Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

কোথায় ধান কেনা, খোঁজে হন্যে চাষি

একই অভিজ্ঞতা আড়শার শিরকাবাদ গ্রামের বাসিন্দা শক্তিপদ মাঝি, প্রমথনাথ মাঝি-সহ এলাকার চাষিদের। ওই গ্রামের বাসিন্দা ফটিক মাঝির অভিজ্ঞতা, ‘‘এত দিন কম দাম হলেও এলাকার ব্যবসায়ীরা আমাদের কাছ থেকে ধান কিনতেন। কিন্তু, এখন তাঁর কিনছেন না। অথচ, মকর পরবের আগে টাকা দরকার।’’

জমিতে সর্ষে। ঘরে যাচ্ছে ধান। বিষ্ণুপুরের দ্বাদশবাড়ি গ্রামে। নিজস্ব চিত্র

জমিতে সর্ষে। ঘরে যাচ্ছে ধান। বিষ্ণুপুরের দ্বাদশবাড়ি গ্রামে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা 
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০১৯ ০৭:২০
Share: Save:

ধান কেনার কেন্দ্র খোলা হচ্ছে খবর পেয়ে এক সপ্তাহ ধরে শিরকাবাদ এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন কার্তিক মাঝি। অযোধ্যা পাহাড়ের ঢালে তাঁর গ্রাম গুড়াহাটা। চাষই তাঁর ভরসা। তিনি বলেন, ‘‘মকর সংক্রান্তির আগে টাকা দরকার। সে জন্য পঁচিশ-তিরিশ কুইন্টাল ধান বিক্রি করব ভেবেছি। কিন্তু, ক’দিন ধরে এলাকা ঘুরে কোথাও ধান বিক্রির কেন্দ্র খুলেছে দেখতে পাইনি।’’

একই অভিজ্ঞতা আড়শার শিরকাবাদ গ্রামের বাসিন্দা শক্তিপদ মাঝি, প্রমথনাথ মাঝি-সহ এলাকার চাষিদের। ওই গ্রামের বাসিন্দা ফটিক মাঝির অভিজ্ঞতা, ‘‘এত দিন কম দাম হলেও এলাকার ব্যবসায়ীরা আমাদের কাছ থেকে ধান কিনতেন। কিন্তু, এখন তাঁর কিনছেন না। অথচ, মকর পরবের আগে টাকা দরকার।’’ তাঁদের অভিযোগ, প্রশাসন সরকারি কেন্দ্রে ধান বিক্রি করতে বলছে। কিন্তু, ধান কেনার সরকারি কেন্দ্র কোথায়? সমবায়, স্বনির্ভর দল— কেউই সেখানে ধান কিনতে নামে বলে তাঁদের দাবি। প্রমথনাথ মাঝি বলেন, ‘‘ধান বিক্রি করে শ্রমিকদের মজুরি মেটাতে হবে। কিন্তু, ধান বিক্রি করতে না পারায়, তাঁদের মজুরি দেওয়া দায় হয়ে পড়েছে।’’

চাষিদের এই অভিযোগকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যে পুরুলিয়ায় আসরে নেমে পড়েছে বিরোধী দলগুলি। বিভিন্ন জায়গায় অবরোধ, মিছিল, পথসভা হচ্ছে। ধান কেনার পরিকাঠামো অবিলম্বে তৈরির দাবিতে মঙ্গলবার ব্লকে ব্লকে স্মারকলিপি দেওয়ার কর্মসূচি নিয়েছে কংগ্রেস। রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদ মন্ত্রী তথা জেলা তৃণমূল সভাপতি শান্তিরাম মাহাতো বলেন, ‘‘আরও বেশি ধান কেনার কেন্দ্র যাতে খোলা যায়, তা দেখা হচ্ছে।’’

পুরুলিয়া জেলা কংগ্রেস সভাপতি নেপাল মাহাতো বলেন, ‘‘প্রশাসন বলছে সরকারি সহায়ক মূল্য ১৭৫০ টাকা কুইন্টাল দরে চাষিদের কাছ থেকে ধান কিনতে হবে। এই পদক্ষেপ স্বাগত। কিন্তু, জেলাশাসক ধান বিক্রির কেন্দ্র বাড়ানোর দাবি করলেও বাস্তব পরিস্থিতি অন্য। ধান কেনার কেন্দ্র খুবই কম খুলেছে। বহু ব্লকে ধান কেনার কোনও কেন্দ্রই নেই। চাষিরা তাহলে কোথায় ধান বিক্রি করবেন?’’

যদিও প্রশাসনের দাবি, ধান কেনার শিবির আগের থেকে বাড়ানো হয়েছে। জেলাশাসক অলকেশপ্রসাদ রায় বলেন, ‘‘ধান কেনার কেন্দ্র বাড়ছে। ১৫টি কিসান মান্ডি ছাড়াও বিভিন্ন ব্লকে সমবায় ও স্বনির্ভর দল ধান কেনার কাজ শুরু করেছে।’’

পুরুলিয়া জেলা খাদ্য নিয়ামক বাপ্পাদিত্য চন্দ্র দাবি করেন, ‘‘শনিবার থেকেই জেলায় ১৯টি জায়গায় ডিপিসি (ডাইরেক্ট পারচেজ সেন্টার) কাজ শুরু করেছে। আড়শাতেও মিশিরডি গ্রামে দফতর ধান কিনছে। ওই ব্লকের আর কোথায় কোথায় ধান কেনা হচ্ছে, খোঁজ নেব।’’ খাদ্য দফতরের দাবি, শনিবার থেকেই যে সব চাষি ধান বিক্রি করেছেন, তাঁদের হাতে হাতে চেক দেওয়া হচ্ছে। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে শনিবার খাদ্য দফতরের আধিকারিকেরা বিভিন্ন গ্রামে ও কিসান মান্ডি পরিদর্শনে যান।

নেপালবাবুর আরও দাবি, পুরুলিয়া জেলায় প্রায় আট লক্ষ টন ধান উৎপাদন হয়েছে। কিন্তু, সরকার কিনবে দেড় লক্ষ টন। তাহলে বাড়তি ধান চাষিরা কোথায় বিক্রি করবেন? লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হওয়ার পরে ধান বিক্রির বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের নজরদারি শিথিল হয়ে গেলে চাষিরা নায্য দাম পাবেন, এই নিশ্চয়তা কোথায়? জেলাশাসক বলেন, ‘‘বাকি ধান চাষিরা ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করতেই পারেন। কিন্তু, তা ১৭৫০ কুইন্টাল টাকা দরেই কিনতে হবে।’’ তাঁর আশ্বাস, লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়ে গেলেও ধান কেনাবেচায় প্রশাসনের সমান নজরদারি থাকবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Rice Trading Camp Farmer
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE