Advertisement
০৭ মে ২০২৪

দুধ-ছানার ব্যবসাই লক্ষ্মী ময়ূরেশ্বরের

নানুরের গোপালনগর গ্রামের পরিমল হাজরার এক সময় সংসার চলত দিনমজুরি করেই। এক ছটাকও জমি-জায়গা ছিল না। থাকার মধ্যে ছিল মাথা গোঁজার মতো ছোট্ট একটা মাটির বাড়ি।

অর্ঘ্য ঘোষ
ময়ূরেশ্বর শেষ আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০১৭ ০১:৩৫
Share: Save:

বছর কয়েক আগেও ওরা ছিলেন দিনমজুর কিংবা প্রান্তিক চাষি। অধিকাংশের সংসারেই ছিল নুন আনতে পান্তা ফুরনোর হাল। দুধ-ছানার ব্যবসা করে পরিবারের সেই হতদরিদ্র চেহারা বদলে দিয়েছেন পরিমল হাজরা, দিলীপ দাসরা।

নানুরের গোপালনগর গ্রামের পরিমল হাজরার এক সময় সংসার চলত দিনমজুরি করেই। এক ছটাকও জমি-জায়গা ছিল না। থাকার মধ্যে ছিল মাথা গোঁজার মতো ছোট্ট একটা মাটির বাড়ি। বছর পনের আগে দিনমজুরির পাশাপাশি একটি গরু কিনে দুধের ব্যবসা শুরু করেন। এখন তাঁদের বাড়িতে আটটি গরু, একতলা পাকাবাড়ি, পাম্পসেট। হয়েছে বিঘে দেড়েক জমিও। অর্থাভাবে নিজের বেশি দূর পড়াশোনা এগোয়নি। কিন্তু, তার তিন মেয়েই স্কুলে যায়।

পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, নিজের বাড়িতেই দৈনিক দুধ হয় গড়ে ২৫/৩০ কেজি। ২৮/৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করে খরচ খরচা বাদ দিয়ে বাড়ির দুধ থেকেই লাভ হয় ২৫০/৩০০ টাকা। পাশাপাশি অন্যের বাড়ির দুধ থেকে তার দু’প্রস্থ লাভ হয়। দুধ দুইয়ে দেওয়ার জন্য মজুরি বাবদ কেজি প্রতি ২০০ গ্রাম দুধ তো মেলেই, উপরন্তু ওই গৃহস্থের কাছ থেকে ২০/২২ টাকা দরে মেলে দুধও। বাজারে তা কেজি প্রতি ২৮/৩০ টাকা বিক্রি হয়। দুধের ব্যবসা সামলাতে গিয়ে আজ নিজের জমি চাষ করতে পরিমলবাবুকেই মজুর খাটাতে হয়। পরিমলবাবুর কথায়, ‘‘দুধের ব্যবসাই লক্ষ্মী। সব কিছুই ব্যবসা থেকেই।’’

একই বক্তব্য ওই গ্রামের অরুণ মণ্ডল, ময়ূরেশ্বরের ঢেকা গ্রামের দিলীপ দাস, অর্জুন মণ্ডলদের। তবে তাঁরা দুধের পাশাপাশি ছানা, মোওয়া তৈরির ব্যবসাও করেন। মূলত কৃষিজীবী অধ্যুসিত ঢেকা গ্রামে ১০টি পরিবারের এখন প্রধান জীবিকাই হয়ে গিয়েছে ওই ব্যবসা। গৌণ হয়েছে চাষ। ব্যবসায়ীদের হিসেবে, চার কেজি দুধ থেকে এক কেজি ছানা পাৈওয়া যায়। ২০ টাকা জ্বালানি খরচ পড়ে। ছানা গড়ে ১৩০/১৫০ টাকা, আর মোওয়া ১৭০/১৮০ টাকা দাম মেলে।

বছর দশেক আগেও কাঠা দশেক জমি চাষ এবং দিনমজুরি করে সংসার চলত ঢেকার দিলীপ দাসের সংসার। তার এক ছেলেমেয়ে স্কুলে যায়। হয়েছে দোতলা পাকাবাড়ি, পাম্পসেট, বিঘে আড়াই জমি। দীর্ঘ দিন ধরে বিঘে পাঁচেক জমি চাষ করেও সংসারে স্বাচ্ছন্দ্য ফেরাতে পারেননি ওই গ্রামেরই লক্ষ্মণ মণ্ডল। তাঁর ছেলে অর্জুন বছর সাতেক ধরে দুধ ছানার ব্যবসা করে পাম্পসেট সহ একতলা পাকা বাড়ি করে ফেলেছেন। কিনেছেন মোটরবাইকও। তাঁরা জানান, ব্যবসার ফলে সকলেরই কমবেশি স্বাচ্ছন্দ্য এসেছে। ওই মোটরবাইকে গ্রামে দুধ জোগার করা হয়। ছানা-মোওয়া তৈরি করে বাজারে বিক্রি করা হয়। এঁদের কথায়, ‘‘মোটরবাইক দূরের কথা, এক দিন তো সাইকেল কেনার কথাও ভাবতে পারতাম না।’’

সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরী জানান, ওই ব্যবসায়ীদের অভিনন্দন। আমরাও প্রাণীপালণের পাশাপাশি ওই সব ক্ষুদ্র কুটির শিল্পে গুরুত্ব দিচ্ছি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Milk business ময়ূরেশ্বর
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE