Advertisement
১১ মে ২০২৪
Coronavirus

জেলায় হোম কোয়রান্টিনে এখন ৫২১৮

জেলার কত মানুষ গত ১৫ দিনে দেশের বাইরে থেকে এবং করোনা সংক্রমিত রাজ্যগুলি থেকে ফিরছেন। তাঁদের ঠিক ভাবে চিহ্নিত করা গিয়েছে কিনা, সেটা নিয়ে সংশয় ছিল।

রামপুরহাটে কোয়ারেন্টিনে থাকা ভিন রাজ্য থেকে আসা যাত্রীদের ক্ষোভ

রামপুরহাটে কোয়ারেন্টিনে থাকা ভিন রাজ্য থেকে আসা যাত্রীদের ক্ষোভ

নিজস্ব সংবাদদাতা 
সিউড়ি শেষ আপডেট: ২৫ মার্চ ২০২০ ০২:৩১
Share: Save:

উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে শুধু জেলাতেই 'হোম কোয়রান্টিনে' থাকা লোকের সংখ্যা পাঁচ হাজার ছাড়াল। দু'দিন আগেও যে সংখ্যাটা ছিল ১৪০০ জন। মঙ্গলবার বিকেলে জেলা পুলিশ সুপার শ্যাম সিংহের দেওয়া তথ্য তেমনই বলছে। পুলিশ সুপার জানান, জেলায় ৫২১৮ জনের মধ্যে হোম কোয়রান্টিনে রয়েছেন ৫১৭৯ জন। বাকি ৩৯ জনকে রাখা হয়েছে সরকারি কোয়রান্টিন সেন্টারগুলিতে।

জেলার কত মানুষ গত ১৫ দিনে দেশের বাইরে থেকে এবং করোনা সংক্রমিত রাজ্যগুলি থেকে ফিরছেন। তাঁদের ঠিক ভাবে চিহ্নিত করা গিয়েছে কিনা, সেটা নিয়ে সংশয় ছিল। কারণ, করোনা সংক্রমণ রুখতে এটা জরুরি। বীরভূমের জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু জানান, জেলা পুলিশের সঙ্গে স্বাস্থ্য দফতরের সমন্বয়ের জন্য জেলা প্রশাসন একটি ডেটাবেস তৈরি করেছে। যাতে দেশের বাইরে বা দেশের অন্য রাজ্য থেকে ফিরছেন এমন প্রত্যেককে চিহ্নিত করা, স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও তাঁদের উপরে নজরদারির কাজটা সফল ভাবে করা যাচ্ছে।

পুলিশ ও স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, করোনা পরিস্থিতির মোকাবিলায় জেলায় কর্মরত ছয় হাজারের বেশি সিভিক ভলান্টিয়ার এবং নীচুতলায় স্বাস্থ্য পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ার জন্য প্রায় প্রতিটি সংসদ ধরে আশাকর্মীরা রয়েছেন। তৃণমূল স্তরে তথ্য সংগ্রহের কাজে তাঁদেরই লাগানো হয়েছে। তাতে খবর পাওয়ার পরই দ্রুত পরবর্তী পদক্ষেপ করা গিয়েছে।

জেলার পুলিশ সুপার জানাচ্ছেন, প্রত্যেক দিন প্রতিটি থানা এলাকা থেকে রিপোর্ট চাওয়া হচ্ছে। চিহ্নিতদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করিয়ে ১৪ দিনের জন্য হোম কোয়রান্টিনে রাখা হচ্ছে। প্রতিদিন খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। তার পরে প্রয়োজন বিশেষে সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে কোয়রান্টিন সেন্টার বা হাসপাতালে স্থানান্তরিত করিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তাঁদের বাড়ির লোকজনকেও নজরদারিতে রাখা হচ্ছে। উপসর্গ দেখা না দিলে নজরদারি আপাতত সেখানেই শেষ।

পুলিশ সুপার আরও জানাচ্ছেন, গত ১৫ দিনে বিদেশ থেকে ফিরেছেন ৭৫ জন। তাঁদের উপরে নজরদারি আরও বেশি। বীরভূম স্বাস্থ্য জেলার সিএমওএইচ হিমাদ্রি আড়ি বলছেন, "দুটি বিভাগের সমন্বয়ে পাড়ায় পাড়ায় যে ভাবে নজর রাখা হচ্ছে, সেটা অভূতপূর্ব। প্রত্যেকের স্বাস্থ্য পরীক্ষা হয়েছে।"

এ দিকে, শুধু কোয়রান্টিনের সংখ্যা নয়, লাফিয়ে বাড়ছে আইসোলেশনে থাকা রোগীর সংখ্যাও। রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, সিউড়ি জেলা হাসপাতাল এবং বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে আইসোলেশনে থাকা মোট রোগীর সংখ্যা ৩৬ জন। তবে এখনও কারও দেহরস পরীক্ষা করানোর প্রয়োজন হয়নি। আগে সিউড়ি জেলা হাসপাতালে ৫০ জনের কোয়রান্টিন সেন্টার করা হয়েছিল। রোগীর সংখ্যা বাড়ায় সেটাকেই আইসোলেশন ওয়ার্ড করা হয়েছে। সেখানেই ভর্তি রয়েছেন ২৬ জন রোগী।

জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, প্রতিটি ব্লকে অন্তত একটি করে কোয়রান্টিন সেন্টার করা হয়েছে। কোয়রান্টিন সেন্টার আরও বাড়ানোর প্রস্তুতিও চলছে। তবে ব্লকে ব্লকে তৈরি হওয়া কোয়রান্টিন সেন্টারগুলির পরিকাঠামো নিয়ে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। সোমবার মুম্বই থেকে দুর্গাপুর বিমানবন্দরে নামা দুবরাজপুরের এক যুবকের অভিজ্ঞতা অন্তত সে কথাই বলছে। ওই যুবকের অভিযোগ, "বিমানবন্দরে 'থার্মাল স্ত্রিনিং' হওয়ার পরে বাড়ি ফিরে সচেতন নাগরিক হিসেবে প্রথমেই দুবরাজপুর থানায় রিপোর্ট করি। তার পরে সিউড়ি জেলা হাসপাতালে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করিয়ে সিউড়ির এফসিআই গুদামে তৈরি কোয়রান্টিন সেন্টারে রাখা হয়। সেখানে অন্তত ৬০ জনকে গাদাগাদি করে কয়েকটি খাটে রাখা হয়েছিল। জলের সমস্যা ছিল। কোনও সাবান বা স্যানিটাইজার ছিল না। সেন্টারে স্বাস্থ্য পরীক্ষাও আর হয়নি।"

সোমবার রামপুরহাটেও এই অভিযোগ সামনে আসে। সেক্ষেত্রে সংশয়, যদি সত্যিই কেউ কোভিড-১৯ এর বাহক হয়ে থাকেন, তা হলে তো সুস্থ লোকও এখানে করোনা আক্রান্ত হয়ে পড়বেন। সেটা কেন প্রশাসন দেখবে না। ওই যুবকের কথায়, "নরক যন্ত্রণা কাটিয়ে ১৪ দিন ঘরবন্দি থাকব, এমন মুচলেকা দিয়ে মঙ্গলবার দুপুরে বাড়ি ফিরেছি।"

সিএমওএইচ স্বাস্থ্য পরীক্ষা না-করানোর অভিযোগ মানেননি। পুলিশ সুপার বলছেন, "বাড়ির সব সুবিধা তো মিলবে না। তবে যে অভিযোগ উঠে আসছে প্রশাসনের তরফে তার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।"

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE