ছাত্রের রহস্যময় মৃত্যুর ঘটনায় বাজেয়াপ্ত স্কুলের সিসিটিভি-র ফুটেজ। প্রতীকী ছবি।
বাঁকুড়ার স্কুল-ছাত্রের রহস্যময় মৃত্যুর ঘটনায় ময়না-তদন্তের রিপোর্টে চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে এল। সেই সঙ্গে উসকে দিল ছাত্রটিকে স্কুলে মারধরের পুরনো অভিযোগকে। মাথায় আঘাতের কারণেই তৃতীয় শ্রেণির ওই ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে বলে ময়না-তদন্তের রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। কী ভাবে ওই ছাত্রের মাথায় আঘাত লাগল, সেই প্রশ্ন তুলে ফের স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল তুলেছেন মৃতের পরিবার। তাঁদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন অভিভাবকদের একাংশ।
বাঁকুড়া জেলা পুলিশ সুপার কোটেশ্বর রাও রবিবার বলেন, “মৃত ছাত্রের দেহের ময়না-তদন্তের রিপোর্ট আমরা পেয়েছি। তদন্তের কাজে তা আমাদের কাজে লাগবে। ঘটনার যথাযথ তদন্ত চলছে।” তদন্তকারীদের সূত্রে জানা যাচ্ছে, রূপমের মৃত্যুর কারণ নিয়ে আরও নিশ্চিত হতে দেহের কিছু অংশ ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য পাঠানোর বিষয়েও চিন্তাভাবনা করছে পুলিশ।
বাঁকুড়া শহর লাগোয়া একটি বেসরকারি স্কুলে পড়াশোনা করত ওন্দার রতনপুরের বাসিন্দা ওই ছাত্র। ২৩ জুলাই স্কুলে গিয়ে সে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে। অচৈতন্য অবস্থায় স্কুল থেকেই তাকে বাঁকুড়া মেডিক্যালে ভর্তি করানো হয়। সেখানে ভেল্টিলেশনে তাকে রাখা হয়। তখনই তার পরিবার অভিযোগ তুলেছিলেন, সুস্থ অবস্থায় ছেলেটিকে স্কুলে পাঠানো হয়েছিল। স্কুলে কী হল, যে সে এমন গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ল! সে জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছিল ছাত্রের পরিবার। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২ অগস্ট মৃত্যু হয় ছাত্রের।
তারপরেই ছাত্রটির বাবা বাঁকুড়া সদর থানায় স্কুল কর্তৃপক্ষ-সহ স্কুলের এক শিক্ষক ও শিক্ষিকা এবং তার এক সহপাঠীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। তদন্তের দাবিতে অভিভাকদের একাংশ বাঁকুড়া শহরের পথে নামেন। জেলাশাসক উমাশঙ্কর এস-এর কাছেও তদন্তের দাবিতে তাঁরা আর্জি জানান।
এর মধ্যে অভিযুক্ত শিক্ষক ও শিক্ষিকা আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন নেন। ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ ওই স্কুলে গিয়ে শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীদের জিজ্ঞাসাবাদ করে। বাজেয়াপ্ত করা হয় স্কুলের সিসিটিভি-র ফুটেজ।
ঘটনার পর থেকেই ছাত্রের পরিবার দাবি করেছিলেন, পড়ুয়াদের কাছে তাঁরা জেনেছেন, ক্লাসে ঝিমনোয় ছাত্রটিকে এক শিক্ষিকা মারধর করেছিলেন। ময়না-তদন্তের রিপোর্ট জানার পরে আরও জোরাল ভাবে সেই অভিযোগ তুলেছে মৃত ছাত্রের পরিবার। রবিবার মৃতের বাবা দাবি করেন, “ময়না-তদন্তের রিপোর্টে পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে, আমার ছেলের মাথায় জোরাল ভাবে আঘাত করা হয়েছিল। আর তার জেরেই মৃত্যু হয়েছে ওর। সিসিটিভি ফুটেজে ওই শিক্ষিকার সঙ্গে একটি মোটা লাঠির ছবি দেখা গিয়েছে। ওই লাঠি দিয়েই আমার ছেলেকে মারা হয়েছে বলে মনে করছি।”
স্কুলের প্রধান শিক্ষকের দাবি, “সিসিটিভির ফুটেজে ছাত্রটিকে কোনও শিক্ষক-শিক্ষিকা মারধর করছেন, এমন ছবি দেখা যায়নি। পুলিশকে আমরা তদন্তে সব রকম ভাবে সহযোগিতা করছি। আমরাও চাই ঘটনার সত্যতা বেরিয়ে আসুক।”
যদিও ছাত্রের বাবা এ দিন অভিযোগ তোলেন, “প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা করছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। সত্যকে আড়াল করা হচ্ছে। সিসিটিভি ফুটেজে অনেক কিছুই বাদ দেওয়া হয়েছে।” অভিযোগ অবশ্য অস্বীকার করেছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ।
অভিভাবকদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে জেলাশাসক মহকুমাশাসকের (বাঁকুড়া সদর) নেতৃত্বে একটি কমিটি গড়ে স্কুলের বিরুদ্ধে ওঠা গাফিলতির অভিযোগের তদন্ত শুরু করেছেন। এ দিন জেলাশাসক বলেন, “আমরা স্কুলের গাফিলতির অভিযোগের তদন্ত করে দেখছি। ছাত্র-মৃত্যুর ঘটনার তদন্ত পুলিশ করছে।”
মৃত ছাত্রের বাবার আক্ষেপ, “ওই ঘটনার পরে আমার স্ত্রী মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন। বড় ছেলের সামনের বছর মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার কথা। কিন্তু তার স্কুলে যাওয়া, পড়াশোনা সবই বন্ধ হয়ে গিয়েছে। আমার ছেলের মৃত্যুর জন্য যারা দায়ী তাদের শাস্তি দিতেই হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy