প্রতীকী চিত্র।
বাজারে আলুর দাম প্রায় চল্লিশ ছুঁয়ে ফেলেছে। তবে, শুধু খাওয়ার আলুর দাম নয়, এ বার বীজ আলুর দাম প্রায় তিন গুণ বেড়েছে। ফলে, আলু চাষ করতে গিয়ে এ বার চূড়ান্ত সমস্যায় পড়েছেন চাষিরা। জেলার আলুচাষিদের অনেকেই গত বারের তুলনায় কম জমিতে চাষের কথা ভেবেছেন। যাঁরা ঝুঁকি নিয়ে চাষে নামছেন, তাঁরাও সংশয়ে এই ভেবে যে, পরের মরসুমে উৎপাদিত আলুর বাজার দর কম থাকলে ঘটিবাটি না বিক্রি করতে হয়!
জেলা কৃষি দফতর সূত্রে খবর, বীরভূমে মোট ২০ হাজার হেক্টর জমিতে আলুর চাষ হয়ে থাকে। আলু লাগাতে জেলার বড় অংশের চাষি ভিন্ রাজ্যের বীজের উপরে নির্ভর করে থাকেন। মূলত ওই বীজ আসে পঞ্জাব ও হিমাচলপ্রদেশ থেকে। পঞ্জাব থেকে আসা আলুর বীজের দাম বস্তা পিছু (৫০ কিলোগ্রাম) চার হাজার টাকা বা তারও বেশি। যেটা গত বছর দু’হাজার টাকারও কম ছিল। এ রাজ্যের চন্দ্রকোনা থেকে শংসিত আলুর বীজ বস্তা পিছু ৩৭০০- ৩৮০০ টাকা পড়ছে। গত বছর দাম ছিল বস্তা পিছু ১৪৫০ টাকা। এমনকি স্থানীয় আলুর বীজের বস্তা, যা গতবার ৪০০-৫০০ টাকা ছিল, সেটাও এ বার তিন থেকে চারগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে।
বীজের চড়া দরের কারণ, এ বার বাজারে উপযুক্ত দাম পেয়ে সব আলু বেচে দিয়েছেন চাষিরা। বীজের খরচ একলাফে দুই থেকে তিনগুণ বৃদ্ধি হওয়ার জন্যই চাষ করতে গিয়ে আলুচাষিদের কপালে ভাঁজ চওড়া হয়েছে। অজয় ও হিংলো নদীর মধ্যবর্তী খয়রাশোলের বিস্তীর্ণ অংশ যেমন মুক্তিনগর, পারুলবোনা, চাপলা রতনপুর এবং দুবরাজপুরের দেবীপুরচর, পালাশডাঙায় যথেষ্ট পরিমাণ আলু চাষ হয়ে থাকে। এক এক জন চাষি অনেকটা জমিতে আলু চাষ করেন। কিন্তু বীজের চড়া দামের জন্য আলু লাগানোর প্রস্তুতি নিয়েও এ বছর অনেকে থেমে গিয়েছেন। মুক্তিনগর গ্রামের চাষি কৃষ্ণ চক্রবর্তী অন্যবার ১০ বিঘা জমিতে আলু লাগান। এ বার সেখানে তিন বিঘায় চাষ করবেন। কৃষ্ণ জানালেন, পঞ্জাব থেকে আসা বীজ জমিতে কেটে কেটে লাগালেও কমপক্ষে তিন বস্তা বীজ লাগে। ফলে, এ বার শুধু বীজ কিনতেই ১৩ হাজার টাকা বা তার বেশি লাগবে। তার সঙ্গে সার, কীটনাশক, জমি তৈরির খরচ মিলিয়ে বিঘা প্রতি আলু চাষে খরচ পড়বে ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকা।
এত খরচ করার সামর্থ নেই। পারুলবোনা গ্রামের নন্দ মণ্ডল, চাপলা গ্রামের বাপি প্রামাণিকরা বলছেন, ‘‘আমাদের এখানে ধান চাষ কম হয়। জমি ব্যবহৃত হয় আলু-সহ অন্যান্য আনাজ চাষে। কষ্ট করে এত দামে বীজ কিনে চাষ করলেও ভয় হচ্ছে। নতুন ফসল উঠলে সেটা যদি ১৫০ -২০০ টাকা বস্তা বিক্রি করতে হয়, তাহলে ক্ষতির অঙ্ক সামলাতে পারব না।’’ একই ভয় করছেন , সাঁইথিয়ার ধোবাগ্রামের অলুচাষি মিলন সাহ। তাঁর কথায়, ‘‘আট দশ বিঘা জমিতে চন্দ্রকোনা থেকে বীজ নিয়ে এসে আলু লাগাতেই এ বার প্রায় তিন গুণ খরচ। পরের বার দাম না পেলে যে লাভ করেছি, সেটা সম্পূর্ণ জমিতে চলে যাবে।’’ জেলা সহ অধিকর্তা (তথ্য) অমর মণ্ডল বা সহঅধিকর্তা (সীড সার্টিফিকেশন) সুখেন্দু বিকাশ সাহাও মানছেন, এ বার আলু বীজের চড়া দাম চাষে বেগ দেবে। তবে, আলুচাষের পরিমাণ কমবে কিনা, সেটা সময় বলবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy