টাকা জমা নিয়েও শেষ পর্যন্ত চাল দেয়নি ফুড কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া (এফসিআই)। ফলে ৩ টাকার চাল কিনতে হচ্ছে ২৬ টাকায়! বাড়তি কড়ি গুনতে গিয়ে আতান্তরে পড়েছে বীরভূম জেলা সুসংহত শিশু বিকাশ প্রকল্পের দফতর। দফতর সূত্রের খবর, দু’মাস ধরে চাল সরবরাহের টানাপড়েন চলায় জেলার অনেক অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে রান্না করা খাবার বিলি নিয়ে গুরুতর সমস্যা তৈরি হয়েছে। অবস্থা এমন, আগামী সাত দিনের মধ্যে চালের জোগান স্বাভাবিক না হলে অনেক কেন্দ্র থেকে রান্না করা খাবার বিলি বন্ধ হয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, বীরভূমে মোট ৪,৭৯৬টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র রয়েছে। অন্য বছর কেন্দ্রগুলির জন্য চাল কেনা হয় মূলত দুটি জায়গা থেকে। এক, সিউড়ির আবদারপুরের অবস্থিত ভারত সরকারের ফুড কর্পোরেশন দফতরের গোডাউন থেকে। তাতে দাম পড়ে কেজি প্রতি ৩ টাকা। দ্বিতীয় ক্ষেত্র হল অত্যাবশ্যকীয় পণ্যনিগম। তার দর ২৬ টাকা প্রতি কিলো। এফসিআই ও অত্যাবশ্যকীয় পণ্যনিগম থেকে চাল সরবরাহের অনুপাত থাকে যথাক্রমে ৭০ ভাগ ও ৩০ ভাগ। তবে কম দামে এফসিআই যদি পুরো চাল দিতে পারে, তখন পুরো চালই সেখান থেকে তোলার কথা।
চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে সংশ্লিষ্ট দফতর এফসিআইকে ৮৩৫ মেট্রিক টন চালের বরাত দেয়। এফসিআই সূত্রের খবর, তখন গোডাউনে চাল মজুত ছিল। সুসংহত শিশু বিকাশ প্রকল্পের জেলা প্রকল্প আধিকারিক অরিন্দম ভাদুড়ি বলছেন, ‘‘সেপ্টেম্বরে পুজোর আগে ৩০ লক্ষ টাকার ড্রাফ্ট জমা দিলে চাল তোলার বরাতও দেন এফসিআই-এর এরিয়া ম্যানেজার সতীশ কুমার। কিন্তু, পুজোর পরে সেই চাল তুলতে গেলে ডিপো ম্যানেজার জানিয়ে দেন চাল সরবরাহ করা যাবে না। কারণ, চাল মজুত নেই। সমস্যার সূত্রপাত তখন থেকেই।’’
ঘটনা হল, নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে জেলার বেশ কয়েক’টি ব্লকের অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে রান্না করা খাবার বিলিতে সমস্যা দেখা দিয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম রামপুরহাট ১ ব্লকে ৬৪টি কেন্দ্র, নলহাটির ২৬টি কেন্দ্র এবং লাভপুরের ৮২টি কেন্দ্র। চালের জোগানের অভাবে ডাল-সব্জি ও ডিম সেদ্ধ দেওয়া হলেও পুরো খাবার না পেয়ে বেকায়দায় পড়েছেন শিশু-প্রসূতি এবং গর্ভবতী মায়েরা।
এ নিয়ে ক্ষোভ দানা বাঁধতে শুরু করেছে। রামপুরহাট ১ ব্লকের সিডিপিও অফিসের দেওয়ালে চালের জোগানের দাবিতে এবং অবিলম্বে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলিতে রান্না করা খাবার বিলির দাবিতে পোস্টার সাঁটানো হয়েছে। কংগ্রেসের পক্ষ থেকে সিডিপিও-কে স্মারকলিপি দিয়ে অবিলম্বে সমস্যা সমাধানের আর্জিও রাখা হয়েছে। সুসংহত শিশু বিকাশ প্রকল্পের জেলা আধিকারিক অরিন্দম ভাদুড়ি জানান, এফসিআই চাল দিতে পারবে না এ কথা জানার পরে কোথায় ৩ টাকা কিলো দরে চাল পাওয়া যাবে, তা জানতে জেলা খাদ্য আধিকারিককে চিঠি করা হয়েছে। সিপিসি থেকে একই দরে চালের বরাত দেওয়া হলেও সেটা এখনও কার্যকর হয়নি। খাদ্য সরবরাহ দফতরের জেলা নিয়ামক দিব্যেন্দু বড়ুয়া বলেন, ‘‘আইসিডিএস ও মিড-ডে মিল, দুটি কেন্দ্রীয় প্রকল্পে চাল-ডাল জোগানের বিষয়টি জেলা প্রশাসনের অন্য আধিকারিকরা দেখভাল করেন। আসলে এফসিআই গোডাউন থেকে ওই দুটি প্রকল্প থেকে চাল সরবরাহ করা হয়ে থাকে। সেখানে চাল মজুত না থাকায় সমস্যা দেখা দিয়েছে। চালের জোগান দেওয়ার ব্যাপারে কিছু নিয়ম আছে। সেই নিয়ম নিয়ে আলোচনা চলছে।’’
দফতর জানাচ্ছে, এই পরিস্থিতিতে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলি চালু রাখতে বাধ্য হয়েই অত্যাবশ্যকীয় পণ্য নিগম দফতর থেকে ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসের জন্য ২৬ টাকা কেজি দরে ৮৩৫ মেট্রিক টন চালের বরাত দেওয়া হয়েছে। অরিন্দমবাবু বলছেন, ‘‘বুধবার থেকে চাল ঢুকতে শুরু করেছে। আশা করি দিন কয়েকের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।’’ কিন্তু, মাঝে যে সময়টুকু গিয়েছে তাতেই জটিলতা তৈরি হয়েছে।
টাকা জমা নিয়ে, রিলিজ অর্ডার দিয়েও কেন চাল সরবরাহ করা গেল না? এফসিআইয়ের এরিয়া ম্যানেজারের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তবে ডিপো ম্যানেজার নবকুমার চট্টোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘যে সময় বরাত দেওয়া হয়েছিল, সেই সময় চাল ছিল। চাল থাকাকালীন আমরা কোনও ভাবেই চাল নেই বলতে পারি না। কিন্তু, যখন চাল নেওয়ার জন্য দফতর এসেছে তখন চাল ফুরিয়ে গিয়ে থাকলে, না বলা ছাড়া রাস্তা নেই। গত দু’মাস থেকেই গোডাউনে চাল নেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy