সরকারি প্রকল্পে তৈরি হয়েছে শৌচাগার। কিন্তু ব্যবহার করা হয় না। জমে রয়েছে জ্বালানি। হুড়ার গ্রামের নিজস্ব চিত্র
সকালে মাঠে যাওয়া রোখা যায়নি। তাই ঘরে ঘরে শৌচালয় তৈরিতে রাজ্যের অন্যান্য জেলা কিছুটা এগোলেও পিছনের সারিতেই রয়ে গিয়েছে পুরুলিয়া। ১৯টি জেলার মধ্যে পুরুলিয়ার স্থান ১৮-তে। তাই এ বার এই কাজে গতি আনতে ‘পুরস্কার ও তিরস্কার’ নীতি চালু করল পুরুলিয়া জেলা প্রশাসন। ‘সার্বিক স্বাস্থ্যবিধান প্রকল্পে’র নাম বদলে করা হয় ‘নির্মল ভারত অভিযান’। মাস ছয়েক আগে তা বদলে হয়েছে ‘মিশন নির্মল বাংলা’। প্রকল্পের নাম বারবার বদলালেও মাঠেঘাটে শৌচকর্ম বন্ধ হয়নি। এই পরিস্থিতিতে আজ বৃহস্পতিবার ‘মিশন নির্মল বাংলা দিবসে’ পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতির জনপ্রতিনিধিদের জন্য ওই নীতির কথা জানাল জেলা প্রশাসন। এই প্রকল্পের তালিকায় উপরের দিকে নিজের এলাকাকে তুলে আনতে যে জনপ্রতিনিধি তাঁর নিজের গ্রামকে নির্মল করতে পারবেন অর্থাৎ সেই গ্রামের কেউ উন্মুক্ত স্থানে শৌচকার্য করবেন না, সেই জনপ্রতিনিধিকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে পুরস্কার হিসেবে ১০ লক্ষ টাকার একটি প্রকল্প বরাদ্দ করা হবে বলে জানিয়েছেন জেলাশাসক তন্ময় চক্রবর্তী। জেলাশাসক বলেন, ‘‘কোনও জনপ্রতিনিধি তাঁর গ্রামকে নির্মল গ্রাম হিসেবে গড়ে তুললে সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধি তাঁর গ্রামের উন্নয়নের জন্য ১০ লক্ষ টাকার যে প্রকল্পের প্রস্তাব দেবেন, প্রশাসন তা অনুমোদন করবে।’’
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৩ সাল থেকে ‘নির্মল ভারত অভিযান অভিযান’ প্রকল্প শুরু হয় রাজ্যে। মাস ছয়েক আগে রাজ্য সরকার এই প্রকল্পকে ‘মিশন নির্মল বাংলা প্রকল্প’ হিসেবে ঘোষণা করে। এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য বাড়িতে শৌচাগার তৈরি করে মাঠেঘাটে যত্রতত্র শৌচকর্ম বন্ধ করা। পুরুলিয়া জেলা পরিষদের জনস্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ উত্তম বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ওই প্রকল্পে মোট ১০,৯০০ টাকায় শৌচাগার গড়ে দেওয়া হচ্ছে। তাতে সরকারি অনুদান হিসেবে ১০ হাজার টাকা পাওয়া যাচ্ছে, এ ছাড়া উপভোক্তাকে দিতে হবে মাত্র ৯০০ টাকা। এই প্রকল্প সমস্ত বিপিএল পরিবারের জন্য প্রযোজ্য। পাশাপাশি প্রান্তিক চাষি, মহিলা-প্রধান পরিবার, প্রতিবন্ধী-সহ আরও কয়েকটি শ্রেণির মানুষও এই প্রকল্পের সুবিধা পাবেন। প্রশাসন কাজ শুরু করলেও চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত যে হিসেব মিলেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে জেলায় শৌচালয়বিহীন বাড়িতে শৌচালয় গড়ার কাজ হয়েছে প্রায় ৩২ শতাংশ। ২০১২ সালের সমীক্ষা অনুযায়ী, জেলার ২০টি ব্লকে ৫ লক্ষ ৪৫ হাজার ৫৪০টি বাড়িতে শৌচাগার নেই। এই বাড়ির বাসিন্দারা শৌচকার্য করেন খোলা মাঠে। তার মধ্যে এখনও পযর্ন্ত মাত্র ১ লক্ষ ৬৩ হাজার ৮৯৬টি বাড়িতে শৌচালয় গড়ে তোলা গিয়েছে। বাকি ৩ লক্ষ ৮১ হাজার ৬৪৬টি বাড়িতে এখনও শৌচাগার গড়ে তোলা যায়নি।
কিন্তু যেখানে শৌচালয় গড়ে তোলা গিয়েছে সেখানেও কী অভ্যেস বদলানো গিয়েছে? জেলার কয়েকটি ব্লকের কিছু গ্রামে ঘুরে দেখা গিয়েছে শৌচালয় গড়ে তোলা হলেও তা ব্যবহারে বাসিন্দাদের অনীহা। কেউ সেই শৌচালয়ে জ্বালানি রেখেছেন, কেউ নির্মাণ সামগ্রী রেখেছেন। কারও ফাঁকাই পড়ে রয়েছে। কেন শৌচালয় ব্যবহার করছেন না জানতে চাওয়ায় তাঁরা জানিয়েছেন, শৌচালয় ব্যবহারের জন্য যে পরিমাণ জলের প্রয়োজন, সেই সংস্থান তাঁদের নেই। ফলে শৌচালয় ব্যবহার করা যাচ্ছে না। কারও যুক্তি, পাকা শৌচালয়ে যে রকম ট্যাঙ্কের জলের সংযোগ থাকে এখানে তা নেই। ফলে বাড়ির পাশে দুর্গন্ধ হতে পারে ভেবেই তাঁরা ব্যবহার করেন না। জেলা পরিষদের বন ও ভূমি কর্মাধ্যক্ষ হলধর মাহাতো বলেন, ‘‘গ্রামের লোকজন জলের অভাবের যে যুক্তি দেখাচ্ছেন তা অস্বীকার করার উপায় নেই।’’
গত জানুয়ারিতে জেলার গ্রাম পঞ্চায়েতগুলির প্রধানদের সঙ্গে প্রশাসনিক বৈঠকে জেলাশাসক, জেলা পরিষদের সভাধিপতি-সহ সকলেই শৌচালয় গড়ার উপরে জোর দিয়েছেন। জেলাশাসক বলেন, ‘‘আমরা চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসের মধ্যে ২০টি ব্লকের ২০টি গ্রাম পঞ্চায়েতকে নির্মল পঞ্চায়েত হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছি। তার পাশাপাশি জনপ্রতিনিধিদেরও তাঁদের নিজেদের গ্রামকে নির্মল গ্রাম হিসেবে গড়ে তোলার জন্য পুরস্কার চালু করা হল।’’ তবে পুরস্কার নীতি চালুর কথা বললেও এই কর্মসূচি যে একটা সামাজিক আন্দোলন তা স্বীকার করে জেলাশাসক বলেন, ‘‘এটা তো দীর্ঘদিনের অভ্যেস। তবে বাচ্চারা কিন্তু এই অভ্যাস বদলাতে পারে। আমরা স্কুল, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে বাচ্চাদের শৌচালয় ব্যবহারের অভ্যাস গড়ে তোলার উপরে জোর দিচ্ছি।’’
আর তিরস্কার কাদের করা হবে? কী ভাবে? জেলাশাসক বলেন, ‘‘যে জনপ্রতিনিধিরা নিজেদের গ্রামকে নির্মল করতে পারবেন না, তাঁদের নামও আমরা প্রকাশ করব।’’ সরকারি কর্মচারীদেরও যাতে সবার বাড়িতে শৌচাগার থাকে, সে দিকেও প্রশাসন নজর দিচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy