Advertisement
০৫ মে ২০২৪
Rehabilitation centre

নানা প্রশ্নে নেশামুক্তি কেন্দ্র, মৃত্যু ঘিরে ক্ষুব্ধ পতণ্ডা

সিউড়ি ২ ব্লকের কেন্দুয়া পঞ্চায়েতের পতণ্ডা গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন বিশ্বজিৎ। বাড়িতে তাঁর বাবা-মা, স্ত্রী, দেড় বছরের শিশুকন্যা ও ভাই রয়েছে। শুক্রবার রাতে তাঁকে ওই কেন্দ্রে পাঠান পরিজনেরা।

আবাসিকের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে কৌতূহলী মানুষের ভিড় কড়িধ্যার ছোড়া গ্রামে (উপরে)। ঘটনাস্থলে পুলিশ। ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়

আবাসিকের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে কৌতূহলী মানুষের ভিড় কড়িধ্যার ছোড়া গ্রামে (উপরে)। ঘটনাস্থলে পুলিশ। ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়

নিজস্ব সংবাদদাতা 
সিউড়ি শেষ আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০২:২৩
Share: Save:

নেশার কবল থেকে মুক্ত করতে যে নেশামুক্তি কেন্দ্রের উপর ভরসা রেখেছিল পরিবার, সেই কেন্দ্র থেকেই নিতে হল আক্রান্তের দেহ। রবিবার সিউড়ির ছোড়া গ্রামের নেশামুক্তি কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন বিশ্বজিৎ ধীবরের (২৪) মৃত্যুর পরই ওই কেন্দ্র ঘিরে উঠতে শুরু করছে অনেক প্রশ্ন।

সিউড়ি ২ ব্লকের কেন্দুয়া পঞ্চায়েতের পতণ্ডা গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন বিশ্বজিৎ। বাড়িতে তাঁর বাবা-মা, স্ত্রী, দেড় বছরের শিশুকন্যা ও ভাই রয়েছে। শুক্রবার রাতে তাঁকে ওই কেন্দ্রে পাঠান পরিজনেরা। রবিবার সকালে তাঁর মৃত্যুর খবর আসে। এ দিন সকালে মৃতের পরিবার পরিজনরা উত্তেজিত অবস্থায় ওই নেশামুক্তি কেন্দ্রের সামনে হাজির হন। তবে, সিউড়ি থানার পুলিশ আগে থেকেই ঘটনার স্থলে উপস্থিত থাকায়। তাঁরা পরিস্থিতি সামাল দেয়। খবর পাওয়ার পরই অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে ঘটনাস্থলে পৌঁছে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। সিউড়ি জেলা হাসপাতালে ময়নাতদন্ত হয়েছে মৃতের। কিন্তু কেন, কীভাবে এমনটা হল, ওই কেন্দ্রের উপরে প্রশাসনিক নদরদারি আদৌ ছিল কি না, কেন্দ্রের অনুমোদন ছিল কিনা, উপযুক্ত পরিকাঠামো ছিল কি না— ঘটনার পর থেকেই এমন একাধিক প্রশ্নই ঘোরাফেরা করছে।

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, নেশামুক্তি কেন্দ্র করতে হলে কেন্দ্রীয় সরকারের মিনিস্ট্রি অফ সোশ্যাল জাস্টিস অ্যান্ড এমপাওয়ারমেন্টের থেকে প্রয়োজনীয় ছাড়পত্র নিতে হয়। উল্লেখ করতে হয়, কত সংখ্যক অসুস্থকে ওই কেন্দ্রে রাখা হবে। সেই অনুয়ায়ী উপযুক্ত পরিকাঠামো আছে কি না খতিয়ে দেখার পর অনুমোদন ও সরকারি সহায়তাও মেলে। মনোরোগ বিশেষজ্ঞ, চিকিৎসক, কাউন্সিলরদের নজরদারিতেই নেশার কবলে পড়া অসুস্থ রোগীদের সুস্থ করে মূলস্রোতে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। তবে সেসব ঠিকঠাক হচ্ছে কি না, সেটা খতিয়ে দেখার দায়িত্ব জেলা সমাজকল্যাণ দফতরের। সিউড়ির ওই কেন্দ্রে অনুমোদন ছিল কি না, উপযুক্ত পরিকাঠামো ছিল কি না, চিকিৎসকেরা নিয়মিত যেতেন কি না, সেসব প্রশ্নের যথাযথ উত্তর মেলেনি। জেলা সমাজকল্যাণ আধিকারিক অশোক পোদ্দার বলেন, ‘‘ওই কেন্দ্রের ঠিক কী অবস্থা তা বিশদে খোঁজ নিয়ে বলতে পারব।’’ জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘নেশার কবল থেকে মুক্ত করতে হলে চিকিৎসক ছাড়া তা সম্ভব নয়। সেটা সরকারি পরিকাঠাতেই সম্ভব। বাইরে যে সব কেন্দ্র গজিয়ে উঠেছে সেগুলির পরিকাঠামো আদৌ উপযুক্ত কি না সেটা জানা নেই।’’

ওই কেন্দ্রের মালিক পাথরচাপুড়ির বাসিন্দা শেখ গালিব আলি খান ২৬ জানুয়ারি পথ দুর্ঘটনায় মারা যান। তবে পুলিশ ও স্থানীয় পঞ্চায়েত সূত্রে খবর ওই কেন্দ্রের অনুমোদন ছিল। কড়িধ্যা গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান উজ্জ্বল সিংহ জানিয়েছেন, ওই কেন্দ্র নিয়ে আগে কোনও অভিযোগ ছিল না।

প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে খবর ২০১৮ সালের জুলাই মাসে কেন্দ্রটি গড়ে উঠে। বিভিন্ন নেশার কবলে পড়া এ পর্যন্ত ৪১০ জন রোগী এ পর্যন্ত ওই কেন্দ্রে ভর্তি হয়েছিলেন। বর্তমানে ৪১ জন আবাসিক ছিলেন। কেন্দ্রের এক কর্মীর দাবি, আবাসিকদের প্রত্যেকের নিয়মিত কাউন্সেলিং, চিকিৎসা হতো। যে যুবক মারা গিয়েছেন তিনি এই কেন্দ্রে আসার পর থেকে আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠায় গামছা দিয়ে হাত পা বেঁধে রাখা হয়েছিল। পরে শ্বাস কষ্টজনিত সমস্যা নিয়ে সিউড়ি জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হলে তিনি মারা যান। কেউ তাঁকে মারধর করেনি বলে দাবি কর্মীদের। তবে মৃতের মাথায়, পিঠে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে বলে দাবি করেছেন তাঁর পরিজনেরা। পুলিশ জানিয়েছে, বাঁধা

অবস্থায় ওই যুবক দেওয়ালে বা অন্য কোথাও মাথা ঠুকেছেন কি না তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Rehabilitation centre Patand
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE