়েছে। রয়েছেন দু’জন করে প্রশিক্ষক। তাঁরাই উপকরণের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন উৎসাহী পড়ুয়াদের।’’ তাতে স্বাভাবিক পড়ুয়ারা তো বটেই, শারীরিক ও মানসিক বিকাশে পিছিয়ে থাকা পড়ুয়াদেরও শারীরিক সক্ষমতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। স্পেশ্যাল অলিম্পিক কমিটি এগুলোই দেখবেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Khelo India Birbhum
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE