Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
শোক সামলে কাবিলপুরে লক্ষ্যপূরণ  তিন মেয়ের

বহু বাধা পেরিয়ে বাবার চক্ষুদান

ইতিমধ্যেই কর্নিয়া দু’টি কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে পাঠানো হয়েছে। প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষও এ ভাবে চক্ষুদানে এগিয়ে আসায় খুশি কর্নিয়া সংগ্রহের কাজের সঙ্গে যুক্ত সংস্থাও।

অপূর্ব চট্টোপাধ্যায়
রামপুরহাট শেষ আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০১৭ ০১:০৬
Share: Save:

বাবার ‘শেষ ইচ্ছে’ রাখতে প্রাণপাত করল মেয়েরা। ইচ্ছেশক্তির কাছে হার মানল বাধা।

জাতীয় সড়ক থেকে এক কিলোমিটার দূরের গ্রাম। কিন্তু, মাঝে রেলগেট একবার পড়ে গেলে গ্রাম ঢুকতে ধৈর্য্যের পরীক্ষা দিতে হয়। জাতীয় সড়কের যানজট তো রয়েছেই। এত কিছু বাধা আছে জেনেও বাবার অন্তিম ইচ্ছে পূরণ করতে পিছিয়ে যাননি তিন মেয়ে। যার ফলে রামপুরহাট থানার প্রত্যন্ত গ্রাম কাবিলপুর থেকে এক বৃদ্ধের দুটি কর্নিয়া অন্যের কাজে লাগার সুযোগ তৈরি হল। ইতিমধ্যেই কর্নিয়া দু’টি কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে পাঠানো হয়েছে। প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষও এ ভাবে চক্ষুদানে এগিয়ে আসায় খুশি কর্নিয়া সংগ্রহের কাজের সঙ্গে যুক্ত সংস্থাও।

রামপুরহাট শহর থেকে প্রায় ছ’কিলোমিটার দূরের গ্রাম কাবিলপুর। সেই গ্রামের ৬৪ বছরের গিরিধারী লাল সিংহ দীর্ঘ রোগভোগের পরে শনিবার সন্ধ্যায় বাড়িতেই মারা যান। গিরিধারীবাবুর স্ত্রী এবং তিন মেয়ে বর্তমান। বড় মেয়ে রঞ্জনা সিংহ দাস জানালেন, বাবা কুড়ি বছর আগে হাজারিবাগের অভ্র খনিতে কাজ করতেন। সেখান থেকে কাজ ছেড়ে চলে আসার পরে বছর তিনেক রামপুরহাটে একটি সারের দোকানে খাতাপত্র লেখার কাজ করতেন। সেখানে কাজ ছেড়ে দেওয়ার পরে গিরিধারীবাবু উচ্চ রক্তচাপজনিত রোগে ভুগতে থাকেন। চিকিৎসকেরা জানান, বাবার মাথার শিরাগুলি ক্রমশ শুকিয়ে যাচ্ছে। এই অবস্থায় থাকতে থাকতেই গিরিধারীবাবু স্ত্রী-মেয়েদের কাছে চক্ষুদানের কথা জানিয়েছিলেন।

বাবার মৃত্যুর পরেই শোক ভুলে অন্তিম ইচ্ছেকে মর্যাদা দিতে শুরু হয় অন্য লড়াই। রঞ্জনাদেবী বলেন, ‘‘শনিবার সন্ধ্যায় ছ’টা পনেরো নাগাদ বাবা মারা যান। তার কিছু পরেই শোক পাশে রেখে ভাবতে শুরু করি কোথায়, কী ভাবে, কারা চক্ষু সংগ্রহ করে তার হালহদিশ জানতে। মুর্শিদাবাদের কান্দির মামার কাছ থেকে বহরমপুর সুশ্রুত চক্ষু হাসপাতালের ফোন নম্বর পাই। সেখানে যোগাযোগ করে দুর্গাপুর ব্লাইন্ড সোসাইটির ফোন নম্বর পাই। যোগাযোগ করতেই ওঁনারা সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়ে যান।’’

প্রধান চিন্তা ছিল যানজট পেরিয়ে সময়ের মধ্যে কর্নিয়া পৌঁছনো। দুর্গাপুর থেকে প্রায় ১৪০ কিলোমিটার পথ। তার মধ্যে জাতীয় সড়কে যানজটের সম্ভাবনা। গ্রাম ঢুকতে রেলগেট। রাস্তাই বা চিনবেন কী করে? দুর্গাপুর ব্লাইন্ড সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক কাজল রায় বলেন, ‘‘আমাদের প্রথম লক্ষ্য ছিল সময়ের মধ্যে গ্রামে পৌঁছনো। শেষমেষ রাত বারোটার মধ্যে কাবিলপুরে পৌঁছে যাই।’’ কাজলবাবু আরও বলেন, ‘‘রামপুরহাট শহর থেকে এর আগে কর্ণিয়া সংগ্রহ করেছি। কিন্তু, রামপুরহাট ছাড়িয়ে প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষ চক্ষুদানে এগিয়ে আসছেন, এর জন্য খুব নিজেকে গর্বিত মনে করছি।’’ ইচ্ছেপূরণ করতে পেরে খুশি গিরিধারীবাবুর পরিজনরাও। মেয়েরা বলছেন, ‘‘কষ্টের দিনেও প্রাপ্তি তো ওটুকুই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Eye Donation Daughters
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE