Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

কারখানায় গ্যাস লিক, মৃত দু’জন

পুলিশ জানিয়েছে, এ দিন সকাল ৮ টা থেকে সাড়ে ৮টার মধ্যে দুর্ঘটনাটি ঘটে। ওই সময় কারখানার গ্যাসিফায়ার যন্ত্রটি পরীক্ষা করে দেখছিলেন দুই শ্রমিক ভ্রমর চান্ডি এবং বিন্দাল কুমার।

বড়োজোড়া হাসপাতালে মৃতের পরিবার।

বড়োজোড়া হাসপাতালে মৃতের পরিবার।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বড়জোড়া শেষ আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০১৯ ০২:৪৩
Share: Save:

কারখানায় গ্যাল লিক করে মৃত্যু হল দুই শ্রমিকের। অসুস্থ আরও পাঁচ শ্রমিক। পুলিশ জানিয়েছে, ররিবার সকালে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে বড়জোড়ার ঘুটগেড়িয়ার একটি অ্যালয় কারখানায়।

পুলিশ জানিয়েছে, এ দিন সকাল ৮ টা থেকে সাড়ে ৮টার মধ্যে দুর্ঘটনাটি ঘটে। ওই সময় কারখানার গ্যাসিফায়ার যন্ত্রটি পরীক্ষা করে দেখছিলেন দুই শ্রমিক ভ্রমর চান্ডি এবং বিন্দাল কুমার। হঠাৎ কোনও ভাবে গ্যাসিফায়ার থেকে গ্যাস লিক করে। শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মাটিতে পড়ে যান তাঁরা। তাঁদের বাঁচাতে ছুটে আসেন কারখানার আরও কয়েকজন শ্রমিক। তাঁদের পাঁচ জন অসুস্থ হয়ে পড়েন।

সূত্রের খবর, কারখানার ফার্নেস এবং গ্যাসিফায়ার সেকশনে এ দিন সকালে কাজ করছিলেন ১২জন শ্রমিক। অসুস্থ শ্রমিকদের বড়জোড়া হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে ভ্রমর ও বিন্দালকে মৃত ঘোষণা করা হয়। ভ্রমরের বাড়ি ওড়িশায়। বিন্দাল জামুড়িয়ার (এটা কি বর্ধমানের) বাসিন্দা। মহাদেব কুমার নামে আর এক শ্রমিকের (বাড়ি ওড়িশায়) অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাঁকে দুর্গাপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। অসুস্থ চার শ্রমিক প্রতাপ কুমার (২৮), বিষ্ণু বারিক (২৬) উমাকান্ত যাদব (২৮) এবং রাজ কুমারকে (২৫) বাঁকুড়া মেডিক্যালে ভর্তি করানো হয়েছে। প্রতাপ এবং বিষ্ণু ওড়িশার বাসিন্দা। উমাকান্ত এবং রাজকুমারের বাড়ি যথাক্রমে রাজস্থান এবং উত্তরপ্রদেশে।

দুর্ঘটনার খবর পেয়ে কারখানায় যায় পুলিশ। ঘটনা সম্পর্কে সবিস্তারে কিছু না জানালেও এক পুলিশ আধিকারিক বলেন, ‘‘তদন্ত শুরু হয়েছে। সবদিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’ দেহ দু’টির ময়না-তদন্ত হবে বাঁকুড়া মেডিক্যালে।

কারখানার শ্রমিকেরাও ঘটনা সম্পর্কে মুখে কুলুপ এঁটেছেন। এ দিন বেলায় বড়জোড়া থানায় গেলে দেখা যায়, সেখানে রয়েছেন কারখানার কয়েকজন শ্রমিক। কিন্তু সংবাদমাধ্যম এসেছে শুনেই তাঁরা চলে যান।

ঘটনায় কারখানার শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তৃণমূল শ্রমিক ইউনিয়ন আইএনটিটিইউসি’র স্থানীয় নেতৃত্বের অভিযোগ, বারবার বলা সত্ত্বেও কারখানা কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিয়ে কোনও পদক্ষেপ করেননি।

তৃণমূলের শ্রমিক নেতা তথা শাসকদলের বড়জোড়া ব্লক সভাপতি অলক মুখোপাধ্যায় জানান, ঠিকা শ্রমিক মিলিয়ে ওই কারখানার প্রায় সাড়ে তিনশো শ্রমিক কাজ করেন। তাঁর দাবি, ‘‘দুর্ঘটনার খবর পেয়েই বড়জোড়া হাসপাতালে গিয়েছিলাম। শ্রমিকদের থেকে জানতে পারি, গ্যাসিফায়ার থেকেই দুর্ঘটনাটি ঘটেছে।’’

অলোকবাবুর অভিযোগ, ‘‘কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একাধিক বৈঠকে আমরা শ্রমিকদের নিরাপত্তার কথা তুলেছি। যাঁরা ফার্নেস এবং গ্যাসিফায়ার সেকশনে কাজ করেন, তাঁদের কাজের ঝুঁকির কথাও বারবার আলোচনায় তোলা হয়েছিল। কিন্তু কর্তৃপক্ষ কোনও ব্যবস্থা নেননি।’’ বিজেপির শ্রমিক নেতা গোবিন্দ ঘোষের অভিযোগ ‘‘কারখানা কর্তৃপক্ষ আমাদের ভিতরে গিয়ে শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলতে দেননি। এই কারণে গেটের বাইরে আমরা বিক্ষোভ দেখাই।’’

দুর্ঘটনা নিয়ে কারখানা কর্তৃপক্ষের কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। মালিক আশিস রুংতার ফোনে যোগাযোগ করা করা হলে অপর প্রান্ত থেকে এক জন বলেন, ‘‘উনি ছুটিতে আছেন। সোমবার কথা বলা যাবে।’’ কারখানার এক উচ্চপদস্থ আধিকারিককেও একাধিক বার ফোন করা হয়েছিল। কিন্তু প্রত্যেক বার ফোন বেজে যায়। এমনকি, তাঁর মোবাইলে পাঠানো হোয়াটস অ্যাপ মেসেজেরও উত্তর আসেনি।

কারখানা কর্তৃপক্ষের কাছে আইএনটিটিইউসি’র দাবি, মৃতদের পরিবারকে দশ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। অসুস্থদের সবেতন ছুটি চিকিৎসার সব ভার কারখানা কর্তৃপক্ষকে নিতে হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Gass Leaked in Factory Barajora
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE