Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
অগস্টের প্রথম সপ্তাহে বৃষ্টি ৫০ মিমি

কৃপণ মেঘ, জল ছাড়ছে কংসাবতী

কংসাবতী ডিভিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি জেলা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, মুকুটমণিপুর জলাধারের জলস্তর ৪১৯-৪২০ ফুট পর্যন্ত ওঠা না অবধি জল ছাড়া হবে না।

সেচ-সুরাহা: মুকুটমণিপুর থেকে ৮ হাজার কিউসেক হারে জল ছাড়া চলছে। বুধবার। ছবি: সুশীল মাহালি

সেচ-সুরাহা: মুকুটমণিপুর থেকে ৮ হাজার কিউসেক হারে জল ছাড়া চলছে। বুধবার। ছবি: সুশীল মাহালি

নিজস্ব সংবাদদাতা
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ০৮ অগস্ট ২০১৯ ০০:২২
Share: Save:

নিম্নচাপের মেঘে ছেয়ে গিয়েছে জেলার আকাশ। মাঝে মধ্যে বিক্ষিপ্ত ভাবে বৃষ্টিও নামছে। তাতেও কাটছে না ঘাটতি। যার ফলে ধান রোয়ার কাজে গতি নেই বাঁকুড়া জেলা জুড়েই। মুখে হাসি ফেরেনি কৃষকদেরও। এই পরিস্থিতিতে মুকুটমণিপুর জলাধারে পর্যাপ্ত পরিমাণে জল না থাকা সত্ত্বেও সেচের জন্য বুধবার থেকে জল ছাড়া শুরু করেছে কংসাবতী ডিভিশন।

কংসাবতী ডিভিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি জেলা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, মুকুটমণিপুর জলাধারের জলস্তর ৪১৯-৪২০ ফুট পর্যন্ত ওঠা না অবধি জল ছাড়া হবে না। যদিও অগস্টের প্রথম সপ্তাহেও ভারী বৃষ্টি না হওয়ায় জলস্তর ৪১৩ ফুটের বেশি ওঠেনি। তাতেও কেবল চাষের কথা মাথায় রেখেই জল ছাড়া শুরু হয়েছে।

কংসাবতী সার্কেলের (১) সুপারিন্টেডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার সৌমেন মিশ্র বলেন, “এখনই জল না ছাড়লে ধান চাষের কাজ শুরু হবে না। তাই পর্যাপ্ত পরিমাণ জলস্তর ওঠার আগেই আমরা জল ছাড়লাম। আগামী কিছুদিনের মধ্যে বর্ষার বৃষ্টি জোরদার হলে বাঁধের জলস্তর বাড়বে বলেই আমরা আশাবাদী।” তবে এখনও পর্যন্ত বর্ষার গতি-প্রকৃতি দেখে বৃষ্টি কতটা হবে তা নিয়ে সংশয় অবশ্য পুরোমাত্রায় রয়ে গিয়েছে।

কংসাবতী জল ছাড়ায় মূলত দক্ষিণ বাঁকুড়ার কিছু এলাকায় সেচের সুবিধা হবে। চাষিরা জানাচ্ছেন, এই পরিস্থিতিতে ধান রোয়ার জন্য প্রচুর জলের দরকার। কিন্তু জলাধারে পর্যাপ্ত জল না থাকায় কতদিন কংসাবতী জল দেবে, তা নিয়েও চাষিদের মধ্যে প্রশ্ন রয়েছে। কংসাবতীর তরফে জানানো হচ্ছে, যে পরিমাণ জল রয়েছে, তাতে ৮-১০ দিন জল ছাড়া সম্ভব।

জেলা কৃষি দফতর সূত্রে জানা যাচ্ছে, অগস্টের প্রথম সাত দিনে জেলায় বৃষ্টি হয়েছে ৫০ মিলিমিটার। গত জুলাই মাসে বৃষ্টির ঘাটতি ছিল প্রায় ৬২ শতাংশ। জেলায় লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী, ধান রোয়ার কাজ তেমন ভাবে এগোয়নি বৃষ্টির অভাবে। গত বছর আগস্টের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে জেলা জুড়ে ধান রোয়ার কাজ হয়েছিল প্রায় ১ লক্ষ ৫৫ হাজার ৭৭৫ হেক্টর। যা লক্ষ্যমাত্রার চল্লিশ শতাংশের বেশি। এ বার সেখানে ধান রোয়া হয়েছে ৫৫ হাজার ৮৫৫ হেক্টর জমিতে। যা লক্ষ্যমাত্রার ১৪ শতাংশ।

বাঁকুড়া সদর মহকুমায় ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছিল ১ লক্ষ ৩৫ হাজার ২৫০ হেক্টর। সেখানে মাত্রা ১০ হাজার ৮১০ হেক্টর জমিতেই এখনও পর্যন্ত ধান রোয়া গিয়েছে। এ ছাড়া খাতড়া মহকুমায় লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ১ লক্ষ ৩০ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে ধান চাষের। এখনও পর্যন্ত সেখানে ধান রোয়া হয়েছে ১২ হাজার ২৫ হেক্টর জমিতে।

বিষ্ণুপুর মহকুমায় তুলনায় সেচের ব্যবস্থা কিছুটা হলেও ভাল। সেখানে ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা ১ লক্ষ ১৬ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে। তার মধ্যে ৩৩ হাজার ২০ হেক্টর জমিতে এখনও পর্যন্ত ধান রোয়া গিয়েছে।

জেলা কৃষিদফতরের কর্তারা জানাচ্ছেন, জেলার তিনটি মহকুমার কোথাও ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রার ধারেকাছেও পৌঁছনো যায়নি এখনও পর্যন্ত। এ দিকে ইতিমধ্যেই ধান রোয়ার কাজে দেরি হয়ে গিয়েছে। এর ফলে চারার বয়স বেড়ে যাওয়ায় ধানের ফলন কমবে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করছেন জেলা কৃষি দফতরের কর্তারা।

জেলার উপকৃষি অধিকর্তা (প্রশাসন) সুশান্ত মহাপাত্র বলেন, “চারার বয়স বেড়ে গিয়েছে অথচ এখনও অনেক জমিতে ধান রোয়া যায়নি। তাই ফলন কম হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে চাষিদের আমরা বলছি বেশি সংখ্যক চারা রোপণ করার জন্য।”

এ দিকে জেলার বেশির ভাগ জমিই অসেচ এলাকার মধ্যে। তাই বৃষ্টি না হলে চারা পোঁতাই বা হবে কী ভাবে, সেই প্রশ্ন তুলছেন চাষিরা। ছাতনার খড়বনা এলাকার চাষি পঞ্চানন কুণ্ডু বলেন, “সাত কাঠা জমিতে বীজতলা করেছি। যা বৃষ্টি হয়েছে তাতে চারা কোনও রকমে মরতে মরতে বেঁচে আছে। এখনও একটি চারাও জমিতে লাগাতে পারিনি। বৃষ্টি না হলে চারা রোয়াই যাবে না, সংখ্যায় বাড়ানো তো অনেক দূরের কথা।”

নিম্নচাপের মেঘ কখন বর্ষায়, সেই অপেক্ষাতেই আকাশের দিকে মুখ ভার করে চেয়ে আছেন জেলার চাষিরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Rain Irrigation Kangsabati Division
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE