E-Paper

সব সময়ে তাড়াহুড়ো, হারি সিকনেস নয় তো?

মানসিক রোগের তালিকায় এখনও এই সমস্যা না থাকলেও, এক ধরনের ‘জেনারালাইজ়ড অ্যাংজ়াইটি ডিজ়অর্ডার’-এর ধরন এই হারি সিকনেস।

ঐশী চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ১০:০৫
Hurry Sickness

প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

হাতে এত কাজ, দম ফেলার ফুরসত নেই— মাল্টিটাস্কিংয়ে সিদ্ধহস্ত ঋদ্ধিমার সব সময়ে এমনটা মনে হয়। ক্রমে তাঁর এই ‘কাজ শেষ না করতে পারার’ দুশ্চিন্তা এমন পর্যায়ে পৌঁছয় যে, তিনি মানসিক ভাবে বিধ্বস্ত হয়ে পড়েন। কথায় কথায় মেজাজ হারান। সম্পর্ক খারাপ হতে থাকে সকলের সঙ্গে। তবু সব কাজের ভার নিজেই নিতে চান। এক সময়ে মনোবিদের দ্বারস্থ হলে জানতে পারেন, তিনি ‘হারি সিকনেস’ নামে উদ্বেগজনিত সমস্যার শিকার।

মানসিক রোগের তালিকায় এখনও এই সমস্যা না থাকলেও, এক ধরনের ‘জেনারালাইজ়ড অ্যাংজ়াইটি ডিজ়অর্ডার’-এর ধরন এই হারি সিকনেস।

লক্ষণগুলি স্পষ্ট

হাতের জরুরি কাজ শেষ করতে না পারলে অনেকেই দুশ্চিন্তা করেন। মনোবিদদের মতে, একটা পর্যায় পর্যন্ত তা স্বাভাবিক। কিন্তু এই দুশ্চিন্তা যদি সারাক্ষণ তাড়া করে, প্রতিটা সময়ে মনে হয় ‘আরও কাজ শেষ করতে পারলে ভাল’, আর সেই কাজ সামলাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয়, তখনই দেখা দেয় উদ্বেগ।

মনোরোগ বিশেষজ্ঞ জয়রঞ্জন রাম বলছেন, “দীর্ঘ দিন ধরে যদি কিছু লক্ষণ দেখা দেয়, তা হলে সতর্ক হওয়া উচিত। যেমন তাড়াহুড়ো করা ও এই সংক্রান্ত দুশ্চিন্তার জেরে ঘুম ও খিদে না পাওয়া, সব সময়ে ‘মাল্টিটাস্কিং’, অনিয়মের ফলে স্বাস্থ্যের অবনতি, হাত-পা ঘেমে যাওয়া, বুক ধড়ফড় করা, মেজাজ হারানো এবং তার জেরে সম্পর্কে তিক্ততা আসা, আত্মবিশ্বাসের অভাব... এই লক্ষণগুলো সাধারণত দেখা যায়।”

দীর্ঘ দিন এই লক্ষণগুলি থেকে গেলে একটা সময়ে দেখা দিতে পারে অতিরিক্ত ক্লান্তি, ‘বার্নআউট’, মাথা যন্ত্রণার মতো সমস্যা। এ ছাড়াও, হজম, ঘুম বা স্বাস্থ্যের আরও গুরুতর অবনতিও হতে পারে।

উপায় রয়েছে

চিকিৎসক জয়রঞ্জন রাম জানাচ্ছেন, কিছু বিষয়ে সচেতন হলে উপকার মিলতে পারে। যেমন,

  • গুরুত্ব বুঝে অগ্রাধিকার: হাতে দশটা কাজ থাকলে সব কাজ একসঙ্গে শেষ করতে যাবেন না। যখনই মনে হবে সব কাজ সামলানো মুশকিল, তখন প্রথমেই ভেবে নিতে হবে কোন কাজের গুরুত্ব বেশি। সেই মতো পরপর কাজ শেষ করবেন। এ ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যের সঙ্গে আপস করে ‘পরে খাওয়া, আগে কাজ’ ভাবা কিন্তু কাম্য নয়।
  • সময়ের কাজ সময়ে: সাধারণত কাজের পাহাড় তখনই জমে, যখন কাজ ফেলে রাখা হয় দীর্ঘক্ষণ ধরে। তাই যত দ্রুত সম্ভব হাতের কাজ সেরে ফেলাই শ্রেয়।
  • বোঝাতে হবে অন্যদের: আপনার হাতের কাজ শেষ হয়নি, কিন্তু অন্য কাউকে তাঁর কাজে সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। এমনটা করলে কিন্তু আপনার উপরেই চাপ বাড়বে। সব কাজ সময়ে শেষ করা মুশকিল হয়ে উঠবে। ফলে কাজের মানও বজায় রাখা কঠিন হবে। তাই নিজেকে যেমন বোঝাতে হবে কোন কাজের গুরুত্ব কতটা, তেমন অন্যদেরও বোঝাতে হবে, সব কাজে আপনি সব সময়ে এগিয়ে আসতে পারবেন না।
  • সাহায্য নিলে ক্ষতি নেই: যখন দেখছেন সব কাজ সময়ের মধ্যে সামলে ওঠা মুশকিল, তখন অন্যের সাহায্য নিতে দ্বিধা বোধ করবেন না।
  • সমস্যার কথা বলা: কাজের চাপে মানসিক ভাবে বিধ্বস্ত বোধ করছেন। ঘুম-খিদের ঘাটতি থেকে মেজাজ হারিয়ে পরিবার-পরিজনের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে ফেলছেন। পরে সে কথা ভেবে অনুশোচনাও হচ্ছে। এমন হলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে পারেন।

এ ছাড়া, দিনের কিছুটা সময় ‘মি টাইম’ রেখে নিজেকে সময় দিলেও হারি সিকনেসের সমস্যা থেকে নিস্তার মিলতে পারে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Health

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy