বাংলাদেশ ভবনে চলছে প্রস্তুতি। মঙ্গলবার। —নিজস্ব চিত্র।
আগামীকাল, বৃহস্পতিবার সকালে শান্তিনিকেতনের পথে গেলেই শুনতে পাওয়া যাবে, ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি/ আমি কি ভুলিতে পারি’ গানটি। ভাষা আন্দোলনের শহিদদের স্মরণ করে প্রতি বছরই বিশ্বভারতীতে পাঠরত বাংলাদেশের পড়ুয়ারা মাতৃভাষা দিবস পালন করেন। তাঁদের সঙ্গেই পা মেলান বিশ্বভারতীর অন্য পড়ুয়ারাও। ২১ ফেব্রুয়ারির সকালে গান গাইতে গাইতে এসে শহিদবেদিতে ফুল ও মালা দেন তাঁরা। অন্য বছর লিপিকা প্রেক্ষাগৃহের সামনে শহিদবেদি করা হয়।
বিশ্বভারতী সূত্রে জানা গিয়েছে, এ বছর বাংলাদেশ ভবন উদ্বোধন হয়ে যাওয়ায় বাংলাদেশ ভবনেই সকালে শহিদ স্মরণ হবে। সকালের অনুষ্ঠান ছাড়াও সন্ধ্যায় লিপিকা প্রেক্ষাগৃহে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের অনুষ্ঠান হবে। বাংলাদেশ ছাড়াও সেখানে বিভিন্ন দেশের পড়ুয়ারা তাঁদের মাতৃভাষায় গান করবেন বলে জানা গিয়েছে। এ বছর বিশ্বভারতীতে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত হচ্ছে বিশ্বভারতী ইন্দিরা গাঁধী কেন্দ্রের বিদেশি ছাত্র সহায়তা প্রকোষ্ঠ এবং বাংলাদেশ ভবনের উদ্যোগে। বিদেশি ছাত্র সহায়তা প্রকোষ্ঠ সূত্রে জানা গিয়েছে, আগামীকাল, বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ ইন্টারন্যাশনাল গেস্ট হাউসের সামনে থেকে পদযাত্রা শুরু হয়ে বাংলাদেশ ভবন পর্যন্ত যাবে। সকাল ৯টা নাগাদ বাংলাদেশ ভবনে তৈরি হওয়া শহিদবেদিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করা হবে।
মঙ্গলবার দিনভর চলে তারই প্রস্তুতি। বাংলাদেশ ভবনে শহিদবেদির সামনে আলপনা দিলেন একদল বাংলাদেশি পড়ুয়া। তাঁদের সঙ্গে একই উদ্যম নিয়ে কাজ করলেন এ দেশের পড়ুয়ারাও। অন্য আর এক দল বাংলাদেশি ছাত্রছাত্রী তখন গানের মহড়া দিতে ব্যস্ত। বিদেশি ছাত্র সহায়তা প্রকোষ্ঠে চলছে চূড়ান্ত পর্যায়ের মহড়া। ইতিহাস বলছে, ভাষা নিয়ে ঢাকায় ১৯৪৭ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বরে আন্দোলন শুরু হয়। ১৯৪৮ সালের মার্চ মাসে একটি আন্দোলন হলেও ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলনের চরম প্রকাশ ঘটে। ওই দিন সকালে ১৪৪ ধারা অমান্য করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা রাজপথে বেরিয়ে এলে পুলিশ গুলি চালায়। বাংলা ভাষার জন্য লড়াই করে ২১ ফেব্রুয়ারি রফিক, সালাম, বরকতরা শহিদ হয়েছিলেন। ১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো বাংলা ভাষা আন্দোলনের প্রতি সম্মান জানিয়ে ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। এর পর থেকেই সারাবিশ্বে শ্রদ্ধার সঙ্গে এই দিনটি উদযাপিত হয়। নানা অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে পালিত হয় ‘অমর একুশে’। একই ভাবে বিশ্বভারতীতেও দিনটি যথাযথ মর্যাদার সঙ্গে পালিত হয়ে আসছে।
বিদেশি ছাত্র সহায়তা প্রকোষ্ঠ সূত্রে জানা গিয়েছে, আগামীকাল, বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ভবনে সকালে ভাষা শহিদদের স্মরণ হয়ে যাওয়ার পর বিকেলে লিপিকা প্রেক্ষাগৃহে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের অনুষ্ঠানটি হবে। সেখানে বিশ্বভারতীর বিদেশি পড়ুয়ারা যোগ দেবেন। বাংলাদেশ, চিন, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, রাশিয়া, ভিয়েতনাম, মায়ানমার, ইরানের পড়ুয়ারা তাঁদের মাতৃভাষায় গান করবেন। কিছু গানের ইংরেজি অনুবাদও পরিবেশিত হবে।
বাংলাদেশ ভবনের মুখ্য সমন্বয়ক মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায় জানালেন, আজ, বুধবার বাংলাদেশ ডেপুটি হাই কমিশনের উচ্চপদস্থ আধিকারিক শাহানাজ আখতার রানু শান্তিনিকেতনে এসে পৌঁছবেন। আগামীকাল সকালে শহিদ স্মরণে উপস্থিত থাকবেন। বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী, বিদেশি ছাত্র সহায়তা প্রকোষ্ঠের দায়িত্বপ্রাপ্ত ইন্দ্রাণী দাশ সহ বিশ্বভারতীর আধিকারিক, অধ্যাপক, কর্মী ও পড়ুয়ারা উপস্থিত থাকবেন বলে জানা গিয়েছে। বাংলাদেশ ভবনে শহিদ দিবসের স্মরণটি হওয়ায় খুশি বাংলাদেশি পড়ুয়ারা।
বাংলাদেশের রংপুরের মেজবাহুল ইসলাম, মোছা: জান্নাতুন নাহার মাধবী, চন্দন রায়, দেবতা হেমব্রমদের কথায়, ‘‘বিশ্বভারতীতে বাংলাদেশ ভবন হওয়ায় আমরা এক টুকরো বাংলাদেশ পেয়েছি এখানে। এই জায়গাতেই এ বছর শহিদবেদি করে ভাষা শহিদদের স্মরণ করব। এর থেকে খুশির বিষয় আর কিছু হতে পারে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy