Advertisement
১১ মে ২০২৪

বছরভর গৃহস্থের জমিয়ে রাখা চালেই শুরু পুজো

ভাতের হাঁড়িতে ফেলার আগে এক মুঠো চাল আলাদা সরিয়ে রাখাই এলাকার গৃহস্থবাড়িতে নিয়ম ছিল। এক বছর ধরে জমিয়ে রাখা সেই চাল বাসন্তীপুজোর আগে তুলে দেওয়া হত পুজো কমিটির হাতে। বাড়ি-বাড়ি সংগ্রহ করা চালেই হত বাসন্তীপুজো। এ ভাবেই ঝালদায় সুবর্ণবণিক সমিতির পুজো চালু হয়েছিল।

সুবর্ণবণিক সমিতির পুজোয় মাতোয়ারা সবাই। —নিজস্ব চিত্র।

সুবর্ণবণিক সমিতির পুজোয় মাতোয়ারা সবাই। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ঝালদা শেষ আপডেট: ৩০ মার্চ ২০১৫ ০০:৩৮
Share: Save:

ভাতের হাঁড়িতে ফেলার আগে এক মুঠো চাল আলাদা সরিয়ে রাখাই এলাকার গৃহস্থবাড়িতে নিয়ম ছিল। এক বছর ধরে জমিয়ে রাখা সেই চাল বাসন্তীপুজোর আগে তুলে দেওয়া হত পুজো কমিটির হাতে। বাড়ি-বাড়ি সংগ্রহ করা চালেই হত বাসন্তীপুজো। এ ভাবেই ঝালদায় সুবর্ণবণিক সমিতির পুজো চালু হয়েছিল। সেই পুজোর বয়স এখন ১০৪ বছর। তবে সুবর্ণবণিক সমিতির উদ্যোগে ঝালদায় বাসন্তী পুজো শুরু হলেও এখন তা কেবলমাত্র একটি সম্প্রদায়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। পুজোর আনন্দ পেতে সমস্ত ঝালদাবাসী এখন পুজো মণ্ডপে জড়ো হন।

পুজো শুরু হয়েছিল খড় ও খেজুর পাতার চালায় মাটির মন্দিরে। এখন মন্দির পাকা। বৈদ্যুতিক আলো জ্বলছে। সময়ের চাহিদা মেনে পুজোর জাঁকজমকও বেড়েছে। প্রথা অনুযায়ী মন্দিরে নিত্য পুজোপাঠ হয়। সন্ধ্যা আরতি পুজোর সময় ঢাক-কাঁসর ঘণ্টা বাজে। পুজো কমিটির অন্যতম কর্তা উদিত চন্দ্র, বিশ্বজিৎ দত্ত বলেন, “এখানে প্রতিমায় অভিনবত্ব রয়েছে। দেবী অন্নপূর্ণার কাছে দেবাদিদেব মহাদেব অন্ন প্রার্থনা নিয়ে এসেছেন। কাশীর প্রতিমার আদলে এখানকার প্রতিমা।” ঝালদা সুবর্ণবণিক সমিতির সভাপতি তথা প্রাক্তন পুরপ্রধান মধূসুদন কয়াল বলেন, “সমিতির অধীনে প্রায় ৪০০টি পরিবার রয়েছে। মুষ্টিভিক্ষা উঠে গেলেও প্রতিটি পরিবার থেকে পুজোর সময় তাঁদের সাধ্যমত চাঁদা নেওয়া হয়। এ ছাড়া মন্দিরের নামে কয়েকটি বাড়ি আছে। যেখান থেকে ভাড়া আদায় করা হয়। খরচের টাকা এ ভাবেই উঠে আসে।”

পুজো শুরুর ভাবনা কী ভাবে? প্রবীণদের একাংশ জানান, শতবর্ষ আগে তাঁদের সমাজের বেশির ভাগ বাসিন্দাই অভাব-অনটনের মধ্যে ছিলেন। ঠিকমতো খাবার সংস্থানও হত না। সেই সঙ্কট থেকে মুক্তির জন্য তাঁরা অন্নপূর্ণার পুজো করবেন বলে মনস্থ করেছিলেন।

তিথির হেরফেরে এ বারে বাসন্তী পুজো পাঁচ দিন ধরে হচ্ছে। বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া পুজো আজ সোমবার পর্যন্ত চলবে। ঝালদায় অন্নপূর্ণা মন্দিরটি বিশাল সীমানা প্রাচীর দিয়ে ঘেরা। ভিতরে অন্তত ১০ হাজার পূণ্যার্থী সমবেত হওয়ার জায়গা রয়েছে। মাঝমাঠে পাকা মঞ্চ। উদ্যোক্তারা জানান, আগে ওই মঞ্চে চারদিন ধরে যাত্রাগান, পদাবলী কীর্তন প্রভৃতির আসর বসত। সমিতির সদস্যেরাই যাত্রা করতেন। এখন সময়ের অভাবে যাত্রাপালা হয় না। তবে যুগের চাহিদা মেনে চারদিনই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

পুজো চত্বরে দেখা গেল আইসক্রিম, ফুচকা, আলুকাবলির দোকানে কিশোরী ও কচিকাঁচাদের ভিড়। প্রতিমার সামনে স্মার্ট ফোনে নিজস্বী তুলছেন কমবয়েসি ছেলেমেয়েরা। একসময়কার মুষ্টিভিক্ষার পুজো যে এখন সবার পুজো হয়ে উঠেছে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE