আকর্ষণ: হারাতে বসেছে এই ছবিটাই। নানুরের গ্রামে। ছবি: কল্যাণ আচার্য
বছর কুড়ি আগেও শীতের সময়ে গ্রামের খালবিলে পরিযায়ী পাখিদের মেলা বসে যেত। কমতে কমতে সেই সংখ্যা এখন হাতে গোনা। কোথাও আবার খালবিলের ঠিকানাই হারিয়ে ফেলেছে পরিযায়ী পাখীর দল। তাই মন খারাপ পক্ষীপ্রেমীদের।
প্রশাসন এবং স্থানীয় সূত্রেই জানা গিয়েছে, বক্রেশ্বরের নীলনির্জন, তিলপাড়া জলাধারের মতো এক সময় গ্রামগঞ্জের জলাশয়গুলিতেও সুদূর সাইবেরিয়া, মাঙ্গোলিয়া, তিব্বত থেকে উড়ে আসত বিভিন্ন প্রজাতির পরিযায়ী পাখি। থাকত দেশি বিভিন্ন পাখিও। ওই সব জলাশয়গুলির মধ্যে অন্যতম ছিল লাভপুরের লাঙলহাটা, জামনা, ময়ূরেশ্বরের কামারহাটি প্রভৃতি বিল। ময়ূরেশ্বর থানা এলাকারই ঢেকার রাজা রামজীবনের খনন করা রামসায়র, রানীভবানী, বুড়োদিঘি, চেঁচুড়েদিঘি, সরাগ সহ বিভিন্ন জলাশয়ে দেখা মিলত পরিযায়ী পাখিদের। কিন্তু, এখন আর ওই সব জলাশয়ে পরিযায়ী পাখিরা আসে না বললেই চলে। কোথাও কোথাও পাখিরা এলেও তার সংখ্যা খুবই নগন্য।
এলাকার বাসিন্দাদের তাই ওই সব পাখিদের জন্য মন কেমন করে। নানুরের আলিগ্রামের বানু মেটে, কীর্ণাহারের শ্যামল সাহারা জানান, এক সময় ঝাঁকে ঝাঁকে গ্রামের বড়ো বড়ো জলাশয়ে উড়ে আসত পরিযায়ী পাখির দল। তাদের কূজনে ভরে থাকত গ্রাম। শীতের মরসুমে ওই সব পাখিরা গ্রামের শোভাবর্ধণ করত।
বাইরের গ্রাম থেকেও লোকজন আসত পাখি দেখতে। এখন আর পাখিরা আসে না বললেই চলে। পাখিদের কথা বলতেই নস্টালজিক হয়ে পড়েন ঢেকা গ্রামের দুকড়ি মণ্ডল, স্বাধীন মণ্ডল, কার্তিক মণ্ডলেরা। তাঁরা বলছেন, ‘‘ছোটোবেলায় জলাশয়ের পাড়ে বসে ওই পাখিদের দেখতে দেখতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কেটে যেত। তারপর শীত শেষে তারা যখন ফিরে যেত, তখন খুব মনখারাপ করত। মনে হত যেন অতিথিরা বাড়ি ফিরে গিয়েছে। ফের সারা বছর তাদের ফেরার প্রতিক্ষায় দিন কাটত আমাদের।’’
পাখিদের আনাগোনা কেন কমে গেল?
স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, এক সময় ওই সব জলাশয় ঘিরে থাকত প্রচুর গাছগাছালি। বর্তমানে উধাও হয়ে গিয়েছে ওই সব গাছপালা। সে সময় জলাশয়েও থাকত পদ্ম, শাপলা, শালুকের মতো বহু জলজ উদ্ভিদ। ব্যাপক হারে মাছ চাষের ফলে জলাশয় থেকে হারিয়ে গিয়েছে ওই সব জলজ উদ্ভিদও। মাছ এবং কৃষিকাজের জন্য জলাশয়গুলিতে প্রায় সব সময় মানুষজনের ভিড় লেগেই রয়েছে। এর ফলে হারিয়ে গিয়েছে নির্জনতা। পাখিরা তাই নির্জনতার খোঁজে ঠিকানা বদলে ফেলেছে।
পক্ষীপ্রেমী উর্মিলা গঙ্গোপাধ্যায় মনে করেন, ‘‘নির্জনতা একটা ব্যাপার বটেই। খাদ্যাভাব এবং চোরা শিকারিদের উৎপাতও পরিযায়ী পাখিদের মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার পিছনে অন্যতম কারণ।’’ তাঁর মতে, পাখিদের মধ্যেও আমিষ এবং নিরামিষভোজী উভয় প্রজাতি রয়েছে। আমিষভোজীরা ছোট ছোট মাছ, সাপ, ব্যাঙ, গুগলি খায়। কৃষি এবং মাছ চাষের ক্ষেত্রে ব্যাপক কীটনাশক ব্যবহারের ফলে পরিযায়ী পাখিদের ওই সব খাবার হারিয়ে গিয়েছে। জলজ উদ্ভিদ হারিয়ে যাওয়ায় নিরমিষ ভোজী পাখিদেরও খাদ্য সঙ্কট দেখা দিয়েছে। জেলা বনাধিকারিক হরিকৃষ্ণন বলছেন, ‘‘আমরা শুধু চোরাশিকারীদের নিয়ে ব্যবস্থা নিতে পারি। তাও অভিযোগ পেলে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy