Advertisement
১১ মে ২০২৪
বিষ্ণুপুর জেলা হাসপাতাল

আঁস্তাকুড়ে তালা, চত্বরে আবর্জনা

বিষ্ণুপুর জেলা হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির জেলাশাসক মনোনীত সদস্য হরিপ্রসন্ন মিশ্র অবশ্য প্রশ্ন তুলেছেন এখনও কেন পুরসভা আবর্জনা তুলে নিয়ে গেল না, তা নিয়ে।

জঞ্জাল: বিষ্ণুপুর হাসপাতালে ঢোকার রাস্তার ধারে ফেলা হচ্ছে নোংরা। (ইনসেটে) আবর্জনা ফেলার স্থায়ী ঘর তালা বন্ধ। নিজস্ব চিত্র

জঞ্জাল: বিষ্ণুপুর হাসপাতালে ঢোকার রাস্তার ধারে ফেলা হচ্ছে নোংরা। (ইনসেটে) আবর্জনা ফেলার স্থায়ী ঘর তালা বন্ধ। নিজস্ব চিত্র

শুভ্র মিত্র
বিষ্ণুপুর শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০১৭ ০২:০২
Share: Save:

তিনটি ঘর। আলাদা রং করা। নীল রঙের ঘরে ফেলার কথা বর্জ্য চিকিৎসা সরঞ্জাম। হলুদ ঘরে প্রাণিজ বর্জ্য। কালো ঘরে সাধারণ আবর্জনা। কিন্তু তিনটি ঘরের শাটার নামানো। তালা বন্ধ। বিষ্ণুপুর জেলা হাসপাতাল চত্বরটাই হয়ে উঠেছে আস্তাকুঁড়।

জেলা হাসপাতাল চত্বরে যত্রতত্র ডাঁই হয়ে রয়েছে আবর্জনা ভর্তি প্লাস্টিকের প্যাকেট, বস্তা। কী নেই সেখানে! ভাঙা কাচের বোতল, ব্যবহৃত সিরিঞ্জ থেকে শুরু করে অস্ত্রোপচারের পরে জড়ো হওয়া শারীরিক বর্জ্য। খাবারের খোঁজে ময়লার স্তূপ ছত্রখান করছে কুকুর। হাওয়া দিলে সে সব উড়ছে, ছড়িয়ে পড়ছে সর্বত্র। আর বৃষ্টি হলে তো নরক গুলজার!

এই নোংরা পাশ কাটিয়ে, কখনও বাধ্য হয়ে মাড়িয়েই যেতে হয় হাসপাতালে। হাসপাতালে দাঁড়িয়ে বিষ্ণুপুরের গোপালগঞ্জের বুবাই দাস, মিনতি সাঁতরা, মথুর বাগদিরা বলেন, ‘‘অসুস্থ রোগী এই পরিবেশে সুস্থ হতে আসেন। প্রহসন ছাড়া আর কী বলব!’’ সোমবার হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেল, লক্ষাধিক টাকা খরচ করে দু’দিকে তৈরি হয়েছে ফুলের বাগান। তার মধ্যে দিয়ে চলে গিয়েছে রাস্তা। রাস্তার পাশেই সাফাই কর্মীরা আবর্জনা ভর্তি প্যাকেট ফেলে দিয়ে চলে যাচ্ছেন। তার পাশেই প্রতিষেধক দেওয়ানোর জন্য নবযাতকদের কোলে নিয়ে লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন মায়েরা; নাকে আঁচল চাপা দিয়ে। কাছেই রান্নাঘর। জেলা হাসপাতালের রোগীদের জন্য চলছে খাবার তৈরি। অন্য দিকে সরকারি অ্যাম্বুল্যান্স চালকদের বিশ্রামঘর। এক অ্যাম্বুল্যান্স চালক বলেন, ‘‘এই পরিবেশে বিশ্রাম দূরে থাক, দু’দণ্ড বসে থাকাও দায়।’’

খোঁজ নিয়ে জানা গেল, বর্জ্য ফেলার জন্য আলাদা আলাদা ঘর তৈরি হলেও সেগুলির শাটার নামানো। বিষ্ণুপুর স্বাস্থ্য জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক রমেন্দ্রনাথ প্রামাণিক বলেন, ‘‘আমাদের তো নোংরা ফেলার জন্য ছ’লক্ষ আশি হাজার টাকা দিয়ে নতুন তিনটি চেম্বার তৈরি করা হয়েছে। সেখানেই সাফাই কর্মীদের ময়লা ফেলার কথা।’’ তাহলে এই অবস্থা কেন? রমেন্দ্রনাথবাবু বলেন, ‘‘এমনটা একেবারেই হওয়ার কথা নয়। আমি বিষ্ণুপুর জেলা হাসপাতালের সুপারের সঙ্গে কথা বলব।’’

বিষ্ণুপুর জেলা হাসপাতালের সুপার পৃথ্বীশ আকুলির দাবি, নিকাশি নালার সমস্যার জন্য নতুন চেম্বারগুলি চালু করা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, ‘‘সমস্যা মেটানোর চেষ্টা চলছে। সাধারণ বর্জ্য তুলে নেওয়ার জন্য পুরসভাকে চিঠি দিয়েছি।’’

বিষ্ণুপুর জেলা হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির জেলাশাসক মনোনীত সদস্য হরিপ্রসন্ন মিশ্র অবশ্য প্রশ্ন তুলেছেন এখনও কেন পুরসভা আবর্জনা তুলে নিয়ে গেল না, তা নিয়ে। তিনি বলেন ‘‘১৮ অগস্ট বৈঠকে পুরপ্রধানকে অনুরোধ করা হয়েছিল। এখনও কেন পরিষ্কার হল না খোঁজ নিচ্ছি।’’ এই ব্যাপারে বিষ্ণুপুর পৌরসভার জনস্বাস্থ্য কারিগরিক আধিকারিক তুহিন কুণ্ডুর বক্তব্য, হাসপাতালের সাফাই কর্মীরা এমন ভাবে ভাঙা কাচ, সিরিঞ্জ ইত্যাদি ছড়িয়ে রেখেছেন যে পুরসভার কর্মীর সেগুলি সরাতে পারছেন না। যন্ত্র দিয়ে সেগুলি সরানোর চেষ্টা করা হবে। পৃথ্বীশবাবু বলেন, ‘‘অস্থায়ী সাফাই কর্মীদেরও বেশ কিছুটা প্রশিক্ষণের দরকার আছে। আমরা ধাপে ধাপে প্রশিক্ষণ চালিয়ে যাচ্ছি।’’

সেই সমস্ত মিটিয়ে হাসপাতালের পরিবেশ কবে সুস্থ হয়, সেই অপেক্ষাতেই রয়েছেন বিষ্ণুপুরের বাসিন্দারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE