Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
উদ্যোগী রাজ্যের তিন দফতর

শিঙ্গি, মাগুর পাতে ফিরিয়ে আয়ের ভাবনা

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, কোন দল নির্বাচিত হবে সেটি এবং সমগ্র প্রকল্পকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব গ্রামীণ জীবিকা মিশনের।

স্বনির্ভরতা: কাঁচের চৌবাচ্চায় চলছে পরিচর্যা। দুবরাজুপরে। নিজস্ব চিত্র

স্বনির্ভরতা: কাঁচের চৌবাচ্চায় চলছে পরিচর্যা। দুবরাজুপরে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
দুবরাজপুর শেষ আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৬:৩০
Share: Save:

শিঙ্গি, দিশি মাগুর, কই—মাছ, ভাত প্রিয় বাঙালির পাতে এমন সুস্বাদু মাছ আর দেখা যায় কই! বাজারে কিছু কিছু মিললেও দাম তো আমজনতার নাগালের বাইরে।

ইচ্ছুক ও সক্ষম মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে দিয়ে ওই প্রজাতির মাছের প্রজনন ঘটিয়ে চারাপোনা উৎপাদন করে পরিস্থিতি সামলাতে উদ্যোগী হয়েছে সরকারের তিনটি দফতর। উদ্দেশ্য দু’টি। এক, প্রায় ইতিহাস হতে চলা মাছগুলিকে ফের বাঙালির পাতে ফেরত আনা। দুই, স্বনির্ভর দলের মহিলাদের স্থায়ী রোজগার বা আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্য দেওয়া। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, গত নভেম্বরে রাজ্যস্তরের যৌথ বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত হয়।

রাজ্য সরকারের আদমি (ডব্লুউবিএডিএমআই)-এর অর্থ সাহায্য, জেলা মৎস্য দফতরের কারিগরি সহায়তায় এবং রাজ্য গ্রামীণ জীবিকা মিশনের প্রচেষ্টায় ইতিমধ্যেই জেলায় পাঁচটি স্বনির্ভর দলের মহিলারা এ কাজে নির্বাচিত হয়েছে। তিনটি গোষ্ঠী ইতিমধ্যেই কাজে নেমে পড়েছে। তেমনই একটি মহিলা স্বনির্ভর দল দুবরাজপুরের যশপুর পঞ্চায়েত এলাকার কৃষ্ণনগর গ্রামের অঞ্জলি স্বনির্ভর দল। ওই দলে অঞ্জলির ১০ জন সদস্য ছাড়াও অন্য একটি দলের তিন সদস্য রয়েছেন। ইতিমধ্যেই দলটি স্ত্রী ও পুরুষ মাগুরের প্রজনন ঘটিয়ে, নিষিক্ত ডিম ফুটিয়ে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মাগুর ছানা তৈরি করেছেন। সেগুলিকে বড়ও করেছেন তাঁরা।

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, কোন দল নির্বাচিত হবে সেটি এবং সমগ্র প্রকল্পকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব গ্রামীণ জীবিকা মিশনের। দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলার যে সব দল মাছ চাষের সঙ্গে যুক্ত ছিল বা এই দায়িত্ব নিতে সক্ষম তার খোঁজ পেতে সম্পদ কর্মী ও স্থানীয় প্রতিটি সঙ্ঘ সমবায়ের (অনেকগুলি স্বনির্ভর দল নিয়ে গঠিত) মাধ্যমে নাম চাওয়া হয়েছিল। নাম পাওয়ার পর সেটা যাচাই করা হয়েছে ব্লক প্রশাসনের মাধ্যমে। দফতরের জেলা প্রকল্প আধিকারিক অংশুমান ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘দলগুলি চূড়ান্ত করে সহযোগী দফতরকে জানানো হয়। এরপরই অর্থ সাহায্য ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা হয়। উত্তর ২৪ পরগণার নিমপীঠ রামকৃষ্ণ আশ্রম থেকে দু’দফায় হাতে কলমে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন পাঁচটি দলের মহিলা সদস্যরা। প্রতি
ইউনিটকে গড়ে দুই লক্ষ টাকা করে অর্থ সাহায্য করা হয়েছে।’’ তিনি জানাচ্ছেন, দুবরাজপুরের ওই দলটি ছাড়াও বোলপুরের রূপপুর পঞ্চায়েত এলাকার আদিবাসী মহিলা স্বনির্ভর দল সিধো-কানহু এবং রাজনগরে মা মঙ্গলচণ্ডী স্বনির্ভর দল উৎপাদন
শুরু করেছে।

দুবরাজপুরে যশপুরে ‘অঞ্জলি’ নামের যে দলটি মাগুরের চারাপোনা উৎপাদন করছে, সেই দলের দলনেত্রী পূর্ণিমা ধীবর, সদস্যা পারুল ধীবর অন্নপূর্ণা ধীবররা বলছেন, ‘‘শেড ছাড়াও এক বর্গ মিটার মাপের ১৮টি কাঁচের চৌবাচ্চা তৈরি করেছি। সেগুলিতে নিয়মিত জল পাল্টানোর ব্যবস্থা, প্রতিটিতে অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা করা হয়েছে।’’ আদামি প্রকল্পের জেলা প্রকল্প অধিকর্তা শ্রীধর সামন্ত বলছেন, ‘‘এর মাধ্যমে মহিলাদের আর্থিক স্বনির্ভরতা তৈরি হবে। পাশাপাশি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের পাতে ওই মাছে তুলে দেওয়া সম্ভব হবে।’’

জেলা মীন আধিকারিক (সমবায়) রণজিত মণ্ডল জানান, মাগুরের চারাগুলি আড়াই ইঞ্চি বড় হলেই জেলা মৎস্য দফতর সেগুলিকে প্রতি পিস পাঁচ টাকা দরে কিনে নেবে। তাঁর কথায়, ‘‘যে পরিকাঠামো গড়ে দেওয়া হয়েছে তাতে ২ লক্ষ পর্যন্ত মাগুর চারা উৎপাদিত হতে পারে।’’ দফতর সূত্রের খবর, বর্তমানে সরকারি সহায়তায় মাছের খাবার দেওয়া হচ্ছে। মাছ বিত্রি শুরু হলে দলকেই এই খরচের ভার নিতে হবে।

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্তমানে দুবরাজপুরর ইউনিটে ১২ হাজার চারা রয়েছে। বোলপুর ও রাজনগরেরও কম বেশি একই সংখ্যক মাগুর চারা উৎপন্ন হয়েছে। পরের ধাপে সিঙ্গি, কই, ট্যাংরা মাছের চারা উৎপাদন করা হবে। সামনের বছর থেকে রামপুরহাট এবং মহম্মদবাজারের ইউনিটও উৎপাদন শুরু করবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Fish Fisheries Department
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE