আঁতুড়: রামপুরহাটের ৮ নম্বর ওয়ার্ডে পড়ে রয়েছে আর্বজনা। নিজস্ব চিত্র
এলাকায় নিকাশি নালা নেই। সারা বছর নোংরা জল জমে থাকে রাস্তায়। বর্ষাকালে সমস্যা আরও বাড়ে। সামান্য বৃষ্টিতেও অন্য পাড়ার জল এসে এলাকায় জমা হয়। জমা জলে এলাকার বাড়ি যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তেমনই দিনের পর দিন জমা জলে মশার উপদ্রব বেড়েছে। এমনই হাল রামপুরহাট পুরসভার ৮ ও ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের অনেক এলাকার।
ওই দুই ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের ক্ষোভ, মশার উৎপাত একটাই বেড়েছে যে, সব সময় তাঁদের ডেঙ্গির আতঙ্ক তাড়া করছে। নিকাশি সমস্যা সমাধানে এলাকার কাউন্সিলর ও পুরপ্রধানের কাছে লিখিত আবেদন জানিয়ে কোনও কাজ হয়নি বলেও তাঁদের অভিযোগ। বস্তুত, রামপুরহাট শহর জুড়েই প্রধান প্রধান নিকাশি নর্দমার এমনই অবস্থা বলে এলাকাবাসীর দাবি।
শুধু পুর-এলাকার বাসিন্দারাই নন, রামপুরহাট শহরের জঞ্জাল সাফাই নিয়ে একাধিক প্রশ্ন তুলেছে স্বাস্থ্য দফতরও। রামপুরহাট এখন স্বাস্থ্য জেলা। তার এক কর্তা জানান, পুরসভার ১৮টি ওয়ার্ডের মধ্যে বেশ কিছু ওয়ার্ডেই নিয়মিত জঞ্জাল সাফাই হয় না। এর ফলে ওই সমস্ত এলাকায় জ্বরের প্রকোপ দেখা দেয়। বর্তমানে রামপুরহাটের তুলনায় নলহাটি পুরসভা বেশি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন বলেও স্বাস্থ্য জেলার কর্তাদের দাবি।
রামপুরহাটের সহকারী মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক স্বপন কুমার ওঝা জানান, স্বাস্থ্য জেলার অধীন রামপুরহাট ও নলহাটি— এই দুই পুরসভা ছাড়াও রামপুরহাট মহকুমা এলাকার ৮টি ব্লকে সম্প্রতি ডেঙ্গি অনুসন্ধান কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। ৩০ অক্টোবর থেকে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত এই কর্মসূচি চলবে। ওই কর্মসূচি অনুযায়ী দুই পুর-এলাকায় পুরসভার স্বাস্থ্যকর্মীদের নিয়ে ছোট ছোট দল করা হয়েছে। দলের সদস্যেরা পুর-এলাকার প্রতিটি বাড়িতে গিয়ে জ্বরে আক্রান্ত আছেন কিনা, তা খোঁজ নেবেন। স্বপনবাবুর কথায়, ‘‘জ্বর হলে কী কী করনীয়, সে ব্যপারেও বাসিন্দাদের সচেতন করবেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। প্রতি মাসে দু’বার এই অনুসন্ধান কর্মসূচি হবে। রামপুরহাট পুর-এলাকায় ৪০টি এবং নলহাটির জন্য ৩৬টি দল গঠন করা হয়েছে।’’
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, ডেঙ্গি অনুসন্ধান কর্মসূচিতে যোগদানকারী দলের সদস্যদের মশার লার্ভা চেনার প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছে। পুর-এলাকায় ডেঙ্গির জীবাণুবাহী মশার লার্ভা দেখতে পেলে কর্মীরা প্রথমে পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগকে জানাবেনন। এ ছাড়া কোনও এলাকায় জল বা জঞ্জাল জমে থাকলেও কর্মসূচির সঙ্গে যুক্ত স্বাস্থ্যকর্মীরা পুরসভাকে রিপোর্ট দেবেন। পুরসভা সাত দিনের মধ্যে ওই সমস্ত এলাকায় জমা জল ও জঞ্জাল সাফ করার ব্যবস্থা করবে।
রামপুরহাট স্বাস্থ্য জেলার অধীন ৮টি ব্লকের বিডিওদের অধীনে গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরেও ডেঙ্গি অনুসন্ধান কর্মসূচির কাজ চলছে। তার জন্য ব্লক স্তরে ছোট ছোট দল তৈরি হয়েছে। সদস্যদের রিপোর্ট অনুযায়ী বিডিও-রা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করবেন বলে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে।
শহরের জঞ্জাল সাফাই নিয়ে বাসিন্দা এবং স্বাস্থ্য দফতরের তোলা প্রশ্ন প্রসঙ্গে রামপুরহাটের পুরপ্রধান অশ্বিনী তিওয়ারি জানান, নলহাটি পুরসভার ১৫টি ওয়ার্ড, সেখানে রামপুরহাটে ১৮টি। এলাকা বড় হওয়ায় প্রত্যেকটি ওয়ার্ডে সমান ভাবে পরিষেবা সব সময় দেওয়া যায় না। পুরপ্রধানের দাবি, ১৮টি ওয়ার্ডে রোজ ৫টি ট্রাক্টরে জঞ্জাল সাফাই করা হয়। কিন্তু অলিগলিতে ট্রাক্টর ঢোকে না। সে কথা মাথায় রেখে প্রতিটি ওয়ার্ডে ই-রিকশার মাধ্যমে জঞ্জাল পরিস্কারের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যেই ৫, ৮, ৯, ১৭, ১৮— এই ৫টি ওয়ার্ডে প্রকল্পটি চালু করা হয়েছে। খুব শীঘ্রই বাকি ১৩ টি ওয়ার্ডে জঞ্জাল সাফাইয়ের জন্য ই-রিকশা চালু হবে।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, সম্প্রতি রামপুরহাট শহরে ডেঙ্গি সন্দেহে বেশ কয়েক জনের রক্ত নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এখনও পর্যন্ত ডেঙ্গির জীবাণু মেলেনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy