Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
corona virus

লকডাউনে দাতা পাওয়াই ভার, রক্ত জোগাড়ে নাকাল রোগীর পরিজন

রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের এমএসভিপি সুজয় মিস্ত্রি-ও মেনে নিয়েছেন বেশ কিছুদিন থেকেই হাসপাতালে রক্তের সঙ্কট চলছে।

প্রতীকী চিত্র

প্রতীকী চিত্র

অপূর্ব চট্টোপাধ্যায়
রামপুরহাট শেষ আপডেট: ১৭ মে ২০২০ ০০:৩০
Share: Save:

করোনা আতঙ্কে স্বেচ্ছা রক্তদান শিবিরগুলো অধিকাংশই বাতিল হয়েছে। মাঝেমধ্যে জেলায় পুলিশের পক্ষ থেকে শিবির হলেও সেখান থেকে সংগ্রহ করা প্রয়োজনীয় রক্তে জেলা হাসপাতালগুলির রক্তসঙ্কট মিটছে না। লকডাউনে রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল-সহ জেলার সদর হাসপাতাল ও বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে রক্তসঙ্কট দেখা দিয়েছে। এর ফলে রোগীদের রক্ত জোগাড় করাটাই চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে নেগেটিভ গ্রুপের রক্ত জোগাড় করতে সঙ্কট তীব্র হচ্ছে। রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের এমএসভিপি সুজয় মিস্ত্রি-ও মেনে নিয়েছেন বেশ কিছুদিন থেকেই হাসপাতালে রক্তের সঙ্কট চলছে। তাঁর আশ্বাস, ‘‘রক্তের সঙ্কট মেটাতে আজ, রবিবার থেকেই শিবির করা হবে।’’ তিনি জানান, আজ রবিবার মুরারইয়ে ও আগামীকাল সোমবার মল্লারপুরে শিবির হবে।

লকডাউন চলায় এমনিতেই রক্তদাতাদের যানবাহন চলাচলে বিধিনিষেধে হাসপাতাল যাতায়াত করাটা সমস্যা। তার উপরে রামপুরহাট ১ ব্লক এবং ময়ূরেশ্বর ১ ব্লক এলাকায় করোনা রোগীর সন্ধান মিলতেই রক্তদাতাদের মধ্যে আতঙ্ক বেড়েছে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীর জন্য হাসপাতালে গিয়ে রক্ত দিতে অনেকেই ঝুঁকি নিতে চাইছে না। এর জন্য রোগীর আত্মীয়দের দাতা জোগাড় করতে চরম হয়রান হতে হচ্ছে।

সমস্যা আরও আছে। রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল-সহ জেলার সিউড়ি সদর হাসপাতাল এবং বোলপুর মহকুমা হাসপাতাল এই তিনটি হাসপাতালেই এখনও পর্যন্ত ব্লাড সেপারেশন যন্ত্র নেই। যার ফলেও রক্তের চাহিদা বাড়ছে। ব্লাড সেপারেশন যন্ত্র না থাকার ফলে রক্তকে ভাগ করা হচ্ছে না। ব্লাড সেপারেশন না করার ফলে এক ইউনিট রক্ত পুরোটা একজনকে দিতে হচ্ছে। ব্লাড সেপারেশন যন্ত্র থাকলে এক ইউনিট রক্ত চারজনকে দেওয়া যায়। এ ভাবে রক্তের বাড়তি ব্যবহার হওয়ায় চাহিদাও বাড়ছে।

রামপুরহাট, সিউড়ি, ও বোলপুর— এই তিন হাসপাতাল সূত্রেই জানা গিয়েছে তিনটি হাসপাতালেই নেগেটিভ গ্রুপের রক্তের অভাব আছে। তাই নেগেটিভ গ্রুপের রক্ত জোগাড় করতে গিয়ে রোগীর আত্মীয় পরিজনদের রক্তদাতা জোগাড় করতে অসুবিধা হচ্ছে। রক্তদাতারাও এই মহুর্তে লকডাউনের জন্য ব্লাড ব্যাঙ্কে আসতে চাইছেন না।

সম্প্রতি রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রক্তাল্পতার উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসাধীন সাত মাসের এক শিশুর এবি নেগেটিভ গ্রুপের রক্ত জোগাড় করতে সমস্যায় পড়েন রোগীর আত্মীয় পরিজনেরা। বীরভূম ভলান্টারি ব্লাড ডোনারস অ্যাসোসিয়েশন সদস্যদের ফোন করে রোগীর আত্মীয় পরিজনদের রক্তদাতা জোগাড় করে রক্ত দেওয়া হয়। লকডাউন চলাকালীন করোনা নিয়ে আতঙ্কের আবহে বীরভূম ভলান্টারি ব্লাড ডোনারস অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য অভিষেক প্রসাদ সাত মাসের শিশুকে রক্ত দিয়ে বিপদ এড়ান।

বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার অভিযোগ, লকডাউনের ফলে আইনি জটিলতার কারণে রক্তদান শিবির বন্ধ করা হয়েছে। এর ফলে ব্লাড ব্যাঙ্কে সঙ্কট দেখা দিচ্ছে। এর ফলে বিরল গ্রুপের রক্ত সংগ্রহ করতে রক্তদাতাদের জোগাড় করাটাও সমস্যা হচ্ছে। বীরভূম ভলান্টারি ব্লাড ডোনারস অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা জানান, বিরল গ্রুপের রক্ত দিতে বাইরে থেকে রক্তদাতারা আসতে চাইছেন না। সংস্থার সঙ্গে যুক্ত চিকিৎসক এবং মেডিক্যাল লাইনের সঙ্গে যুক্ত রক্তদাতারাই কেবল রক্ত দিয়ে সাহায্য করতে এগিয়ে আসছেন। রামপুরহাট স্বাস্থ্য জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছে সঙ্কট মেটাতে একাধিকবার শিবির করার আবেদন জানানো হলেও এখনও অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে না বলে দাবি। পুলিশের মাধ্যমে যে ক্যাম্প হচ্ছে সেগুলি থেকে পাওয়া রক্তে সঙ্কট মিটছে না। রামপুরহাট স্বাস্থ্য জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক পার্থ দে-র দাবি, ‘‘আগে করোনাভাইরাস মোকাবিলায় পারস্পরিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশে শিবির করার জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়নি। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে স্বাস্থ্য বিধি মেনে শিবির করার অনুমোদন দেওয়া হবে। ডেপুটি সিএমওএইচ-কে শিবির দেখভাল করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

corona virus covid 19 lockdown
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE