Advertisement
১১ মে ২০২৪

ভর্তিতে কার রাশ, দ্বন্দ্ব টিএমসিপি-র

ছাত্র ভর্তির মরসুমে ফের শাসকদলের ছাত্র সংগঠনের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে এল। দলেরই একাংশের তাঁদের ভর্তি প্রক্রিয়ায় যোগ দিতে বাধা দিচ্ছে বলে অভিযোগ তুলে মহকুমাশাসকের দ্বারস্থ হলেন বিষ্ণুপুর রামানন্দ কলেজের তৃণমূল ছাত্র পরিষদের কিছু সদস্য।

বিষ্ণুপুর মহকুমাশাসকের গাড়ি ঘিরে বিক্ষোভ তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সদস্যদের।  (ইনসেটে) এই রসিদ ঘিরেই দেখা দিয়েছে বিতর্ক। ছবি: শুভ্র মিত্র

বিষ্ণুপুর মহকুমাশাসকের গাড়ি ঘিরে বিক্ষোভ তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সদস্যদের। (ইনসেটে) এই রসিদ ঘিরেই দেখা দিয়েছে বিতর্ক। ছবি: শুভ্র মিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
বিষ্ণুপুর শেষ আপডেট: ৩০ জুন ২০১৬ ০২:১৬
Share: Save:

ছাত্র ভর্তির মরসুমে ফের শাসকদলের ছাত্র সংগঠনের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে এল। দলেরই একাংশের তাঁদের ভর্তি প্রক্রিয়ায় যোগ দিতে বাধা দিচ্ছে বলে অভিযোগ তুলে মহকুমাশাসকের দ্বারস্থ হলেন বিষ্ণুপুর রামানন্দ কলেজের তৃণমূল ছাত্র পরিষদের কিছু সদস্য। বুধবার দুপুরে বিষ্ণুপুর মহকুমাশাসক পার্থ আচার্যকে দেওয়া লিখিত অভিযোগ পত্রে তাঁরা দাবি করেছেন, ভর্তি প্রক্রিয়া চালাকালীন বহিরাগতদের নিয়ে কলেজ এলাকার দখল নিয়ে নিচ্ছে সংগঠনের কয়েক জন নেতা। ছাত্রসংসদের নির্বাচিত প্রতিনিধি এবং সাধারণ সদস্যদের ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। বিষয়টি অধ্যক্ষাকে জানিয়েও কোনও কাজ হয়নি বলে তাঁদের অভিযোগ। ছাত্রভর্তির প্রক্রিয়ায় যাতে তাঁরাও বিনা বাধায় যোগ দিতে পারেন সে জন্য মহকুমাশাসকের কাছে আবেদন জানিয়েছেন ওই পড়ুয়ারা।

অভিযোগপত্রে সই রয়েছে ছাত্র সংসদ সদস্য শুভম খান, সংগঠনের সদস্য সায়ন বন্দ্যোপাধ্যায়, শেখ সাদ্দামদের। তাঁরা জানান, এ দিন কলেজে ভর্তির মেধাতালিকায় নাম ওঠা ছাত্রছাত্রীদের মার্কশিট এবং শংসাপত্র যাচাইয়ের দিন ছিল। তাঁদের অভিযোগ, সেই প্রক্রিয়া চলাকালীন ছাত্র সংগঠনের কলেজ ইউনিটের নামে, কোথাও শুধু ছাত্র সংসদের নামে রসিদ ছাপিয়ে টাকা তোলা হয়। রসিদে দুঃস্থ ছাত্রছাত্রীদের সাহায্য করার জন্য পড়ুয়া পিছু ২০০ টাকা তোলা হচ্ছে বলে দাবি করা হয়েছে। কিন্তু তাঁদের অভিযোগ, ভর্তি হতে আসা এমন কিছু পড়ুয়ার থেকে জোর করে ২০০ টাকা আদায় করা হয়েছে, যাঁদের নিজেদেরই সেই টাকা দেওয়ার ক্ষমতা নেই। মহকুমাশাসকের কাছে রসিদের প্রতিলিপি পেশ করা হয়েছে বলে তাঁরা জানান।

অভিযোগকারীদের দাবি, দলের ছাত্র সংগঠনের নামে ভর্তির সময় টাকা না তোলার নির্দেশ দিয়েছেন দলনেত্রী। কিন্তু সেই নির্দেশ অমান্য করে এই টাকা তোলা হয়েছে। পাশাপাশি, অনার্স ‘পাইয়ে দেওয়ার’ নাম করে ভর্তি হতে আসা পড়ুয়াদের থেকে টাকা চাওয়া হয়েছে বলে তাদের অভিযোগ। এই চক্রে ছাত্রসংগঠনের বর্তমান সাধারণ সম্পাদকও জড়িও বলে অভিযোগকারীরা এ দিন দাবি করেন।

যদিও সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করে কলেজের ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক রহিত কদমার পাল্টা দাবি, ‘‘পুরোপুরি মিথ্যা অভিযোগ। যাঁরা মহকুমাশাসকের কাছে গিয়েছিলেন তাঁরা আমাদের সংগঠনের কেউ নন।’’ আরও এক ছাত্রনেতার দাবি, অনুদানের রসিদে নম্বর এবং সই রয়েছে। ফলে তা নয়ছয় করার কোনও উপায় নেই। মহকুমা শাসক (বিষ্ণুপুর) পার্থ আচার্য বলেন, ‘‘অভিযোগ পেয়েছি। খোঁজ নেওয়া হবে।’’ ওই কলেজের অধ্যক্ষা স্বপ্না ঘোড়ই বলেন, ‘‘কলেজ চত্ত্বরের ভিতরে কেউ ভর্তির নামে টাকা তুলছে না। বাইরে কিছু হচ্ছে কি না তা বলতে পারব না।’’

তবে অভিযোগ প্রসঙ্গে মুখ খুলেছেন ওই কলেজের ছাত্র সংসদের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক তথা দলের বর্তমান যুব ছাত্র নেতা সুশান্ত দাঁ। তিনি বলেন, ‘‘রাজ্য নেতৃত্ব এমন ভাবে টাকা তোলার বিরোধী। আমি উর্ধ্বতন নেতৃত্বকে বিষয়টি জানাবো।’’ বাঁকুড়া জেলা তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সভানেত্রী চুমকি বন্দ্যোপাধ্যায়ও অভিযোগ সত্যি হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন।

কলেজে ছাত্রভর্তির মরসুমে শাসকদলের ছাত্র সংগঠনের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের একের পর এক অভিযোগ উঠে এসেছে। দলের শীর্ষ নেতৃত্বের কড়া বার্তাতেও বিশেষ রাশ টানা যায়নি সেই দ্বন্দ্বে। সম্প্রতি পশ্চিম মেদিনীপুরের গড়বেতা কলেজ তৃণমূল ছাত্র পরিষদের দু’টি গোষ্ঠীর সংঘর্ষে কেঁপে ওঠে। সেই সময় টিএমসিপির রাজ্য সভানেত্রী জয়া দত্ত বলেছিলেন, ‘‘শিক্ষাঙ্গণে বিশৃঙ্খলা করলে টিএমসিপি-তে থাকা যাবে না।’’ দু’ পক্ষকেই শো-কজ করেছিলেন তিনি।

এ দিনের ঘটনা প্রসঙ্গে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে জয়া বলেন, ‘‘কোনও রকম দ্বন্দ্ব বরদাস্ত করা হবে না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দশিত পথে আমরা সংগঠন চালাই। বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

TMCP college admission
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE