Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

অনুব্রতর সময়সীমা দেওয়ার পরের দিনই তৃণমূল ছাড়লেন দুবরাজপুর শহর সভাপতি

তৃণমূল নেতৃত্বের প্রতিক্রিয়া, দল ছাড়ার অজুহাত খুঁজছিলেন প্রভাতবাবু। সেই সুযোগ হয়ে গেল।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
দুবরাজপুর শেষ আপডেট: ১৮ জুন ২০১৯ ০০:৫৪
Share: Save:

লোকসভা ভোটের নিরিখে দুবরাজপুর শহর আগেই হাতছাড়া হয়েছিল তৃণমূলের। এ বার হাতছাড়া হলেন দলের শহর সভাপতি প্রভাত চট্টোপাধ্যায়।

প্রভাতবাবুর দলত্যাগ নিয়ে গুঞ্জন ছিলই। এই আবহে রবিবার বিকেলে দুবরাজপুরে একটি র‌্যালির পরে ছোট সভায় তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল বলেন, ‘‘দুবরাজপুরের শহর সভাপতি কোনও কর্মসূচিতে আসছেন না। আজও আসেননি। শুনছি তিনি নাকি গিরগিটি হবেন। সাত দিন সময় দিলাম। দলে থাকতে চাইলে সেই সময়ের মধ্যে ফিরুন। নইলে দলের কিছু আসবে-যাবে না।’’ সোমবার সকালে উঠেই প্রভাতবাবুর ঘোষণা, তিনি তৃণমূলের সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ত্যাগ করলেন। বিজেপি-তে যাচ্ছেন কিনা, তার জবাব অবশ্য এ দিনও দেননি।

জেলা সভাপতির হুঁশিয়ারির প্রতিক্রিয়া এড়িয়ে প্রভাতবাবু বলেন, ‘‘লোকসভা নির্বাচনে আমি শাসকদলের হয়েই সমস্ত কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছি। প্রার্থী শতাব্দী রায়ের প্রচারে ছিলাম। কিন্তু তার পর থেকে অসুস্থ হয়ে পড়ি। বর্তমানে ভিন্ রাজ্যে চিকিৎসা করাতে হচ্ছে। দলের স্থানীয় নেতা সম্পর্কে কিছু খোঁজ খবর না নিয়ে দলের জেলা সভাপতি এমন মন্তব্য করায় আমি ব্যথিত। তাই দল ছাড়লাম।’’ যা শুনে তৃণমূল নেতৃত্বের প্রতিক্রিয়া, দল ছাড়ার অজুহাত খুঁজছিলেন প্রভাতবাবু। সেই সুযোগ হয়ে গেল। জেলা তৃণমূলের সহ-সভাপতি অভিজিৎ সিংহের দাবি, ‘‘উনি দীর্ঘদিন ধরেই দলের কর্মসূচিতে থাকছিলেন না। দলগত ভাবে বলা হলেও কথা কানে দেননি। সম্মানের সঙ্গেই ওঁকে শহর সভাপতি করা হয়েছিল। যা ভাল মনে করেছেন করেছেন। তবে উনি দল ছড়ায় দলের কোনও ক্ষতি হবে না।’’

দুবরাজপুরের রাজনীতি সচেতন মানুষ বলছেন, দু’বারের কাউন্সিলর প্রভাতবাবু। হাতের তালুর মতো শহর ও শহরের বাসিন্দাদের চেনেন। প্রথমে কংগ্রেস করলেও তৃণমূল দলের জন্ম হওয়া ইস্তক শহরে দলকে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন তিনিই। শুধু তাই নয়, রাজ্যে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে ’১৩ সালে পুরভোটের আগে দুবরাজপুরের তিন বারের পুরপ্রধান কংগ্রেসের পীযূষ পাণ্ডে-সহ বেশ কয়েক জন কাউন্সিলরকে তৃণমূলে নিয়ে আসার নেপথ্যেও ছিলেন সদ্য প্রাক্তন শহর সভাপতি। কিন্তু দলে যোগ দিয়েই পীযূষবাবুর ছায়া প্রভাতবাবুর থেকে বড় হতে থাকে। প্রভাতবাবু আশায় জল ঢেলে পীযূষবাবুকেই দল পুরপ্রধান পদে বসায়। সেই থেকে প্রকাশ্যে না হলেও দু’জনের মধ্যে দূরত্ব বাড়ছিল বলে তৃমমূল সূত্রের খবর।

গত সেপ্টেম্বরে মেয়াদ শেষ হয়েছে দুবররাজপুর পুরসভায় ক্ষমতাসীন তৃণমূল বোর্ডের। পুরসভা নির্বাচন হওয়ার থাকলেও এখনও হয়নি। মহকুমাশাসক (সিউড়ি সদর) পুরসভার প্রশাসকের দায়িত্বে। সব ঠিকঠাক চললে পুরভোটের খুব দেরি নেই। তৃণমূলের একাংশের অভিযোগ, পুরভোটের আগে শহরের কয়েকটি ওয়ার্ডে নিজের মতো করে পীযূষ পাণ্ডের বিরুদ্ধে সমান্তরাল সংগঠন তৈরি করছিলেন প্রভাতবাবু। তাই নিয়ে কয়েক মাস ধরে উভয়ের সম্পর্ক কার্যত তলানিতে ঠেকেছিল। লোকসভা ভোটের ফলের নিরিখে, দুবরাজপুর পুরসভার ১৬ ওয়ার্ডের মধ্যে ৯টিতেই পিছিয়ে তৃণমূল। পিছিয়ে ছিলেন বিদায়ী পুরপ্রধান পীযূষবাবুও। এই আবহে প্রভাত না পীযূষ— কে বিজেপি’তে যোগ দেন, তা নিয়েই চর্চা শুরু হয়েছিল। কিন্তু আসন্ন পুরভোটে পীযূষবাবুকেই ফের সামনে রেখে লড়তে চায় তৃণমূল, এই ইঙ্গিত স্পষ্ট হতেই প্রভাতবাবুর সঙ্গে বিজেপির যোগাযোগ তৈরি হয়।

জেলা বিজেপির এক নেতার বক্তব্য, ‘‘অভিজ্ঞতার নিরিখে দু’জনের মধ্যে এগিয়ে প্রভাতবাবুই। পীযূষবাবু এতবার ক্ষমতায় থাকায় তাঁর প্রতি মানুষের ক্ষোভ রয়েছে।’’ যা জেনে পীযূষবাবুর কটাক্ষ, ‘‘তৃণমূলের জন্যই অস্ত্রে ধার ছিল, দল ছাড়লে অস্ত্র ভোঁতা! কোনও কাজ হবে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

TMC Anubrata Mandal Dubrajpur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE