Advertisement
০৮ মে ২০২৪

শোলার কাজ শিখে রোজগারের আশা

আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন শোলাশিল্পী অনন্ত মালাকারের কাছে শোলাশিল্পের কাজ শিখে সেই স্বপ্নপূরণের পথে পা রেখেছেন তাঁরা।

একমনে: চলছে প্রশিক্ষণ। কীর্ণাহারে বুধবার। নিজস্ব চিত্র

একমনে: চলছে প্রশিক্ষণ। কীর্ণাহারে বুধবার। নিজস্ব চিত্র

অর্ঘ্য ঘোষ
কীর্ণাহার শেষ আপডেট: ০৪ জানুয়ারি ২০১৮ ০৬:৫০
Share: Save:

কেউ লেখাপড়া শিখে চাকরির চেষ্টা করতে করতে ব্যর্থ হয়ে কিছু করার মনোবলই হারিয়ে ফেলেছিলেন। কেউবা অভাবের সংসারে সব দিক সামাল দিতে গিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছিলেন। তাঁদের চোখেই এখন উঁকি দিচ্ছে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর স্বপ্ন। আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন শোলাশিল্পী অনন্ত মালাকারের কাছে শোলাশিল্পের কাজ শিখে সেই স্বপ্নপূরণের পথে পা রেখেছেন তাঁরা।

১৯৭০ সালে শোলাশিল্পের উপরে কীর্ণাহারের বাসিন্দা অনন্তবাবু জাতীয় পুরস্কার পান। তাঁরই চেষ্টায় গত বছর থেকে কেন্দ্রীয় সরকার ‘গুরুশিষ্য পরম্পরা প্রকল্প’-এ শোলা শিল্পের প্রশিক্ষণের অনুমোদন দেয়। ওই প্রশিক্ষণের জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। আবেদনকারীদের মধ্যে থেকে সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে যোগ্যদের বেছে নেওয়া হয়। সাধারণত দুঃস্থ, ১৮ থেকে ৩০ বছরের বেকাররাই এই সুযোগ পান। প্রার্থীদের কাজে আগ্রহের বিষয়টিকেও গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়। সাক্ষাৎকার কমিটিতে অনন্তবাবু ছাড়াও থাকেন কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধি সহ বিভিন্ন স্তরের সদস্যরা।

প্রথম বছর ওই প্রকল্পে ১২ জন যুবক-যুবতীর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এ বারও ১০ নভেম্বর থেকে অনন্তবাবুর পশ্চিমপট্টির বাড়িতে ১৫ জন যুবক-যুবতী প্রশিক্ষণ নিতে শুরু হয়েছে। মূর্তির পাশাপাশি ঘর সাজানোর বিভিন্ন সামগ্রী তৈরির প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে ওই সব যুবক-যুবতীদের। প্রশিক্ষণ চলবে টানা চার মাস। কেন্দ্রীয় সরকারের শংসাপত্র, পরিচিতি পত্র ছাড়াও ওই সব শিক্ষার্থীরা দৈনিক ৩০০ টাকা করে প্রশিক্ষণ ভাতা পাবেন। স্বভাবতই শোলার কাজ শিখে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছেন রঘুনাথ দাস, শর্মিষ্ঠা দত্তরা।

পরোটার রঘুনাথ দাস দীর্ঘ দিন আগে বিএ পাশ করে কোনও কাজ জোটাতে না পেরে হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। বাবার দিনমজুরির কোনও রকমে চলে তাঁদের পাঁচ সদস্যের সংসার। কয়েক বছর আগে স্বামীকে হারিয়ে বাবার বাড়িতে ঠাঁই হয় নিমড়ার মানোয়ারা খাতুনের। ছেলে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। বাবার বাড়ির আর্থিক অবস্থাও ভাল নয়। বাবা অন্যের ট্রাক্টর চালান। সেই আয়েই চলে তাঁদের অভাবের সংসার। তাই ছেলের পড়াশোনা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছিলেন মানোয়ারা। প্রশিক্ষণ নেওয়া শুরু করার পর থেকেই মনোবল ফিরে পেয়েছেন দু’জনে। তাঁরা বলছেন, ‘‘কোথাও কোনও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা না হওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছিলাম। এখন মনে হচ্ছে ঘুরে দাঁড়াতে পারব।’’

একই প্রতিক্রিয়া স্থানীয় পশ্চিমপাড়ার বাসিন্দা গৃহবধূ শর্মিষ্ঠা দত্ত, সুলতা প্রধানদেরও। তাঁরা জানান, অভাবের সংসার। ঋণ পেলে ভাল, না হলে ভাতার টাকাটুকু পুঁজি করেই শোলার কাজ শুরু করবেন। অনন্তবাবু জানান, বাইরের বাজারে মূর্তি তো বটেই। ঘর সাজানোর সামগ্রীর চাহিদাও বাড়ছে। তাই শোলার কাজ শিখে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে। রয়েছে ভর্তুকিযুক্ত ঋণের সংস্থানও। গত বছর যাঁরা প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন, তাঁরা ঋণ নিয়ে নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছেন বলেও জানান অনন্তবাবু।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Training Courses কীর্ণাহার
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE