Advertisement
০৫ মে ২০২৪

যদি কিছু হয়! বীরভূমে ‘ডামি’ সিপিএমের

মনোনয়ন শেষে মতিউর জানিয়ে দিলেন, দলের নির্দেশে তিনি মনোনয়ন জমা দিয়েছেন ঠিকই, কিন্তু বীরভূম লোকসভা আসনে প্রার্থী রেজাউল করিম-ই।

আবেদন: মনোনয়নপত্র জমা বামপ্রার্থী মতিউর রহমানের। নিজস্ব চিত্র

আবেদন: মনোনয়নপত্র জমা বামপ্রার্থী মতিউর রহমানের। নিজস্ব চিত্র

দয়াল সেনগুপ্ত
সিউড়ি শেষ আপডেট: ১০ এপ্রিল ২০১৯ ০০:৪১
Share: Save:

সাবধানের মার নেই— এই আপ্তবাক্য স্মরণ করেই বীরভূম লোকসভা কেন্দ্রে ‘ডামি’ বা বিকল্প প্রার্থী দাঁড় করাল সিপিএম। শনিবারই বীরভূম আসনে সিপিএমের হয়ে মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন রেজাউল করিম। তিনি প্রচারও চালাচ্ছেন জোরকদমে। কিন্তু, মঙ্গলবার, মনোনয়নের শেষ দিন ওই একই কেন্দ্রে দলের প্রতীকেই মনোনয়নপত্র জমা দিলেন সিপিএমের যুব সংগঠন ডিওয়াইএফের জেলা সম্পাদক মতিউর রহমান। মনোনয়ন শেষে মতিউর জানিয়ে দিলেন, দলের নির্দেশে তিনি মনোনয়ন জমা দিয়েছেন ঠিকই, কিন্তু বীরভূম লোকসভা আসনে প্রার্থী রেজাউল করিম-ই।

কামারহাটির সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিক্ষক রেজাউল করিম। লোকসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য তিনি সরকারি চাকরিতে ইস্তফা দিয়েছেন। কিন্তু, রাজ্য সরকার তাঁর ইস্তফা গ্রহণ না-করায় কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন বীরভূম কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী।

সম্প্রতি আদালত তাঁকে ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ছাড়পত্র দিয়েছে। সিপিএম নেতৃত্বের বক্তব্য, রেজাউলের মনোনয়নপত্রের স্ক্রটিনি শেষে চূড়ান্ত বৈধতা পাওয়ার আগে কোনও ‘সমস্যা’ তৈরি হয়, সেই আশঙ্কা থেকে বিকল্প পথ খোলা রাখতে ‘ডামি’ প্রার্থী দেওয়া। সিপিএমের জেলা সম্পাদক মনসা হাঁসদা বলছেন, ‘‘তৃণমূল, বিজেপি কাউকে বিশ্বাস নেই!’’

সিপিএম সূত্রে খবর, রেজাউল ২০১৭ সালে রাজ্যের স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তার কাছে স্বেচ্ছাবসরের আর্জি জানান। স্বাস্থ্য-শিক্ষা দফতর গত বছর তাঁর বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ তোলে। তাঁকে জানিয়ে দেওয়া হয়, রাজ্যের স্বাস্থ্যনীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আন্দোলনে তিনি জড়িত। তাই তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। রেজাউলের বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশ করা হয়। চার্জশিটের উত্তর দেন তিনি। অভিযোগ, তার পরেও স্বাস্থ্য-শিক্ষা দফতর তাদের সিদ্ধান্ত রেজাউলকে জানায়নি। তার মধ্যেই রেজাউলকে প্রার্থী করা হবে, দলের এমন সিদ্ধান্ত জানতে পেরে রেজাইল ৬ মার্চ স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তাকে চিঠি দিয়ে জানান, তিনি চাকরিতে ইস্তফা দিতে চান। স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা তখন সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষকে চিঠি দিয়ে রেজাউলের ইস্তফার বিষয়ে তাঁর মতামত জানতে চান।

আরও পড়ুন: দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

অধ্যক্ষ জানিয়ে দেন, তাঁর ইস্তফা গ্রহণ করা যেতে পারে। কিন্তু স্বাস্থ্য-শিক্ষা দফতর ২৯ মার্চ রেজাউলকে জানিয়ে দেয়, তাঁর ইস্তফা গ্রহণ করা হচ্ছে না।

রেজাউলের কথায়, ‘‘আমি এখন রাজ্য সরকারের কর্মী নই। ইস্তফা গ্রহণেও বাধা নেই। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায়ও বাধা নেই। আদালত তা-ই বলছে। আদালতের নির্দেশ নির্বাচন কমিশনকে পাঠানো হয়েছে। ডামি প্রার্থী দাঁড় করানোর প্রসঙ্গে যা বলার দল বলবে।’’ সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য তথা বোলপুর কেন্দ্রের প্রার্থী রামচন্দ্র ডোম বলেন, ‘‘কেউ ইস্তফা দিতে চাইলেও তাঁকে জোর করে আটকে রাখার চেষ্টা হচ্ছে রাজ্য সরকারের তরফে। যাতে তিনি প্রার্থী হতে না পরেন। এটা অগণতান্ত্রিক। আদালতের রায়ের পরে সমস্যা নেই, কিন্তু এমন মনোভাবের বিরুদ্ধে সতর্কতা তো নিতেই হবে।’’

জেলা সিপিএম নেতৃত্ব স্ক্রুটিনির দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে চাইছেন। যদি দেখা যায় রেজাউল করিমের মনোনয়ন নিয়ে কোনও সমস্যা নেই, সে ক্ষেত্রে মতিউর মনোনয়ন তুলে নেবেন বলে দল সূত্রের খবর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Lok Sabha Election 2019 Birbhum CPM
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE