Advertisement
০৫ মে ২০২৪

পড়ানো থেকে হিসেব, ভরসা এক শিক্ষকেই

শতাধিক ছাত্রীর পড়াশোনা, মিলের রান্নার দেখভাল, স্কুলের করণিক থেকে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব, সব কিছুই সামলাতে হয় এক জনকেই।

খয়রাশোলের লোকপুর বালিকা (নিম্ন মাধ্যমিক) বিদ্যালয়। নিজস্ব চিত্র

খয়রাশোলের লোকপুর বালিকা (নিম্ন মাধ্যমিক) বিদ্যালয়। নিজস্ব চিত্র

দয়াল সেনগুপ্ত
খয়রাশোল শেষ আপডেট: ০৪ জানুয়ারি ২০১৯ ০২:১৩
Share: Save:

পূর্ণ সময়ের কোনও শিক্ষক নিয়োগ হয়নি। প্রাথমিক স্কুলের এক শিক্ষককে তুলে এনে জোড়াতালি দিয়ে চালানো হচ্ছে সরকার-পোষিত খয়রাশোলের লোকপুর বালিকা (নিম্ন মাধ্যমিক) বিদ্যালয়। শিক্ষক না থাকায় অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত অনুমোদন থাকলেও শুধুমাত্র পঞ্চম শ্রেণির জন্যই ভর্তি করা হচ্ছে।

শতাধিক ছাত্রীর পড়াশোনা, মিলের রান্নার দেখভাল, স্কুলের করণিক থেকে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব, সব কিছুই সামলাতে হয় এক জনকেই। অভিভাবকদের মতে, এক জন শিক্ষক, তিনি যতই আন্তরিক হয়ে থাকুন কোনও ভাবেই সব দিক সামাল দিয়ে একা এত সংখ্যক ছাত্রীকে পড়ানোর কাজটা ঠিক মতো করতে পারবেন না। তাই শিক্ষাবর্ষের শুরুতে আবেদন পত্র তুললেও, ওই স্কুলে নিজের কন্যা সন্তানকে পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি করা ঠিক হবে কি না, তা নিয়ে দ্বিধা বিভক্ত খয়রাশোলের লোকপুর ও সংলগ্ন এলাকার অভিভাবকেরা।

স্কুল ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এলাকার একমাত্র লোকপুর উচ্চবিদ্যালয়ে প্রচুর সংখ্যক ছাত্রছাত্রী পড়াশোনা করে। পড়ুয়ার সংখ্যা ২৩০০। তার মধ্যে ছাত্রীদের সংখ্যা অর্ধেকেরও বেশি। এত সংখ্যক ছাত্রছাত্রীদের একটি স্কুলের প্রতি নির্ভরতা বা চাপ কমাতেই এলাকায় মেয়েদের জন্য পৃথক স্কুল খোলার দাবি উঠে বেশ কয়েক বছর আগে। সেই দাবিতে মান্যতা দিয়ে এলাকায় একটি সরকার পোষিত বালিকা বিদ্যালয় খোলার অনুমোদন মেলে ২০১৪ সালে। পরের বছর থেকে লোকপুর স্কুলের মধ্যেই একটি অংশে ক্লাস শুরু হয়।

যদিও প্রথম থেকে কোনও শিক্ষক বা শিক্ষিকা নিয়োগ হয়নি। অবসরপ্রাপ্ত তিন শিক্ষক দিয়ে স্কুলের পঠনপাঠনের কাজ চলতে থাকে।

এক বছর পরে জঙ্গলমহল অ্যাকশন প্ল্যানের টাকায় লোকপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় স্কুলের নিজস্ব ভবন তৈরি হলে সেখানে বালিকা স্কুলটি স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু, অতিথি শিক্ষকেরা সকলেই অব্যহতি নেওয়ায় ২০১৮ সালের মার্চ থেকে চূড়ান্ত সমস্যায় পড়েছে স্কুলটি। বর্তমানে খয়রাশোলের আমলাকুড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক অরুণাভ রায়কে তুলে এনে লোকপুরের নিম্ন মাধ্যমিক স্কুল চালু রাখার ব্যবস্থা করেছে জেলা শিক্ষা দফতর। অভিভাবক থেকে এলাকাবাসী বলছেন, ‘‘যে দাবি নিয়ে মেয়েদের স্কুল হল, সেই উদ্দেশ্যই তো সফল হচ্ছে না।’’

অভিভাবকেরা জানাচ্ছেন, এক জন শিক্ষক থাকায় শুধু পঞ্চম শ্রেণিটুকুই ছাত্রীরা ওই স্কুলে পড়ার সুযোগ পাচ্ছে। পঞ্চম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হওয়ার পরই সকলকে ফের লোকপুর উচ্চবিদ্যালয় গিয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হতে হচ্ছে। এ বারই ১১৭ জন ছাত্রীকে টিসি (ট্রান্সফার সার্টিফিকেট) নিয়ে সেটা করতে হয়েছে। অন্য দিকে, যেহেতু মেয়েদের স্কুল হয়েছে তাই পঞ্চম শ্রেণিতে উচ্চ বিদ্যালয় ছাত্রী-ভর্তি নিতে চাইছে না। সমস্যা শুরু হয়েছে তা নিয়েও। এ বার যাঁরা মেয়েদের পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তির জন্য আবেদনপত্র তুলেছেন তাঁদের মধ্যে কার্তিক আঢ্য, প্রিয়তোষ কর্মকার, অজয় দত্ত, বাবলু চৌধুরীরা বলছেন, ‘‘আমরা দ্বিধায় পড়েছি। বহু আন্দোলনের পরে মেয়েদের জন্য স্কুল হয়েছে। মনে হচ্ছে, আমাদের স্কুলের পাশে থাকা উচিত। অথচ শিক্ষক না থাকায় এখানে মেয়েদের পড়াশোনা কেমন হবে সেই দুঃশ্চিন্তাও রয়েছে। সঙ্গে ভাবনা ষষ্ঠ শ্রেণিতে যদি লোকপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে ফিরতেই তা হলে এখানে ভর্তি করে কী লাভ।’’

ঘটনার সত্যতা মানছেন লোকপুর নিম্ন মাধ্যমিক (বালিকা) বিদ্যালয়ের দায়িত্বে থাকা অরুণাভ রায়। তিনি বলছেন, ‘‘এ বার ১০০টি আবেদন ইতিমধ্যেই তোলা হয়েছে। ছাত্রী-ভর্তির সংখ্যা ১২০ জন হবে। সব দিক সমালে এত সংখ্যক পড়ুয়াকে লাগাতার পাঁচটি ক্লাস করানো যথেষ্ট সমস্যার। কিন্তু, কী করব। উপায় নেই।’’ অতিথি শিক্ষক নিয়োগ হচ্ছে না কেন? স্কুল ও স্থানীয় সূত্রের খবর, অতিথি শিক্ষক নিয়োগ করতে এলাকার অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের (স্নাতক বা স্নাতকোত্তর) জন্য বিজ্ঞাপন আগে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু, সাড়া মেলেনি। পাঁচ, সাত হাজার টাকা সাম্মানিকে কেউ কাজে যোগ দিতে চাননি।

পরিস্থিতির কথা মানছেন খয়রাশোলের দক্ষিণ চক্রের বিদ্যালয় পরিদর্শক (প্রাথমিক) রবিউল ইসলাম। তিনি বলছেন, ‘‘শিক্ষক নিয়োগ হয়নি। কোনও রকমে স্কুলটি খোলা রাখা হয়েছে। তবে জেলা শিক্ষা দফতরের নির্দেশে ফের অতিথি শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি জারি করার প্রক্রিয়া শুরু হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

School Teacher Khoyrasol
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE