মৃত রকিবুল ইসলাম। —নিজস্ব চিত্র।
প্রশাসনিক বৈঠকে এসে সতর্ক করে গিয়েছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী। তার পরে ২৪ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই জ্বরের উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া এক যুবকের মৃত্যুর ঘয়নায় সিঁদুরে মেঘ দেখছে জেলা স্বাস্থ্য দফতর।
শুক্রবার সকালে সিউড়ি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রকিবুল ইসলাম (২৮) নামে ওই যুবকের মৃত্যুর কারণ মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গি কিনা, তা এখনও পর্যন্ত স্পষ্ট না হলেও সম্ভাবনাকে পুরোপুরি উড়িয়েও দিচ্ছেন না স্বাস্থ্য-কর্তারা। জ্বর, মাথায় অসহ্য যন্ত্রণা ও বমিভাবের প্রায় একই রকম উপসর্গ নিয়ে দুবরাজপুরের এক যুবক ভর্তি হওয়ায় উদ্বেগ আরও বেড়েছে। মির মহম্মদ হোসেন নামে ওই যুবককে আইসিইউ-তে স্থানান্তরিত করেছেন সিউড়ি জেলা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে যোগাযোগ করা হলে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক হিমাদ্রি আড়ি জানিয়ে দিয়েছেন, এখন থেকে ডেঙ্গি নিয়ে যা বলার স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথিই বলবেন।
তবে, স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, রকিবুল ডেঙ্গিতে আক্রান্ত ছিলেন কিনা, অ্যালাইজা টেস্টের রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত বলা যাবে না। এ দিন সকালে মৃত্যুর কিছু ক্ষণ আগেই রকিবুলের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল। একই পরীক্ষার জন্য দুবরাজপুরের ভর্তি যুবকেরও রক্তের নমুনা নেওয়া হয়েছে। সন্ধ্যায় বিশ্বরঞ্জনবাবু বলেন, ‘‘ওই যুবকের ডেঙ্গিতে মৃত্যু হয়েছে কিনা তা এখনই বলা সম্ভব নয়। তবে পরিস্থিতির দিকে আমাদের নজর রয়েছে। জেলা স্বাস্থ্য দফতরগুলিকে প্রয়োজন মতো ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।’’
হাসপাতাল সূত্রের খবর, যিনি মারা গিয়েছেন সেই রকিবুলের বাড়ি সিউড়ি ২ ব্লকের দেশালপুর গ্রামে। কর্মসূত্রে তিনি গত পাঁচ বছর ধরে হাওড়ার শিবপুরে একটি শপিং মলে নিরাপত্তা রক্ষীর কাজ করতেন। রকিবুলের বাবা আনারুল আমিন জানান, ছেলে তাঁকে সোমবারই জ্বরে অসুস্থ হয়ে পড়ার কথা জানিয়েছিলেন। লোক পাঠিয়ে মঙ্গলবার ছেলেকে তাঁরা বাড়িতে নিয়ে আসেন। পরের দিন স্থানীয় এক চিকিৎসককে দেখানোও হয়। কিন্তু অবস্থার অবনতি হওয়ায় বৃহস্পতিবার বিকালেই রকিবুলকে সিউড়ি হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। ‘‘বাইরে থেকে রক্ত পরীক্ষা করা হয়েছিল। তখনই জানা যায় ডেঙ্গি। সকালে খবর পাই ছেলেটা আমার মরে গিয়েছে। কী করে সব শেষ হয়ে গেল বুঝতে পারছি না,’’—বলছেন শোকস্তব্ধ বাবা।
এ দিকে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, বাইরে যে রক্ত পরীক্ষার কথা বলা হচ্ছে তার রিপোর্টে রফিকুলের দেহে এনএস-১ মিলেছে। প্লেটলেট ছিল ১ লক্ষ ৫৬ হাজার। কিন্তু তা থাকলেই ডেঙ্গি, সেটা বলা যাবে না। যত ক্ষণ না অ্যালাইজা টেস্টের রিপোর্ট পজিটিভ হচ্ছে। একই বক্তব্য সিউড়ি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষেরও। পদাধিকারিরা বলছেন, ‘‘কেউ অ্যালাইজা টেস্টের জন্য এলে তা করা হচ্ছে। তবে এ যাবত এক জনেরও অ্যালাইজা পজিটিভ নয়। সতর্কতা জরুরি। কিন্তু রিপোর্টের আগে আতঙ্কিত হওয়ার মানে নেই।’’ চিকিৎসকদের অন্য একটা অংশের বক্তব্য, যেহেতু ওই যুবক অন্যত্র থাকতেন, তাই একটা সম্ভাবনা থেকেই যাচ্ছে। কিন্তু দুবরাজপুরের যুবক মির মহম্মদ হোসেনের সম্বন্ধে অবশ্য সেই যুক্তি খাটে না। মিরের বাবা মির ইরফান বলছেন, ‘‘দিন কয়েক থেকেই ছেলে জ্বর ও মাথার যন্ত্রণায় ভুগছিল। পরিস্থিতি খারাপ হওয়ায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সিউড়িতে ভর্তি করি।’’
ঘটনা হল, রাজ্যে ডেঙ্গি হানা ও মৃত্যু ঘটনার পরে বৃহস্পতিবার বোলপুরে প্রশাসনিক বৈঠক থেকেই মশার বংশবৃদ্ধি রোধে এবং সচেতনতা বৃদ্ধিতে এই জেলাকেও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পুরসভাগুলিকে স্কুল ও হাসপাতাল চত্বর পরিচ্ছন্ন রাখারও নির্দেশ দেন। কিছুটা হলেও এ দিনই সেই কাজের সূচনা হয়েছে সিউড়ি পুরসভার ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে। এলাকার ঝোপ জঙ্গলে মশা মারার তেল স্প্রে, জমা জলে চুন ও ব্লিচিং ছড়ানো হয়েছে। সিউড়ির উপপুরপ্রধান বিদ্যাসাগর সাউ বলেন, ‘‘শনিবার জেলা হাসপাতালকে পরিচ্ছন্ন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। জেলা স্বাস্থ্য দফতর প্রয়োজনীয় সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। পুর এলাকার স্বাস্থ্যকর্মীদেরও সতর্ক করা হযেছে। দুবরাজপুর পুরসভায়ও শুক্রবার ফাইলেরিয়া দূরীকরণ কর্মসূচির সঙ্গে ডেঙ্গির প্রচার করা নিয়ে একটি বৈঠক হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুরপ্রধান পীযূষ পাণ্ডে।
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, প্রাথমিক ভাবে আশপাশে জল জমতে না দেওয়া, ঝোপঝাড় আবর্জনা পরিচ্ছন্ন রাখা, মশারি টাঙিয়ে শোওয়া এবং জ্বর হলেই দ্রুত কাছাকাছি থাকা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পৌঁছনো— এ ক’টি পরামর্শ মেনে চললেই ডেঙ্গির প্রকোপ এড়িয়ে চলা সম্ভব।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy