Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus

তরুণীর মৃত্যু ঘিরে প্রশ্ন

বিষ্ণুপুর হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত সুপার তথা ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞ তড়িৎকান্তি পাল জানান, মৃতার পরিবার তাঁকে জানিয়েছে, দীর্ঘদিন ধরেই মেয়েটি শ্বাসকষ্টে ভুগতেন।

ময়না-তদন্তে যাচ্ছেন ডাক্তারেরা। ছবি: অভিজিৎ অধিকারী

ময়না-তদন্তে যাচ্ছেন ডাক্তারেরা। ছবি: অভিজিৎ অধিকারী

নিজস্ব সংবাদদাতা
বাঁকুড়া ও বিষ্ণুপুর শেষ আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০২০ ০৩:৫৪
Share: Save:

জ্বর, গলা ব্যথা ও শ্বাসকষ্টে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালের পথে এক তরুণীর মৃত্যুর ঘটনাকে ঘিরে এক গুচ্ছ প্রশ্ন উঠেছে বাঁকুড়ার কোতুলপুরে। বুধবার রাতে বছর সতেরোর ওই তরুণীর মৃত্যু হয়। বৃহস্পতিবার দেহের ময়না-তদন্ত করে পরিবারের হাতে দেওয়া হয়।

বিষ্ণুপুর হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত সুপার তথা ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞ তড়িৎকান্তি পাল জানান, মৃতার পরিবার তাঁকে জানিয়েছে, দীর্ঘদিন ধরেই মেয়েটি শ্বাসকষ্টে ভুগতেন। মাঝে মধ্যে জ্বরও আসত। তিনি বলেন, “ময়না-তদন্তে জানা গিয়েছে, ওই তরুণীর যকৃৎ (লিভার) অত্যন্ত বড় হয়ে যাওয়া ও হাঁপানির কারণেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে।’’ এ নিয়ে বাসিন্দাদের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই বলে জানাচ্ছেন স্বাস্থ্য আধিকারিকেরা।

তবে ওই তরুণীর অসুস্থতার সঙ্গে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের উপসর্গের মিল থাকায় বেশ কিছু প্রশ্ন উঠেছে। বিভিন্ন মহল থেকে প্রশ্ন উঠেছে, কেন লালা-রস সংগ্রহ করে পরীক্ষা করতে পাঠানো হল না? বিষ্ণুপুর স্বাস্থ্য জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক জগন্নাথ সরকার বলেন, “মৃতের শরীর থেকে লালারস নেওয়া যায় না।’’ বাঁকুড়া মেডিক্যালের এক কর্তা বলেন, ‘‘মৃত্যুর পরে, লালা-রসে কোনও জীবাণু বেশিক্ষণ থাকে না। ফলে, পরে সংগ্রহ করে পরীক্ষা করতে পাঠালে লাভ হত না।’’

তবে কোনও রকম ঝুঁকি না নিয়ে ওই তরুণীর পরিবারের লোকজনকে ‘হোম কোয়রান্টিন’-এ রাখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জগন্নাথবাবু। তিনি বলেন, “আমরা ঝুঁকি এড়াতে মৃতার পরিবারের লোকজনকে ‘হোম কোয়রান্টিন’-এ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এ ছাড়া ওই তরুণী সম্প্রতি বাইরে কোথাও গিয়েছিলেন কি না, তা জেনে ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিককে রিপোর্ট দিতে বলেছি।”

মৃতার পরিবার সূত্রে খবর, পরিবারটি দুঃস্থ। ওই তরুণী খেতে-খামারে কাজ করতেন। গত সাত দিন ধরে প্রবল জ্বর, গলা ব্যথা ও শ্বাসকষ্টের সমস্যা শুরু হয় তরুণীর। প্রাথমিক পর্যায়ে স্থানীয় দোকান থেকে ওষুধ কিনে খাওয়ানো হয় তাঁকে। বুধবার অবস্থার অবনতি হলে রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ স্থানীয় একটি নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু তরুণীর উপসর্গ দেখে নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ ঝুঁকি না নিয়ে বিষ্ণুপুর সুপার স্পেশালিটিতে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন।

রাতে হাসপাতালের পথেই মৃত্যু হয় তাঁর। এখানেও উপসর্গ শুনে সে নোভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কি না, তা নিয়ে সন্দেহ দানা বাঁধে ডাক্তারদের মধ্যে। এ দিকে, হাসপাতালের পথে মৃত্যু হওয়ায় নিয়ম অনুযায়ী, দেহের ময়না-তদন্ত করানো প্রয়োজন ছিল। কিন্তু এ ক্ষেত্রে ময়না-তদন্ত বিষ্ণুপুরে না, বাঁকুড়া মেডিক্যালের মর্গে করানো হবে, তা নিয়ে গোড়ায় জটিলতা দেখা দেয়।

বিষ্ণুপুর জেলা হাসপাতালের মর্গের কর্মীরাও আপত্তি তোলেন। পুলিশ ও প্রশাসনের কর্তারা সেখানে গিয়ে তাঁদের বোঝান। এ দিন দুপুরে ময়না-তদন্তের পরে, দেহটি পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়। ময়না-তদন্ত না হওয়া পর্যন্ত ওই তরুণীর পরিবারকে হাসপাতালের একটি ঘরে আলাদা ভাবে রাখা হয়েছিল।

এ দিকে, ওই তরুণীর দেহের ময়না-তদন্ত করা উচিত হয়েছে কি না, তা নিয়েও নানা মত শোনা যাচ্ছে ডাক্তারদের মধ্যে। বাঁকুড়া জেলার ডাক্তারদের একাংশের মতে, করোনা-আক্রান্তের মৃত্যুর পরে, তাঁর দেহ ভাল ভাবে প্লাস্টিকে মুড়ে পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়। দেহের রস যাতে বাইরে না বেরোয় সে জন্য সতর্কতা নেওয়া হয়। কাজেই এই তরুণীর (করোনা-আক্রান্ত হয়েছিলেন কি না, নিশ্চিত না হলেও) দেহের ময়না-তদন্ত এ ক্ষেত্রে এড়ানো গেলেই ভাল হত।

যদিও এসএসকেএম হাসপাতালের ফরেন্সিকের বিভাগীয় প্রধান বিশ্বনাথ কাহালির মতে, “ময়না-তদন্ত না করার কোনও কারণ নেই।” বিষ্ণুপুর হাসপাতালের সুপার অবশ্য বলেন, “হাসপাতালে নিয়ে আসার আগেই ওই তরুনীর মৃত্যু হয়। তাই সরকারি নিয়ম মেনে সব রকম সর্তকতামূলক ব্যবস্থা নিয়ে আলাদা জায়গায় ময়না তদন্ত করা হয়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Health
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE