Advertisement
১১ মে ২০২৪

রোগীর আত্মীয়দের জন্য বাড়িতে চলছে রান্না

হাসপাতালের সামনেই থাকার সুবাদে তিন জন মাস্টারমশাইয়ের এ সব চেনা দুঃখ। গরমের ছুটিতে তাঁরা নিজেরাই হাঁড়ি চাপালেন। খাবারের দোকান দিলেন হাসপাতালের বাইরে। পাঁচ টাকায় ভাত, ডাল, ভাজা, তরকারি আর আচার।

পাশে: রঘুনাথপুর সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের বাইরে। নিজস্ব চিত্র

পাশে: রঘুনাথপুর সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের বাইরে। নিজস্ব চিত্র

শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল 
রঘুনাথপুর শেষ আপডেট: ১৭ মে ২০১৯ ০০:০১
Share: Save:

চোখে নাই ঘুম, মুখে নাই তার ভাত।

সরকারি হাসপাতালের বাইরে অপেক্ষা করেন রোগীর পরিজনেরা। অ্যাম্বুল্যান্স ভাড়া করে এসেছেন। রোগবালাই এমনিতেই অনেক দুর্যোগ নিয়ে আসে। তার উপরে রয়েছে ওষুধ আর পথ্যের জন্য খরচের চিন্তা। ক্যান্টিনে খাবারের দাম শুনে পেটের খিদেটাই মরে আসে যেন। রোগ যদি গুরুতর হয়, যদি ক’টা দিন কাটাতে হয় হাসপাতাল চত্বরে হত্যে দিয়ে, তাহলে কষ্টের অন্ত থাকে না।

হাসপাতালের সামনেই থাকার সুবাদে তিন জন মাস্টারমশাইয়ের এ সব চেনা দুঃখ। গরমের ছুটিতে তাঁরা নিজেরাই হাঁড়ি চাপালেন। খাবারের দোকান দিলেন হাসপাতালের বাইরে। পাঁচ টাকায় ভাত, ডাল, ভাজা, তরকারি আর আচার। বৃহস্পতিবার থেকে রঘুনাথপুর সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের বাইরে এই আয়োজন শুরু হয়েছে। প্রথম দিনেই আশি জন খাবার কিনে খেয়েছেন।

পরিমল মাজি, সজল মাজি ও বীরেশ লায়েক। বীরেশ একটি হাইস্কুলে পড়ান। থাকেন রঘুনাথপুর শহরে। প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক পরিমল এবং সজলের বাড়ি হাসপাতালের কাছেই। জায়গাটা শালকা গ্রামে পড়ে। সম্প্রতি পরিমল ফেসবুকে একটি ‘পোস্ট’ করেছিলেন। লিখেছিলেন, প্রয়োজন হলে রোগীদের আত্মীয়েরা তাঁর বাড়ির শৌচাগার ব্যবহার করতে পারেন। ঠান্ডা জল নিয়ে যেতে পারেন। তার পরে নিজেরাই বাড়ি থেকে বেরিয়ে রোদের মধ্যে গিয়ে দাঁড়িয়েছেন।

বৃহস্পতিবার বেলা ১২টা নাগাদ দোকান চালু হয়। এসেছিলেন এলাকারাই বাসিন্দা তথা জেলাপরিষদের সদস্য অনাথবন্ধু মাজি। অল্প টাকায় খাবার দিচ্ছেন কী করে? তিন শিক্ষক জানাচ্ছেন, টাকার লেনদেন একপ্রকার প্রতীকি। এক একটা পাত পাড়তে খরচ পড়ে পাঁচ টাকার থেকে বেশি। আপাতত তাঁরা গাঁটের কড়ি খরচ করেই সেটা চালাচ্ছেন। বীরেশ বলেন, ‘‘কেউ যাতে দয়া বা দাক্ষিণ্য ভেবে আসতে গিয়ে ইতস্তত না করেন, সেই জন্য ওই টাকাটা নেওয়া হচ্ছে।’’

আপাতত চলে যাচ্ছে। প্রথম দিনের চালটা স্থানীয় এক জন বাসিন্দা দিয়ে দিয়েছেন। তবে একটা কিছু অনুদান পেলে তাঁদেরও সুবিধা হয় বলে জানাচ্ছেন পরিমল। অনাথবন্ধুবাবু জানিয়েছেন, তাঁরা এই উদ্যোগের পাশে থাকার চেষ্টা সব রকম ভাবে করবেন। আর একটা চিন্তা আছে। স্কুল খুললে কী হবে? তিন যুবক জানাচ্ছেন, তখন ‘দোকান’ খুলবেন রাত্তিরে।

জানালেন, রান্নাটা তাঁরা বাড়িতেই করছেন। নিয়ে আসছেন হাসপাতালের সামনের দোকানে। সঙ্গে আনছেন শালপাতার থালা। দোকানের সামনে রাখা দু’টি বেঞ্চ। অনেকেই বসে খাচ্ছেন। কেউ কেউ নিয়ে যাচ্ছেন।

মাত্র পাঁচ টাকায় ভরপেট খাবার পাওয়া যাচ্ছে, এই খবর প্রথম দিনেই ছড়িয়ে পড়ে মুখে মুখে। কলাগড়া গ্রামের শেখ জামিরুদ্দিন, আদ্রার মহম্মদ ফিরোজ, রায়বাঁধের বাদলী কর্মকার, মায়া রক্ষিতরা জানান, শুনে প্রথমে তাঁরা ভেবেছিলেন গুজব। তার পরে এসে দেখেন নির্জলা সত্যি।

তাঁরা বলেন, ‘‘রোগীর সঙ্গে দিনরাত পড়ে থাকতে হয়। বাড়ি থেকে শুকনো চিঁড়ে-মুড়ি নিয়ে আসতাম। এ বার একটা ভাল বন্দোবস্ত হল।’’

অন্য চিন্তা নিয়ে তাঁদের কিছু করার উপায় নেই, কিন্তু অন্ন-চিন্তার একটা সুরাহা করতে পেরে ভাল লাগছে— জানাচ্ছেন পরিমলেরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE